মনের তলানি জোরটুকু নিয়ে কোনও রকমে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে মর্গ পর্যন্ত ছিলেন নাতির রক্তাক্ত মৃতদেহের সঙ্গেই। তার পরে আর সামলাতে পারেননি। রাস্তাতেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ব্যারাকপুরে সেনা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট স্কুলছাত্র সুপ্রতীক দাসের (৮) বাবা বিশ্বজিৎবাবুর মামা প্রবীর হালদারকে। চিকিৎসকেরা জানান, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। বুধবার সেখানেই মৃত্যু হয় প্রৌঢ় প্রবীরবাবুর।
পুলিশ জানায়, ব্যারাকপুর বড়পোলের বাসিন্দা প্রবীরবাবুকে প্রথমে বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নেওয়া হয় মানিকতলা ইএসআই-তে। এ দিন সেখানেই মারা যান তিনি।
অন্য দিকে, সেনাবাহিনীর ট্রাকটির চালক দেবেন্দ্র পাল সিংহ এ দিন ব্যারাকপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁর জামিন হয়ে যায়। ট্রাকটিও ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। জামিন পাওয়ার পরে দেবেন্দ্র বলেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে কাঁকিনাড়া থেকে ট্রাক নিয়ে ব্যারাকপুর বেস ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছিলাম। ফাঁকা রাস্তায় হঠাৎ স্কুটারটি দাঁড়িয়ে পড়ল। টাল সামলাতে পারল না। আমি খুব জোর ব্রেক কষেও শিশুটিকে বাঁচাতে পারলাম না।’’
ছেলের মৃত্যুর খবর, সেনাকর্মীর জামিনের খবর হাসপাতালে শুয়ে শুনেছেন শ্যামলীদেবী। একমাত্র সন্তানকে হারানোর শোকে কার্যত বাকরুদ্ধ। একই অবস্থা বিশ্বজিৎবাবুর। ছেলের দেহ সৎকার করে আসার পরদিনই মামার দেহ সৎকার করতে শ্মশানে ছুটেছেন। শুধু বলে চলেছেন, ‘‘এই তো সে দিন ছেলেটা হল। এর মধ্যেই ছবি হয়ে গেল!’’
সকালবেলা স্কুলমুখী খুদে পড়ুয়াদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয় ব্যারাকপুরে। বেশির ভাগই মা-বাবার সঙ্গে সাইকেলে, মোটরবাইকে কিংবা পায়ে হেঁটে যায়। দিনভরের ব্যস্ত বি টি রোড বা এস এন ব্যানার্জি রোড তখন ফাঁকাই থাকে। সেই সুযোগে গাড়ির গতিও বাড়িয়ে দেন চালকেরা।
ছোট্ট সুপ্রতীক নিজের জীবন দিয়ে এ ব্যাপারে সচেতন করে গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনকে। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে এ বার সকাল ছ’টা থেকে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে বলে বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তারা। খুব শিগগিরই শিল্পাঞ্চলের ব্যস্ত রাস্তাগুলির চল্লিশটি মোড়ে সিসিটিভি বসানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টাই কাজ করবে এই সিসিটিভি। এতে বেশি রাতে ট্রাফিক পুলিশ না থাকার সময়েও নজরদারি জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের ডিসি (ট্রাফিক) দেবাশিস বেজ। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘সুপ্রতীকের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এখন থেকে সকালে পুলিশ রেখে আমরা সাধ্যমতো ট্রাফিক সামলানোর চেষ্টা করব। কিন্তু স্কুটিই হোক বা ট্রাক, চালকদেরও সতর্ক হতে হবে। সিসিটিভি বসানোর কথাও ভাবা হয়েছে।’’ |