ঋণের সুদ ছেড়ে বাঁচতে চায় সমবায় ব্যাঙ্ক
বিপুল খেলাপি ঋণ আদায় করতে অর্ধেক সুদ মকুবের কৌশল নিয়েছে বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক। বামেদের থেকে তৃণমূলের হাতে চলে আসা ওই ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির দাবি, ইতিমধ্যেই ১৫ কোটি টাকা ঋণ আদায় করা গিয়েছে।
প্রায় ৬২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ায় ওই ব্যাঙ্কের ১৭টি শাখায় ২০০৭ সাল থেকেই ঋণদান বন্ধ হয়ে ছিল। তার পাঁচ বছরের মাথায় নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দুই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বহু চাষি এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা। নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা না সরলে ঘুরে দাঁড়ানো যে প্রায় অসম্ভব, তা মেনে নিয়েছেন ব্যাঙ্কের বহু কর্তাই।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম হল, কোনও ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ তথা অনুৎপাদক সম্পদের (এনপিএ) পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। কিন্তু বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক যে পরিমাণ টাকা ঋণ দিয়েছিল, তার ৫২ শতাংশ খেলাপি বা অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়েছে। তার ফলেই ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু কী কারণে এই হাল?
ব্যাঙ্কেরই একটি সূত্রের খবর, বহু বছর ধরে এমন সব গ্রাহককে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, যার অধিকাংশ আদায় করা যায়নি। ব্যাঙ্কিং আইনে এনপিএ হয়ে যাওয়া টাকার অঙ্কের পুরোটাই ক্ষতি হিসেবে দেখানো হয়। ২০০৭ সালের ৩১ মার্চে দেখা যায়, এনপিএ হওয়া টাকার অঙ্ক ব্যাঙ্কের মোট সম্পত্তির একটা বড় অংশের সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রিপোর্ট রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে জমা পড়ার প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই তারা নতুন ঋণ দেওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নতুন অ্যাকাউন্টও খোলা যাবে না বলে ২০১২ সালের গোড়ায় জানিয়ে দেওয়া হয়।
২০০৭-এ যখন ব্যাঙ্কের দৈন্যদশা ধরা পড়ে, তখন পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান ছিলেন জেলার ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা রেবতী ভট্টাচার্য। পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ২০০৯ সালেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জেলা সমবায় দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয় ব্যাঙ্কের দৈনন্দিন পরিচালনার দায়িত্ব। এমনকী নাবার্ডও রাজ্য সমবায় দফতরের কাছে তদন্তের দাবি জানায়। নাবার্ড আগেই এই ব্যাঙ্ককে বহু টাকা দিয়েছে। তারা ফের টাকা দেওয়া (রি-ফিনান্স) বন্ধ করেছে। অন্য দিকে, নতুন গ্রাহক সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হওয়ায় নগদ টাকার জোগানও কমে গিয়েছে। ফলে সমস্যায় পড়েছেন কৃষিজীবী মানুষ। এই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে যে সব সমবায় সমিতি ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ঋণদান সংক্রান্ত কাজকর্ম চলে, তারাও বিপাকে পড়েছে। বহু কর্মী সমবায়ও পড়েছে সমস্যায়। অ্যাকাউন্ট খুলতে না-পারায় তারাও ঋণ নিতে পারছে না।
রাজ্যে সরকার বদলের পরে ২০১১ সালের মাঝামাঝি নির্বাচনে পরিচালন সমিতির ক্ষমতা তৃণমূলের হাতে চলে আসে। পরিচালন সমিতির বর্তমান চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের সিউড়ি ২ ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম অভিযোগ, “বিভিন্ন খাতে যাঁদের নামে ঋণ দেওয়া হয়েছে, আসলে তাঁদের অনেকেরই কোনও অস্তিত্ব নেই। নাম-ঠিকানা সব ভুয়ো। ঋণ দেওয়ার নামে তৎকালীন চেয়ারম্যানের প্রশ্রয়ে কোটি-কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে।”
২০০৭ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণ আদায় করার নির্দেশ দিলেও তৎকালীন পরিচালন সমিতি কর্ণপাত করেনি বলেও অভিযোগ তাঁর। শুধু রামপুরহাট শাখাতেই অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৬ কোটি টাকা। অবিনাশপুর শাখায় প্রায় ১৯০০ জনের ঋণ অনাদায়ী, যাঁদের ৬০ শতাংশেরই অস্তিত্ব নেই। সমবায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হচ্ছে বলে দাবি জেলা সমবায় সমিতিসমূহের উপ-নিয়ামক দীপক ঘোষ। কয়েক জন কর্মী-আধিকারিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে পরিচালন সমিতি।
বোলপুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের মতে, এই পরিস্থিতিতে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা উচিত। তাঁর যুক্তি, “নতুন গ্রাহকেরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারলে এক দিকে যেমন টাকা লেনদেনের সুযোগ থাকত, তেমনই ঋণ আদায়ের সুবিধাও মিলত। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ ক্ষেত্রে নমনীয় না হলে গরিব মানুষ আবার টাকার জন্য মহাজনের কাছেই ছুটবেন।” সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও তাঁর দাবি। বহু চেষ্টা করেও রেবতীবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ব্যাঙ্কের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক অজয় রাম শুধু বলেন, “এটা ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলব না।”
(সহ-প্রতিবেদন: নুরুল আবসার)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.