বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজতেই বাসস্ট্যান্ড ফাঁকা। উধাও হয়ে গিয়েছে বাস। অগত্যা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভ্যানরিকশা, অটো বা ট্রেকারে যাত্রীদের পৌঁছতে হচ্ছে গন্তব্যস্থলে। অনেক ক্ষেত্রে থাকছে জীবনের ঝুঁকিও। প্রতিদিনের এই সমস্যায় বাস্তবিকই জেরবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা ডায়মন্ড হারবার মহকুমার রায়দিঘি থেকে ডায়মন্ড হারবার রুটের নিত্য যাত্রীরা।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রায়দিঘিতে রয়েছে স্কুল, কলেজ, ব্যাঙ্ক, থানা, ব্লক অফিস-সহ অন্যান্য অফিস-কাছারি। ওই সমস্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বেশিরভাগ কর্মীই আসেন ডায়মন্ড হারবার, উস্থি, মগরা, জয়নগর বা কলকাতা থেকে। ডায়মন্ড হারবার থেকে যাঁরা রায়দিঘিতে আসেন, তাঁদের আসার জন্য রয়েছে রায়দিঘি-ডায়মন্ড হারবার রুটের এম-১০ বেসরকারি বাস। আবার অনেকে কলকাতার শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে মথুরাপুর স্টেশনে নেমে স্টেশন মোড় থেকে ওই একই বাসে বা ট্যাক্সিতে রায়দিঘি পৌঁছন। রায়দিঘি বাসস্ট্যান্ড থেকে ওই রুটের শেষ বাস ছাড়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়।
রায়দিঘি থেকে মথুরাপুর হয়ে ওই বাস ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত ওই রুটের দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। কোনওভাবে শেষ বাস না ধরতে না পারলে নিত্যযাত্রীদের তখন একমাত্র ভরসা মোটরভ্যান, অটো বা ট্রেকার। বাধ্য হয়ে ওই সমস্ত যানে উঠলে বেশিরভাগ সময়েই ৫০ থেকে ১০০ টাকার উপর ভাড়া গুনতে হয় বলে অভিযোগ নিত্যযাত্রীদের। যেখানে বাসে ভাড়া দিতে হয় মাত্র ১২ টাকা। গরমের সময় ঠিকঠাক থাকলেও বৃষ্টি পড়লে এবং শীতের সময় রাত বেড়ে গেলে অটো, ট্রেকার পাওয়াও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তার উপরে রায়দিঘি থেকে মথুরাপুর স্টেশন মোড় পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় রাস্তার হাল খারাপ। রাস্তায় আলোর কোনও ব্যবস্থা নেই। রায়দিঘি এলাকার এক স্কুল শিক্ষিকা অর্চনা রায় বলেন, ‘‘আমার স্কুল রায়দিঘি থেকে আরও ১৫ কিলোমিটার দূরে দমকল গ্রামে। বিকেল চারটের সময় স্কুল ছুটির পর ওখান থেকে মোটরভ্যান করে রায়দিঘি আসতেই প্রায় ছ’টা বেজে যাচ্ছে। ফলে রোজই বাড়ি পৌঁছতে নাজেহাল হতে হচ্ছে।”
কিন্তু যাত্রী থাকলেও সাড়ে পাঁচটার পর বাস থাকছে না কেন? এম-১০ রুটের বাসমালিক ইউনিয়নের সম্পাদক রইচউদ্দিন মোল্লা বলেন, “রাস্তার যা হাল এবং আলো না থাকায় সন্ধের পর গাড়ি চালাতে খুবই সমস্যা হয় চালকদের। তা ছাড়া ওই রুটে বেআইনি অটো-ট্রেকারের দৌরাত্ম্যও একটা বড় সমস্যা। এই সব বেআইনি গাড়ির চলাচল প্রশাসন বন্ধ করুক। তাহলেও আমরাও রাত অবধি গাড়ি চালানোর ব্যবস্থা করব।” একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে বারবার মহকুমাশাসককে জানানো হলেও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি। যদিও ডায়মন্ড হারবারের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক মৌমিতা সাহা বলেন, “বেআইনি গাড়ির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |