বর্ষার লম্বা ইনিংসে সমস্যায় আলু চাষ
শীত দোরগোড়ায়। কিন্তু কালনা মহকুমায় এখনও শুরু হয়নি আলুর চাষ।
বর্ধমান জেলা পরিচিত ‘রাজ্যের শস্যভাণ্ডার’ হিসেবে। রাজ্যের যে দুটি জেলায় সবথেকে বেশি আলুর চাষ হয় সেগুলি হল হুগলি ও বর্ধমান। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর জেলায় প্রায় ৭২,২৮০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল। উৎপন্ন হয়েছিল প্রায় ২২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন আলু। কিন্তু আলু চাষে গত মরসুমের এই সাফল্য এ বছর ধরে রাখা নিয়ে ইতিমধ্যেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কালনা মহকুমা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত অক্টোবরের শুরুতেই বেশির ভাগ জমিতে আলু বীজ লাগানোর কাজ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু নভেম্বর পেরিয়ে যাওয়ার সময় হলেও এ বছর এখনও অনেক জমিতেই লাগানো হয়নি আলু বীজ।
সম্প্রতি, রবিশস্য চাষ নিয়ে মহকুমা কৃষি দফতরের উদ্যোগে হওয়া একটি বৈঠকে উঠে আসে এই তথ্য। বৈঠকে উপস্থিত জেলার পাঁচ ব্লকের কৃষি আধিকারিকেরা জানান, জেলার চাষযোগ্য জমির এক-দশমাংশ জমিতে এখনও আলু বীজ ফেলার কাজই শেষ হয়নি। কেন এই দেরি? কৃষিকর্তারা জানাচ্ছেন, আলুচাষে প্রয়োজন ঝুরঝুরে মাটি। কিন্তু চলতি বছরে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ চাষের জমিতেই জল জমে গিয়েছিল। ফলে ঝুরঝুরে মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-কৃষি অধিকর্তা নিলয় কর বলেন, “মহকুমায় আলুর চাষ প্রায় এক মাস পিছিয়ে গিয়েছে। আলুচাষের উপযোগী জমি তৈরি করে আলুবীজ লাগানো শেষ করতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যাবে বলে মনে হয়।”

কালনা ২ ব্লকে তৈরি হচ্ছে আলু চাষের জমি। —নিজস্ব চিত্র।
এর ফলে চলতি মরসুমে কত পরিমাণ আলু উৎপন্ন হবে সেটা নিয়ে কৃষিকর্তারা যথেষ্ট সন্দিহান। তাঁরা জানাচ্ছেন, এই চাষে সাধারণত ৯০ দিনের মতো সময় লাগে। আলুর ভাল ফলনের জন্য পর্যাপ্ত ঠান্ডা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই মরসুমের আলু চাষ গড়াতে পারে ফেব্রুয়ারির গোড়া পর্যন্ত। ফলে মেঘলা আকাশ, রাতের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, কুয়াশা প্রভৃতির কারণে আলুতে দেখা যেতে পারে নাবি ধসা রোগ। আগাম সতর্কতা হিসেবে কৃষিকর্তারা এই মরসুমে স্বাভাবিক শীত চলে যাওয়ার পরেই ছত্রাকনাশক কীটনাশক দিয়ে আলু গাছকে ভেজাবার পরামর্শ দিয়েছেন। মহকুমার অপর কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষের কথায়, “জানুয়ারির শেষ থেকেই সাধারণত ঠান্ডা কমতে শুরু করে। ডিসেম্বরে শুরু হওয়া চাষ জানুয়ারিতে মাত্র ৩০ দিন কিংবা তার একটু বেশি হবে। তাই এ বারের আলু চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।”
বিষয়টি নিয়ে সচেতন করে ইতিমধ্যেই জেলা কৃষি দফতর থেকে মহকুমা কৃষি দফতরগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। লিফলেট ছাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পরামর্শ। দু’পাতার এই লিফলেটে বলা হয়েছে, নাবি ধসা রোগের প্রথমে পাতার নীচের দিকে ধূসর দাগ দেখা যায়। পরে ওই দাগ বাদামি অথবা কালো রঙের হয়ে যায়। এর পর পাতার বৃন্ত ও অন্যান্য জায়গায় দেখা যায় এই দাগ। মাটির নীচে থাকা গাছের কন্দ অথবা আলুর গায়েও বাদামি বর্ণের ছোপ দেখা যায়। ধীরে ধীরে আলু পচতে শুরু করে।
কোথায় সমস্যা
চলতি বছরে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জমিতে জমেছে জল।
মিলছে না ঝুরঝুরে মাটি।
মেঘলা আকাশ, রাতে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, কুয়াশার ফলে হতে পারে নাবি ধসা রোগ।
দাওয়াই
সার্টিফায়েড বীজ সংগ্রহ।
রোগগ্রস্ত ও দাগি আলু বাদ দেওয়া।
জমিতে জল জমতে না দেওয়া।
ম্যানকোজেব, প্রপিনেব, মেটিরাম, ক্লোরোথ্যালোনিল প্রয়োগ।
রোগের উপসর্গ বলার সঙ্গে সঙ্গেই রোগ নিরাময়ের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ওই লিফলেটে। সেখানে যে উপায়গুলি বলা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল, সার্টিফায়েড বীজ সংগ্রহ, আলু কাটার সময় রোগগ্রস্ত ও দাগি আলু বাদ দেওয়া, জমিতে যাতে জল না জমে তার ব্যবস্থা করা, জমি পরিষ্কার করা, আক্রান্ত জমিতে নাইট্রোজেন জাতীয় সার ও অনুখাদ্য প্রয়োগ না করা, বেশি পরিমাণে জলসেচ না করা ও রোদের তীব্রতা অনুযায়ী ছত্রাক নাশক প্রয়োগ। প্রতিষেধক হিসেবে ম্যানকোজেব, প্রপিনেব, মেটিরাম, ক্লোরোথ্যালোনিল জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। কালনা মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপন কুমার মারিক বলেন, “নির্দেশিকাটি দ্রুত পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে প্রতিটি ব্লক অফিসে। সেখান থেকে পঞ্চায়েত ও কৃষি সমবায় সমিতির মাধ্যমে সেটি চাষিদের হাতে পৌঁছে যাওয়ার কথা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.