|
|
|
|
|
|
|
প্রফেশন ট্যাক্স |
কাজ করালে কর লাগবে
ব্যবসা আপনার। কর্মী নিয়োগ করছেন আপনি। তাই সরকারের ঘরে
করও জমা দিতে হবে আপনাকেই। লিখছেন সৌরভ চন্দ্র। |
|
ব্যবসা শুরু করার প্রথম ধাপ হিসেবে ট্রেড লাইসেন্সের খুঁটিনাটি নিয়ে আগেই কথা বলেছি। এ বার আসব ব্যবসা জন্ম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হওয়া অন্য এক দায় প্রসঙ্গে। ব্যবসা চালাতে গেলে কর্মী নিয়োগ করতেই হয়। আর, একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি বেতন দিতে হলেই সংশ্লিষ্ট কর্মীকে দেওয়া টাকার একটা অংশ সরকারের ঝুলিতে জমা দিতে হয় প্রফেশন ট্যাক্স (বৃত্তিকর) বাবদ। তবে আপনি যদি ভেবে নেন যে, কর্মী না-নিয়ে একাই ব্যবসা চালালে এই কর লাগবে না, তা হলে ভুল করবেন। যে-কোনও ব্যবসা তৈরি হওয়া মাত্রই কিন্তু তা প্রফেশন ট্যাক্সের আওতায় এসে পড়ে। ফলে লাভ হোক বা না- হোক, বছরে বা মাসে এই বাবদ নির্দিষ্ট টাকা গুনতেই হয়। না-হলে আইন ভাঙার জন্য জরিমানা নিশ্চিত। |
কেন দেবেন? |
ভারতীয় সংবিধানের ২৭৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যে কোনও ব্যবসা ও পেশায় বৃত্তিকর জমা নেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যই। সেই নিয়ম মেনে, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ট্যাক্স অন প্রফেশন্স, ট্রেডস, কলিংস অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট, ১৯৭৯-এর আওতায় এ রাজ্যে তা কার্যকর হয়েছে। |
প্রথম ধাপ |
পশ্চিমবঙ্গে প্রফেশন ট্যাক্স এনরোলমেন্ট বা রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব বৃত্তিকর আধিকারিকের (প্রফেশন ট্যাক্স অফিসার)। কলকাতার সল্টলেকে সদর দফতর। এনরোলমেন্ট বা রেজিস্ট্রেশনের জন্য সেখানে বিভিন্ন থানা অনুযায়ী অঞ্চল ভাগ করা আছে। প্রতিটি অঞ্চলের জন্য আলাদা আধিকারিক। আপনি কার কাছে আবেদন করবেন, সেটা আপনার ব্যবসার জায়গা কোন থানার অন্তর্ভুক্ত, তার উপর নির্ভর করছে। জেলাগুলিতে মহকুমা অনুযায়ী বৃত্তিকর আধিকারিকের দফতর ভাগ করা থাকে। |
করের হিসেব |
যে-সব শর্তের ভিত্তিতে বৃত্তিকর হিসেব করা হয়, সেগুলি হল—
• ব্যবসার ধরন
• ব্যবসার গঠন।
• তার থেকে বার্ষিক বা মাসিক আয় বা মুনাফা পেশাদারের আয়ের অঙ্ক।
বৃত্তিকরের আওতায় বিভিন্ন সংস্থা তো পড়েই, পাশাপাশি আইনজীবী বা ডাক্তারদের মতো স্বাধীন পেশা থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসাই রয়েছে। তবে সর্বোচ্চ বার্ষিক করের পরিমাণ ২৫০০ টাকা। |
কী ভাবে দেবেন? |
এই কর দেওয়ার পদ্ধতিটা নির্ভর করে, কে তা দিচ্ছে তার উপর।
করদাতা যদি নিয়োগকর্তা হন: ব্যবসা যে-ধরনেরই হোক (সরকারি সংস্থা বাদে), কর্মীদের বৃত্তিকর জমা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়োগকর্তার। অবশ্য কারও বেতন ৭০০০ টাকার বেশি হলে তবেই ওই কর দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে বৃত্তিকর আধিকারিকের থেকে সার্টিফিকেট অফ রেজিস্ট্রেশন নিতে হয় নিয়োগকর্তাকে ও প্রতিটি কর্মীকে বেতন দেওয়ার সময়ে ওই কর বাবদ একটি নির্দিষ্ট অংশ (যার ক্ষেত্রে যতটা) কেটে নিয়ে তা সরকারকে জমা দিতে হয়।
তবে এর পাশাপাশি ব্যবসা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্ট নিতেই হবে। কারণ, যে কোনও ব্যবসা শুরু করলেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃত্তিকর সরকারকে দিতে হয়, তা আপনি কর্মী রাখুন বা না-রাখুন। যদি এমন হয় যে, সব কর্মীর বেতনই ৭০০০ টাকার নীচে, তা হলে শুধুমাত্র সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্টই লাগবে। আর বছরে দিতে হবে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বৃত্তিকর।
