রোগীর আত্মীয় পরিজনদের জন্য বছর দু’য়েক আগে তৈরি হয়েছিল শৌচাগার ও সাইকেল স্ট্যান্ড। কিন্তু সেগুলি আজও উদ্বোধন হয়নি। স্বাভাবিক ভাবে পরিষেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে আসা লোকজন। শুধু শৌচাগার বা সাইকেল স্ট্যান্ড নয়, একই অবস্থা যাত্রীনিবাসেরও। তবে সেগুলি খুব শীঘ্রই চালু করে দেওয়া হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ) কবিতা সাসমল।
জেলার অন্য হাসপাতালগুলির মতো এখানেও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে নানা পরিষেবার ঘাটতি রয়েছে। অথচ যোগাযোগের সুবিধার্থে সাঁইথিয়া ছাড়াও ময়ূরেশ্বর লাভপুর ও মহম্মদবাজারের একাংশের মানুষ এই গ্রামীণ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু রোগীদের সঙ্গে আসা আত্মীয়পরিজনদের ব্যবহার করার মত কোনও শৌচাগার না থাকায় চরম সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষত মহিলাদের। এ ছাড়া দূর থেকে যাঁরা হাসপাতালে আসেন তাঁদের সাইকেল রাখা বা রাতে থাকার সমস্যা রয়েছে। তা নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে। তাঁদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে ২০১০-১১ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাঁইথিয়া পঞ্চায়েত সমিতির কাছে ‘পে-টয়লেট’ ও ‘পে-সাইকেল স্ট্যান্ড’ এবং সাঁইথিয়ার বিধায়কের কাছে একটি যাত্রী নিবাসের জন্য আবেদন জানান। |
সাঁইথিয়া হাসপাতালের তৎকালীন বিএমওএইচ সুজয় পালের উদ্যোগে তৎকালীন বাম পঞ্চায়েত সমিতি শৌচাগার, সাইকেল স্ট্যান্ড এবং বিধায়ক ধীরেন বাগদি তাঁর এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে যাত্রী নিবাসের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেন। ২০১১ সালের শেষের দিকে সেইগুলির কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু রাজনৈতিক জটিলতায় তা আজও উদ্বোধন হয়নি। কী রকম রাজনৈতিক জটিলতা?
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শৌচাগার ও সাইকেল স্ট্যান্ডগুলির দেখভালের দায়িত্ব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর। যেহেতু সেগুলি পঞ্চায়েত সমিতির টাকায় নির্মিত। সমিতির দাবি, তাদের মনোনীত দুই গোষ্ঠীকেই শৌচাগার ও সাইকেল স্ট্যান্ডের দায়িত্ব দিতে হবে। অন্য দিকে, তৎকালীন কংগ্রেসশাসিত সাঁইথিয়ার পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, শহরের মধ্যে হাসপাতাল। তাই ওই শৌচাগার ও সাইকেল স্ট্যান্ডের দায়িত্ব দিতে হবে তাদের মনোনীত গোষ্ঠীকে।
কার্যত পঞ্চায়েত সমিতি ও পুর-কর্তৃপক্ষের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণেই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। তৎকালীন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের চণ্ডীচরণ বাগদির দাবি, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনে সেগুলি তৈরি হলেও সাঁইথিয়া পুর-কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে খোলা যায়নি। পুর-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছিল।” সাঁইছিয়ার পুরপ্রধান (কংগ্রেসের টিকিটে জিতে বর্তমানে তৃণমূলে যোগ গিয়েছেন) বীরেন্দ্রকুমার পারখ বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম সাঁইথিয়া শহরের হাসপাতাল যে শৌচাগার ও সাইকেল স্ট্যান্ড হয়েছে, সেগুলি নিয়ন্ত্রিত হোক শহরের স্বনির্ভর দলের দ্বারা। তাতে রক্ষণাবেক্ষণ ভাল হবে।” আর যাত্রীনিবাস চালু না হওয়ার প্রশ্নে বিধায়ক বলেন, “নির্বাচন বিধি-সহ নানা কারণে উদ্বোধন করা হয়নি। যাত্রীনিবাসটি যাতে শীঘ্রই চালু হয়, তা দেখছি।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও এলাকার মানুষ আশা করছেন, পুরসভা ও পঞ্চায়েত সমিতি এখন এক রাজনৈতিক দলের দখলে। তাই জটিলতা হয়তো এ বার কাটবে। |