স্কুল যাওয়ার পথে শিশু পিষ্ট সেনা ট্রাকের চাকায়
সেনাবাহিনীর ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র সুপ্রতীক দাসের (৮)। আহত হয়েছেন সুপ্রতীকের মা শ্যামলীদেবী। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ব্যারাকপুর চিড়িয়ামোড়ে। শ্যামলীদেবীকে ব্যারাকপুর বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘাতক ট্রাকের চালককে পুলিশ ধরতে পারেনি। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা ট্রাক নিয়ে ফিরে গিয়েছেন সেনা ছাউনির ভিতরে। এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ এবং ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।
স্বভাবতই আরও এক বার প্রশ্ন উঠেছে, ঘাতক গাড়ি যদি সেনাবাহিনীর হয়, তা হলে কি তার চালকের সাত খুন মাফ?
ব্যারাকপুরে সেনাবাহিনীর গাড়ির ধাক্কায় দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। দিন কুড়ি আগে
সুপ্রতীক দাস।
ব্যারাকপুর শ্যামাশ্রী পল্লির বাসিন্দা রাজু তালুকদার তাঁর দশ বছরের মেয়েকে মোটরবাইকে করে স্কুলে পৌঁছতে যাচ্ছিলেন। পলতার কাছে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি তাঁর মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। রাস্তার বাঁ দিকে ছিটকে পড়ায় কোনও রকমে প্রাণে বাঁচেন তাঁরা।
মাস সাতেক আগে সেনাবাহিনীর গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান বীণা সাহানি (৩৮) নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা। তারও বছর দুয়েক আগে এই চিড়িয়ামোড়েই সেনাবাহিনীর গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ যায় এক জনের। আর প্রতি বারই বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগ উঠেছে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে।
যদিও সেনাবাহিনী সূত্রে এ দিন জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মঙ্গলবারের ঘটনার প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে। নিয়ম মতো, সেই তদন্তের পরে তথ্য-প্রমাণ পেশ করা হবে সেনা আদালতে। তার পরে শুরু হবে শুনানি।
শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করবে সেনা আদালত, যাকে ‘কোর্ট মার্শাল’ বলে। সেনাবাহিনীর এক জন মুখপাত্র বলেন, “এ ক্ষেত্রেও তার কোনও রকম ব্যতিক্রম হবে না।”
সুপ্রতীকের বাবা বিশ্বজিতবাবুর খড়দহে ওষুধের দোকান। ব্যারাকপুর আনন্দপুরীতে ভাড়াবাড়িতে থাকেন তাঁরা। এক মাত্র ছেলে সুপ্রতীক ব্যারাকপুর রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন বিদ্যাভবনের ছাত্র ছিল। রোজ সকালে বিশ্বজিতবাবুই ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যান। মঙ্গলবার হাসপাতালে স্ত্রী-র শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন তিনি, “আজ মায়ের সঙ্গে যাবে বলে ছেলে বায়না করছিল। একটু আগেও তো কথা হল। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে টা-টা করল। আর কোনও দিন ওর মুখ থেকে বাবা ডাক শুনতে পাব না!” সুপ্রতীকের স্কুলের সহ-সভাপতি স্বামী গিরিজানন্দও বলেন, ‘‘এ বার অন্তত সেনাবাহিনীর সচেতন হওয়া উচিত।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ যখন ঘটনাটি ঘটে, তখন এস এন ব্যানার্জি রোড প্রায় ফাঁকা। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট ও লাটবাগানের ঢিলছোঁড়া দূরত্বে চিড়িয়ামোড় সাধারণত সকাল আটটা থেকে ট্রাফিক পুলিশে ছয়লাপ থাকে। কিন্তু অত সকালে পুলিশের চিহ্নমাত্র ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শী বলতে ছিলেন চিড়িয়ামোড় আইল্যান্ডের কাছে একটি চা-পানের দোকানদার আর দু’চার জন পথচারী। তাঁদের বয়ান অনুযায়ী, আইল্যান্ডের নিয়ম ভেঙে একটি গাড়ি কলকাতার দিকে চলে যাওয়ায় শ্যামলীদেবীর স্কুটি-র সামনে থাকা অটোটি আচমকা ব্রেক কষেছিল। শ্যামলীদেবী তখন টাল সামলাতে না পারায় স্কুটি-র পিছনে বসা সুপ্রতীক এক দিকে হেলে যায়। শ্যামলীদেবী আবার স্কুটি স্টার্ট করার আগেই পিছন থেকে আসা সেনাবাহিনীর একটি ট্রাক সজোরে ধাক্কা মারে স্কুটিতে। পড়ে গিয়ে সুপ্রতীক ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়। আহত হন শ্যামলীদেবী।
বেগতিক বুঝে সেনাবাহিনীর ওই গাড়িতে থাকা কর্মীরা মা-ছেলে দু’জনকেই ব্যারাকপুর সেনা ছাউনির হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা সেখানে সুপ্রতীককে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শ্যামলীদেবীকে বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ব্যারাকপুরের ডিসি (ট্রাফিক) দেবাশিস বেজ বলেন, ‘‘চিড়িয়ামোড় আইল্যান্ডের কাছে রাস্তায় কোনও কারণে স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন শ্যামলীদেবী। তখনই সেনাবাহিনীর গাড়িটি স্কুটি-র পিছনে ধাক্কা মারে।’’
তবে এ দিনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ পুলিশের একাংশও। পুলিশের অভিযোগ, সেনাবাহিনীর নিজস্ব আইন থাকায় এ ক্ষেত্রে ঘাতক গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সাধারণত গাড়ির দুর্ঘটনায় মামলা হলে তা জামিনযোগ্য ধারাতেই হয়। চালক আত্মসমর্পণ করে আদালত থেকে জামিন নিতে পারেন। কিন্তু অভিযোগ, সেই আইনের আওতায় পড়ে না সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর এক অফিসারের কথায়, “কোনও সেনাকর্মীর বিরুদ্ধে খুন-ধর্ষণের মতো অভিযোগ উঠলে তখন ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব আদালতেই বিচার হয়।” কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মী কি আদৌ শাস্তি পান? ওই অফিসারের যুক্তি, “এই ধরনের ঘটনায় বিচারের পরে সংশ্লিষ্ট কর্মী বা অফিসারের চাকরি চলে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে। চূড়ান্ত বিচারের দিন সেনা আদালতে ডেকে পাঠানো হয় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের। সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয় স্থানীয় পুলিশ আধিকারিকদেরও। বিচারের ফলাফল তাঁরাও জানতে পারেন।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.