করদাতা যদি স্বনিযুক্ত ব্যক্তি হন: কোনও ব্যক্তি একাই স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করলে, তিনি নিজেই নিজের প্রফেশন ট্যাক্স জমা দেবেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকেও সংগ্রহ করতে হবে সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্ট। আর বছরে নির্দিষ্ট অঙ্কের বৃত্তিকর দিতে হবে। |
নজরদারি |
চলতি অর্থবর্ষ থেকেই বৃত্তিকর অডিট চালু হয়েছে। এই করের হিসেব সকলে ঠিকঠাক আইন মেনে করছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতেই এই উদ্যোগ। বৃত্তিকর সময় মতো ঠিকঠাক না-দিলে বা ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে কিন্তু আর্থিক জরিমানা গুনতে হয়। |
নিয়োগকর্তাদের করণীয় |
আপনি যদি নিয়োগকর্তা হন, তা হলে যা করতে হবে—
• অনলাইনে (www.wbcomtax.nic.in) বা হাতে হাতে (বৃত্তিকর আধিকারিকের থেকে) ফর্ম নেবেন।
• যে বৃত্তিকর আধিকারিকের দায়িত্বে নিয়োগকর্তার ব্যবসার অঞ্চলটি পড়ে, তাঁর কাছেই আবেদন করতে হবে।
• আবেদনপত্রের সঙ্গে লাগে ব্যবসার সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্ট-এর কপি, সর্বশেষ বৃত্তিকর প্রদানের চালান, বেতন হিসাবের খাতা, আয়-ব্যয়ের বিবরণ।
• কোনও কর্মীর বেতনই ৭০০০ টাকার উপরে না-হলে রেজিস্ট্রেশন লাগবে না।
• যে-মুহূর্তে একজনও ওই টাকার বেশি পেতে শুরু করলেন, সে দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করবেন।
• ৩০ দিনের মধ্যেই সার্টিফিকেট মঞ্জুর করার নিয়ম। তবে সাধারণত সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দেওয়া হয়।
• সার্টিফিকেট অফ রেজিস্ট্রেশন হাতে পেলেই বৃত্তিকর জমা দেওয়া শুরু করতে হবে।
• কর জমা দেওয়া যায় অনলাইনেই। হাতে হাতে দিলে, ব্যাঙ্ক বা সরকারি কোষাগারে চালান জমা করতে হয়। |
|
সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্ট নিতে |
• যে মুহূর্তে কোনও ব্যবসায় বৃত্তিকর দেওয়ার দায় শুরু হল, সে দিন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এনরোলমেন্টের জন্য আবেদন করতে হয়।
• www.wbcomtax.nic.in ওয়েবসাইটে ঢুকে বা হাতে হাতে নির্দিষ্ট ফর্ম তুলে সংশ্লিষ্ট বৃত্তিকর আধিকারিকের থেকে এনরোলমেন্ট নিতে হয়।
• সঙ্গে লাগে ট্রেড লাইসেন্স, ভাড়ার রসিদ বা মিউনিসিপ্যালিটি ট্যাক্স বিল বা বিনা ভাড়ার অনুমতিপত্র, কোম্পানির জন্য মেমর্যান্ডাম অফ আর্টিকল্ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন, আরওসি ফর্ম নম্বর ১৮ ও ৩২, সঙ্গে রসিদ, যৌথ অংশীদারি সংস্থার জন্য পার্টনারশিপ দলিল, প্রপ্রাইটরি কনসার্ন-এর জন্য মালিকের পরিচয়পত্র এবং ঠিকানার প্রমাণ, স্বাধীন পেশাদারদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পেশার প্রমাণপত্র
• কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে কত টাকা বৃত্তিকর হবে, তার তালিকা (শিডিউল) আছে।
• ৩০ দিনের মধ্যেই সাধারণত ওই সার্টিফিকেট মঞ্জুর করার নিয়ম। তবে সব ঠিক থাকলে আবেদনের সঙ্গে সঙ্গেই তা পাওয়া যায়।
• বৃত্তিকর দিতে শুরু করার তারিখ ও অঙ্ক লেখা থাকে সার্টিফিকেটে। |
|
লেখক: আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞ |
|
|
|
|
|