বেআইনি ভাবে ট্রেকারে যাত্রী তোলা আটকাতে রাস্তায় নেমেছেন বাস মালিকেরা। এই চিত্র হুগলির শ্রীরামপুর-জাঙ্গিপাড়ার ৩১ নম্বর রুটের। কখনও সখনও মাঝ রাস্তায় ট্রেকার থামিয়ে যাত্রীদের নামানো হচ্ছে। তাঁদের তুলে দেওয়া হচ্ছে একই রুটের অন্য বাসে। তাতে বাস কর্মীদের সঙ্গে ট্রেকার-কর্মীদের হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আবার যাত্রীরাও পড়ছেন ফাঁপরে।
বাস মালিকদের অভিযোগ, রুট জুড়ে বেআইনি ভাবে দাপিয়ে বেড়ায় বহু ট্রেকার। হস্তক্ষেপের দাবিতে হন্যে হয়ে প্রশাসনের নানা দফতরে এবং তৃণমূলের নানা মাপের নেতার কাছে আবেদন-নিবেদন করেছেন বাস মালিকেরা। ওই রুটে যে আইন ভেঙে অনেক গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, প্রশাসনিক কর্তারা তা অস্বীকার করছেন না। কালেভদ্রে বেআইনি গাড়ি চলাচল রুখতে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সে ভাবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ।
জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “ওই রুটে বাসের সঙ্গে ট্রেকারের কিছু সমস্যা রয়েছে। সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়। দিন কয়েক আগে অভিযান চালিয়ে বেআইনি ভাবে চলাচল করা ট্রেকার ধরা হয়েছে।” জেলাশাসকের সংযোজন, “শীঘ্রই বৈঠক করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জাঙ্গিপাড়া থেকে শ্রীরামপুর পর্যন্ত ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই রুটে ২০টি বাস চলে। কিছু ট্রেকারও চলে। অভিযোগ, বহনক্ষমতার অতিরিক্ত তিন-চার গুণ লোক তোলে ট্রেকারগুলি। বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয় নিত্যযাত্রীদের। কয়েকটি ট্রেকারের পারমিট এমন আছে যে, নির্দিষ্ট যায়গা থেকে ছাড়ার পরে সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছতে হবে। মাঝপথে যাত্রী ওঠানো-নামানো যাবে না। যদিও এ সব নিয়মেরই তোয়াক্কা করে না ট্রেকারগুলি। প্রশাসনের দরজায় বহু বার কড়া নেড়েছেন বাস মালিকেরা। ফল না মেলায় সম্প্রতি নিজেরাই লাগাতার ট্রেকার আটকানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। মাঝপথে ট্রেকার থেকে লোক নামিয়ে বাসে তুলে দেওয়া হয়।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বাস মালিকদের পাল্টা হিসাবে গত শুক্রবার সিঙ্গুরের বড়া তেলিয়ার মোড়ে একটি বাস আটকে দেন ট্রেকারের লোকজন। এক বাসকর্মীকে চড়থাপ্পড় মারা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ এসে বাসটিকে গন্তব্যের দিকে রওনা করিয়ে দেয়। বাস মালিকদের অভিযোগ, শুধু ট্রেকারই নয়, গত কয়েক মাস ধরে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আরও কিছু ছোট গাড়ি। জাঙ্গিপাড়া থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দূরত্বে জাঁকিয়ে বসেছে এই গাড়িগুলি। শাসক দলের তাবড় নেতাদের আঙুলের ইশারায় কোনও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ওই সব গাড়ি চলছে বলে অভিযোগ। বাস মালিকদের অনুযোগ, সরকারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়েও তাঁদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। আর, আইন ভেঙে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যাত্রিবাহি অন্য গাড়ি। তাঁদের দাবি, সমস্যা মেটাতে পাকাপাকি ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। ট্রেকার মালিকেরা সাংগঠনিক ভাবে গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে মালিকদের একাংশের বক্তব্য, বাসও তো নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে বেশি যাত্রী তোলে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় কোথায়? তাঁদের আরও বক্তব্য, এই রুটে প্রচুর যাত্রী। ফলে যাত্রীদের স্বার্থেই বাস-ট্রেকার সহাবস্থান করতে পারে। অযথাই বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করা হচ্ছে। তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদব বলেন, “নিয়ম না মেনে কিছু ট্রেকার চলছে বলে অভিযোগ এসেছে। দলীয় স্তরে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট বলেছি, দলের কেউ বেআইনি কাজে যুক্ত থাকতে পারবে না।”
|