বাংলাদেশে বনধ, রাজনৈতিক সঙ্কটের জেরে বার বার বহির্বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ায় আপাতত বন্ধ হল আমদানি-রফতানি। এদিকে, মঙ্গলবার যশোহরে ২টি ভারতীয় বাসে হামলার ঘটনার পর বুধবার ঢাকাগামী কোনও বাস কলকাতা থেকে যায়নি বলে অভিবাসন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
গত এক মাস যাবত্ বাংলাদেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে বহির্বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ায় কেন্দ্রের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। শীঘ্রই বাংলাদেশে শান্তি না ফিরলে রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা। পাশাপাশি বাংলাদেশে উত্তপ্ত পরিস্থিতির জন্য সে দেশে পণ্য সরবরাহের ঝুঁকি না নিতে রফতানিকারকদের পরামর্শ দিয়েছে ট্রাক মালিকদের সংগঠন। বুধবার ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সত্যজিত্ মজুমদার বলেন, “সীমান্তে আটকে থাকা বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাকের জিনিস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে যাঁরা বাংলাদেশে পণ্য রফতানি করেন, তাঁদের আমরা ঝুঁকি নিতে বারণ করছি।” বাংলাদেশ সীমান্তে এ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাওয়া প্রায় ১৩০০ লরি আটকে আছে। পেট্রাপোল এবং ঘোজাডাঙাএই দুই জায়গায় আটক লরির সংখ্যা যথাক্রমে ৭০০ ও ৬০০। বনগাঁ ট্রাকওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিলীপ দাস বলেন, “প্রতিটি ট্রাকের জন্য আমাদের দৈনিক ক্ষতি প্রায় এক লক্ষ টাকা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাছ, নানা রকম ফল।” ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে একটি গুদামে অগ্নিকান্ডের পর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এ রাজ্যের ১৯টি লরি পুড়ে গিয়েছিল। সে কথা জানিয়ে দিলীপবাবু বলেন, “সে ক্ষেত্রে বিমার কোনও টাকাও পাইনি। তাই সে কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।” |
|
|
দাঁড়িয়ে আছে পণ্যবোঝাই ট্রাক। পেট্রাপোল (বাঁদিক) ও
ঘোজাডাঙায় (ডানদিক) একই ছবি।—নিজস্ব চিত্র।
|
|
পেট্রাপোল শুল্ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দিনে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হয়। গত এক মাসে বাংলাদেশে গোলমাল, লাগাতর বন্ধের জেরে পণ্য রফতানি পুরোপুরি বন্ধ ছিল ৬দিন। এ ছাড়া ১৫ দিন কমবেশি বাণিজ্য ব্যাহত হয়েছে। এই অবস্থায় মঙ্গলবার বেনাপোল শুল্ক দফতরের কর্তারা আর সে দেশে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক ঢোকার অনুমতি (কার পাস) দিতে পারবেন না জানিয়ে দেওয়ায় নড়ে চড়ে বসেন পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের কর্তারা। দু’দেশের শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা পেট্রাপোলে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের তরফে বর্তমান পরিস্থিতিতে আর পণ্যবাহী ট্রাক না পাঠানোর জন্য বলা হয়। কারণ হিসাবে সে দেশের প্রতিনিধিরা জানান, বেনাপোল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। টার্মিনাসে আর ট্রাক রাখার জায়গা নেই। পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশানর শুভেন দাশগুপ্ত বলেন, “বাংলাদেশ শুল্ক দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তবেই পণ্যবাহী ট্রাক পাঠাতে। তাই আপাতত পেট্রাপোলে আমদানি-রফতানি বন্ধ। এদিক থেকে সবুজ সঙ্কেত পেলেই এ দেশ থেকে ট্রাক পাঠানো হবে।”
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “বেনাপোল বন্দরে এই মুহূর্তে ৮২০টি পণ্যবাহী ট্রাক আটকে আছে। ওঁরা বলেছেন বেনাপোলে ট্রাক রেখে দেওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। ওই সব ট্রাকের নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তাঁরা করতে পারবেন না। তাই পরিস্থিতি বিচার করে আমরাও এ দেশ থেকে ট্রাক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
|