সংবাদমাধ্যমকে অস্ত্র করে ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালানোর সাবেকি পাক-নীতি থেকে সরছেন না সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সরছেন না, সেই যুদ্ধের কৌশল হিসেবে কূটনৈতিক ডিগবাজি খাওয়া থেকেও।
কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের একটি দৈনিকে নওয়াজের মন্তব্যকে ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে এমনটাই মনে করছে সাউথ ব্লক। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে কোনও মুহূর্তে চতুর্থ লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে পাক পত্রিকায় প্রকাশিত নওয়াজের এই মন্তব্যের পরে সব মহলে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাউথ ব্লক। সুর চড়িয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বলেছেন, “বেঁচে থাকতে ভারতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান কিছুতেই জিতবে না।”
নওয়াজের মন্তব্যে বিতর্ক শুরু হওয়ায় কিছুটা পিছু হটে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রে তড়িঘড়ি জানানো হয়, ওই রিপোর্ট ঠিক নয়। নওয়াজ এমন কোনও মন্তব্য করেননি দাবি করে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে যে কোনও সমস্যা শান্তিপূর্ণ পথে মেটানো উচিত বলে মনে করেন নওয়াজ শরিফ।”
এর আগেও সংবাদমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ইসলামাবাদ যখন বিভিন্ন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেগুলিকে কার্যত অবজ্ঞাই করেছে বিদেশ মন্ত্রক। বলা হয়েছে, প্রকৃত কূটনৈতিক পন্থায় কোনও কথা না-হলে তাকে গ্রাহ্য করবে না নয়াদিল্লি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সুর চড়ানোর যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে বর্তমান সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামিকাল থেকে শুরু হচ্ছে সংসদীয় অধিবেশন। দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। এই সময় জাতীয়তাবাদী আবেগকে জাগিয়ে তোলাটা কংগ্রেসের রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের মধ্যে পড়ে। সুকৌশলে বিতর্ক তৈরি করে কাশ্মীরকে ফের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার যে চেষ্টা ইসলামাবাদ করছে, তাকেও প্রতিহত করতে চাইছে নয়াদিল্লি।
পাক সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে, গত কাল মুজফ্ফরাবাদে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আইনসভায় বাজেট অধিবেশনে নওয়াজ শরিফ মন্তব্য করেছেন, “কাশ্মীর অনেকটা দাহ্য বস্তুর মতো। যে কোনও মুহূর্তে জ্বলে উঠতে পারে, যা থেকে দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে চতুর্থ লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে।” পাশাপাশি শরিফের দাবি, তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বাধীন কাশ্মীর তাঁর জীবদ্দশাতেই তিনি দেখে যাবেন।
তবে শরিফের দফতরের দাবি, প্রধানমন্ত্রী এমন কোনও মন্তব্যই করেননি। ওই খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, ভ্রান্ত এবং অসৎ উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়েছে। তাদের আরও বক্তব্য, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আইনসভার আলোচনায় ভারত-পাক সম্পর্ক নিয়ে কথা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু কাশ্মীর প্রসঙ্গ আর একটা লড়াই বাধিয়ে দিতে পারে, এমন কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে কাশ্মীর নিয়ে পরমাণু যুদ্ধের কথা না বললেও ভারত সম্পর্কে যথেষ্ট কড়া অবস্থান যে নেওয়া হয়েছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিবৃতি জানিয়েছে, ওই বাজেট অধিবেশনে শরিফ বলেছেন, ভারতের জন্যই অস্ত্রের দৌড়ে নামতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারত বিভিন্ন সময়ে যা পদক্ষেপ করেছে, তাতে তিনি যে সন্তুষ্ট নন, তা-ও বুঝিয়েছেন শরিফ। |