ফেলে রাখা শিল্পের জমি চায় রাজ্য, বাধা তৃণমূলই
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, শিল্পের নামে জমি নিয়ে ফেলে রাখা চলবে না। শিল্পমন্ত্রীও বার্তা দিয়েছেন, ‘হয় জমি শিল্পের কাজে লাগান, না হলে ছেড়ে দিন।’
অথচ শাসকদলের কিছু নেতা-মন্ত্রীর বাধায় দু’দশকেরও বেশি পড়ে থাকা সিলিং-বহির্ভূত জমি খাস করে নিজেদের দখলে নিতে পারছে না রাজ্য সরকার। শিল্পের প্রয়োজনে যেখানে ‘ল্যান্ডব্যাঙ্ক’ গড়ে তোলার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে, হুগলিতে দিল্লি রোডের ধারে প্রায় ১০০ কোটি টাকার জমি কার্যত বেহাত হতে বসেছে সরকারের। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সরকারি আধিকারিকদের কোনও দলের রং না দেখে কাজ করতে বলেছি। ফাইল চেয়ে পাঠাচ্ছি।”
এই জমিই হাতে পাচ্ছে না সরকার। ছবি: দীপঙ্কর দে।
রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, ১৯৯২ সালে শ্রীরামপুরের কাছে দিল্লি রোড লাগোয়া চাতরা ও পিয়ারাপুর মৌজায় ১৩২ একর জমি কিনেছিল ‘ক্যালকাটা গুড্স ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংস্থা। রাজ্যের ভূমি সংস্কার আইনের ‘১৪-ওয়াই’ ধারা অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের বিশেষ অনুমোদন ছাড়া কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা ২৪.২২ একরের (প্রায় ৭২ বিঘে) বেশি জমি নিজের মালিকানায় রাখতে পারে না। তবে দু’শোরও বেশি পরিবহণ ব্যবসায়ী ওই জমি ব্যবহার করবেন এবং সেখানে ট্রাক টার্মিনাল হবে, এই আশ্বাস দিয়েই জমি কেনা হয়েছিল। ২০০৫-’০৬ সালে সেটির মিউটেশনও হয়ে যায়।
বাম আমলে ওই জমি নিয়ে আর নাড়াচাড়া না হলেও সম্প্রতি ভূমি সংস্কার দফতরের আলিপুর ডাইরেক্টরেট অফিস থেকে বাড়তি জমি খাস করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত বছর মার্চে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীরা হুগলিতে সংস্থার অফিসে নোটিস দিতে গেলে তাঁদের হটিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে সংস্থার একটি ঘরে তাঁদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ। নিরুপায় হয়ে তাঁরা কলকাতায় জহওরলাল নেহরু রোডে সংস্থার অন্য অফিসে নোটিস দিয়ে আসেন।
প্রশাসনিক মহলের অভিযোগ, সম্প্রতি সরকারি কর্মীরা ওই জমির দখল নিতে হুগলির বৈদ্যবাটিতে সংস্থার অফিসে গেলে তাঁদের আবার হটিয়ে দেওয়া হয়। জেলা তৃণমূলের কিছু নেতা-মন্ত্রী তাঁদের নিরস্ত করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। দখল নেওয়ার কাজ স্থগিত হয়ে যায়। জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “ওই সংস্থার জমির দখল নেওয়ার কাজ স্থগিত হয়ে গিয়েছে, এটা ঘটনা। তবে পুরো প্রক্রিয়াটাই সরাসরি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ডাইরেক্টরেট থেকে পরিচালিত হয়েছে। এর বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
রাজ্য প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, “ওখানে যে ১৩২ একর জমি রয়েছে, তার বর্তমান বাজারদর অন্তত ১০০ কোটি টাকা। সরকার ওই জমি হাতে পেলে সেখানে শিল্প হতে পারে। ভূমিহীনদের পাট্টাও দেওয়া যেতে পারে।” তাঁর অভিযোগ, “সরকারি কর্মীরা নোটিস দিতে গেলে চুঁচুড়ার বিধায়ক তপন মজুমদারের নেতৃত্বে বেশ কিছু যুবক বাধা দেন। তপনবাবু রীতিমতো ধমকে আমাদের কর্মীদের সেখান থেকে হটিয়ে দেন।” যদিও তপনবাবুর দাবি, “আমি ওই জমির ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গ জানি না। আপনার মুখেই প্রথম শুনলাম।” সংস্থার অন্যতম শীর্ষকর্তা রাজা রায় আবার বলেন, “বিধায়ক তপন মজুমদার এসেছিলেন, এ কথা ঠিক। কিন্তু সরকারি কর্মীদের আটকে রাখা, হুমকি দেওয়া বা অসম্মান কিছুই করা হয়নি। তিনি শুধু মাত্র মধ্যস্থতা করতে এসেছিলেন।” রাজাবাবুর দাবি, “১৯৯২ সালে বেশ কিছু ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ১৩ কোটি টাকায় জমিটা কিনেছিলাম। এখন হঠাৎ রাজ্য সরকার জমি খাস করে দিতে চাইছে। আমরা জমিটি ব্যবসার কাজে লাগাতে চাই।” যদি ব্যবসাই করবেন, তবে ২১ বছর ধরে জমি ফেলে রাখা হল কেন? তার সদুত্তর না দিয়ে রাজা বলেন, “আমরা কোনও আইনি জটিলতায় যেতে চাই না। সরকার যদি লিজেও কিছু টাকার বিনিময়ে ওই জমি দিতে চায়, আমরা রাজি আছি।”
শিল্পমন্ত্রী বলেন, “সরকারের ওই জমি নিতে কোনও সমস্যা হয়েছে কি না, খোঁজ নিচ্ছি। গোটা প্রক্রিয়া দ্রুত মেটানো হবে।” হুগলি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তেরও বক্তব্য, “দলনেত্রীর কড়া নির্দেশ, জমিজমা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে পার্টির নেতা-কর্মীরা নাক গলাবেন না। এ ক্ষেত্রে সরকারি আধিকারিকদের কোনও সমস্যা হয়েছে কি না, দলীয় স্তরে তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.