কর্ত্রীকে বেঁধে লুঠপাট, যাওয়ার পথে প্রণামও
মন প্রণাম আগে কখনও পাননি কসবার বৃদ্ধা রত্না মুখোপাধ্যায়!
শাড়ি কেনাকাটার সূত্রেই তাদের দু’জনের সঙ্গে পরিচয় রত্নাদেবীর। মঙ্গলবারও বৃদ্ধার কাছে সেই অজুহাতেই আসে তারা। সঙ্গে আর এক জন। মওকা বুঝে আচমকা দড়ি দিয়ে বৃদ্ধাকে বেঁধে ফেলে তিন জন। এর পরে মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে পালানোর আগেই ঘটে গেল ঘটনাটা। যাওয়ার আগে রত্নাদেবীকে ঢিপ করে প্রণাম করে গেল তিন জনেই। তবে আশীর্বাদের অপেক্ষা আর করেনি।
শহরে এমন ‘সুশীল’ ডাকাত সাম্প্রতিক অতীতে মিলেছে কি না, তা মনে করতে পারছেন না পুলিশকর্তারা। উত্তর ২৪ পরগনার বিশরপাড়ায় বছর দুয়েক আগে ‘ভদ্র’ ডাকাতের দেখা মেলে। বাড়ির সবাইকে বেঁধে ফেললেও অসুস্থ, বৃদ্ধ গৃহকর্তাকে রেহাই দিয়ে সেবা-যত্নও করেছিল তারা। মাস ছয়েক আগে বারাসতে এক বৃদ্ধার বাড়িতে লুঠপাট সেরে যাওয়ার সময়ে ‘মাসিমা’ ডেকে তাঁকে প্রণাম করে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
ঠিক কী ঘটেছে কসবায়?
পুলিশ সূত্রের খবর, মুন্না ও অর্ণব দেব নামে দুই যুবক প্রায়ই কসবার এন কে ঘোষাল রোডের একটি আবাসনে রত্নাদেবীর বাড়িতে শাড়ি বিক্রি করতে যেত। মাঝেমধ্যে টাকা বাকিও রাখত। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে ওই তিন যুবক শাড়ির টাকা চাওয়ার ছুতোয় ঘরে ঢুকে জল খেতে চায়। রত্নাদেবী পুলিশকে জানান, জল আনতে পিছন ফিরতেই তাঁকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে তিন জন। অভিযোগ, মোবাইল, সোনার দুল, সোনার হার এবং সোনার আংটি ও নগদ বারো হাজার টাকা লুঠ করে তাঁকে প্রণাম করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। রত্নাদেবী পুলিশকে জানান, দুষ্কৃতীরা বাইরে থেকে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে পালাতেই তিনি চিৎকার শুরু করেন। ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। তাঁরাই রত্নাদেবীকে বাঁধনমুক্ত করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক।
বুধবার গিয়ে দেখা যায়, রত্নাদেবীর ফ্ল্যাটে কেউ নেই। পড়শিরা জানান, ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে স্বেচ্ছাবসর নেওয়া বিধবা রত্নাদেবী ফ্ল্যাটে একাই থাকেন। আবাসনে নিরাপত্তারক্ষী নেই। ফলে যে কেউ সরাসরি ভিতরে ঢুকতে পারেন। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন দুপুরে রত্নাদেবীকে লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা অফিসারেরা। তিন যুবকের স্কেচ আঁকানো হয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, দক্ষিণ শহরতলিতে গত কয়েক মাসে লাগাতার চুরি-ডাকাতি চলছেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েকটি ‘গ্যাং’ এতে যুক্ত।
পুলিশ জানায়, ইদানীং শহরের নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়িতে এই ধরনের অধিকাংশ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, পরিচারক কিংবা পরিচিতেরাই জড়িত। গত ২০ নভেম্বর সকালে দেশপ্রিয় পার্কের বাড়িতে ঢুকে রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় নামে এক বৃদ্ধকে খুনে গ্রেফতার হয় বাড়ির সাফাইকর্মী।
পুলিশকর্তারা বলছেন, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা নতুন নয়। তাই কয়েক বছর আগে শহরে ‘প্রণাম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়। তাতে থানার এক জন অফিসার নিয়মিত প্রকল্পের সদস্যদের খোঁজ নেন। লালবাজার সূত্রের খবর, দেশপ্রিয় পার্কের ঘটনার পরে প্রতিটি থানাকে ‘প্রণাম’-এর প্রচার বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এলাকার বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের তালিকাও নতুন করে তৈরি করতে বলা হয়। রত্নাদেবীর প্রতিবেশীরা অবশ্য জানান, তাঁদের ফ্ল্যাটে প্রণাম প্রকল্প নিয়ে কেউ আসেননি। রত্নাদেবীকে প্রকল্পের তালিকাভুক্তও করা হয়নি।
পুলিশের প্রণাম-সহায়তা না পেলেও এ যাত্রায় দুষ্কৃতীদের প্রণাম অবশ্য পেয়ে গেলেন রত্নাদেবী।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.