ছেলেদের ফিরে পেলে তবে বুঝব জিতেছি
জীবনের ১৩টা বছর হারিয়েছি। কেউ তো সেটা ফিরিয়ে দিতে পারবে না! সেই সঙ্গে হারিয়েছি নিজের দুই ছেলেকে। গত ১৩ বছরে এক দিনও ওদের দেখিনি, গলা পর্যন্ত শুনিনি। আজ আমি ওদের ফিরে পেতে চাই।
২০০০ সালে যখন ঘটনাটা ঘটে, তখন ওদের এক জনের বয়স পাঁচ। অন্য জনের চার। মাঝে কেটে গিয়েছে এতগুলো বছর। কী করে ওরা, কেমন দেখতে হয়েছে কিচ্ছু জানি না! পুরনো সব অ্যালবাম আর ছবি হাতড়ানোই আমার সম্বল।
১৯৮৯-এর ১৪ মে আমারই এক বন্ধুর সূত্রে কুণালের সঙ্গে আমার পরিচয়। সম্পর্ক গাঢ় হয়। ভালবেসে বিয়ে করি বছর তিনেক বাদে। ১৯৯২-এর ২৪ জানুয়ারি। তখন আমার ২১।
প্রথম থেকেই আমার শাশুড়ি অনুরাধা বসু আমাকে পছন্দ করতেন না। এই বিয়েতে উনি মন থেকে সায় দেননি। কারণ, আমাদের এই ঢাকুরিয়ার দু’কামরার বাড়ির সঙ্গে গড়িয়াহাটের অশ্বিনী দত্ত রোডে কুণালদের তেতলা বাড়ির ফারাক অনেক। আর্থিক দিক থেকে আমরা খুবই সাধারণ, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। আমার শ্বশুরবাড়ি উচ্চ মধ্যবিত্তই বলা যায়। কিন্তু আমি আবার ব্রাহ্মণ। উঁচু জাতের বউমাকে ঘরে তুলতেও দ্বিধা ছিল আমার শাশুড়ির। যদিও কুণাল এগুলোকে পাত্তা দেয়নি। সব আপত্তি তুচ্ছ করেই ও আমাকে বিয়ে করেছিল।
১৯৯৫-এর ১৮ মে আমাদের বড় ছেলে অভ্রনীলের জন্ম। তার বছর দেড়েক বাদে ১৯৯৬-এর ডিসেম্বরে জন্মায় ছোট ছেলে সৌরনীল। দিব্যি সুখের সংসার ছিল। একটা সেলুলার ফোনের সংস্থায় কাজও করতাম। বিপর্যয় ঘটল ২০০০-এর ২৬ মে। ওই দিন থেকে কুণাল নিখোঁজ হয়ে যায়। পরে জানলাম, ওকে খুন করা হয়েছে। ৪ জুন আমাকে গ্রেফতার করল পুলিশ! আমি নাকি কুণালের মৃত্যুর জন্য দায়ী! ভাবতেও পারিনি এমন একটা দিন দেখতে হবে। লড়াইয়ের সেই শুরু।
আমার শাশুড়ি কুণালের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করে আদালতে সাক্ষ্য দিলেন। ২০০৩-এর ১৮ সেপ্টেম্বর আমার ১৪ বছরের জেল হল। তখন থেকেই আমি ছেলেদের হেফাজত চেয়ে বারবার আবেদন জানিয়েছি আদালতের কাছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। শাশুড়ি ওদের আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। কোনও রকম যোগাযোগ করতে দেননি।
এতগুলো বছর প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেল, তার পরে আলিপুরে মহিলা সংশোধনাগারে থেকেছি। লোরেটো হাউসে স্কুলের পড়া শেষ করে ইগনু থেকে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম। সে জন্য জেলে আমাকে নানা রকম ভাল কাজেই যুক্ত করা হয়েছে। কখনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কখনও ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ানো, কখনও হাসপাতালের দায়িত্বে থেকেছি। অনেক সময় চিকিৎসকদের সঙ্গে উপস্থিত থেকে ডেলিভারিও করিয়েছি। সে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা! তার পরে কিছু দিন ওয়েলফেয়ার অফিস এবং জেল অফিসেও কাজ করেছি। এ বছর ১৬ এপ্রিল জামিন পেলাম। বাড়ি গেলাম। বাড়ি মানে, বাপের বাড়ি। ঢাকুরিয়ায়, মা আর ভাইয়ের কাছে।
১৩ বছর আগে গ্রেফতার হয়ে অশ্বিনী দত্ত রোড ছেড়েছিলাম। তার পরে আর একবারও ও-পাড়ায় যাইনি। কেন যাব! আমার সব গিয়েছে। স্বামীকে হারালাম। মিথ্যে অপবাদে এত দিন জেল খাটলাম। এখন আশা ছেলে দু’টোকে পাওয়ার। আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে এ বার সেই চেষ্টা চালাব। জানি কাজটা সহজ নয়। তবু মনের জোর সম্বল করে চেষ্টা করব।
এই রায় আমার কাছে জয় নয়! জয় হবে সে দিন, যে দিন আমি আমার দুই ছেলেকে কাছে পাব।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.