আট মাসে যেখানে খরচ হয়েছে ৩১৪ কোটি, সেখানে বাকি চার মাসে সেই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৯৯ কোটি।
বর্ধমান জেলায় একশো দিনের প্রকল্পে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে কাজে গতি আনার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু কী ভাবে কাজে গতি আনা হবে বা লক্ষ্যমাত্রা আদৌ ছোঁয়া যাবে কি না, সে নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। কারণ, যাঁদের তদারকিতে এই প্রকল্পের কাজ হয়, সেই নির্মাণ সহায়কই নেই জেলার বহু পঞ্চায়েতে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) হৃষিকেশ মুদির অবশ্য আশ্বাস, নির্মাণ সহায়ক নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
গত আট মাসে বর্ধমান জেলায় এই প্রকল্পে গড়ে কাজ দেওয়া হয়েছে ২৪ দিন। বছর শেষে সেখানে গড়ে ৬০ দিন কাজ দিতে চায় প্রশাসন। অর্থাৎ, আরও বেশি লোককে কাজ দিয়ে শ্রম-দিবস বাড়াতে হবে। ইতিমধ্যে ব্লকে ব্লকে গিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারা যে কোনও উপায়ে একশো দিনের কাজ জোরকদমে করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, মৌখিক ভাবে এমনও জানানো হয়েছে যে, যেখানে পঞ্চায়েত একশো দিনের কাজ করতে ‘ব্যর্থ’ সেই সমস্ত এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতি তদারকি করবে।
সম্প্রতি কেতুগ্রামে দু’টি ব্লকে বৈঠক করতে গিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানতে পারেন, সেখানকার ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮টিতেই নির্মাণ সহায়ক নেই। এর পরেই জেলা প্রশাসন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, জেলার ২৭৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে একটি বড় অংশেই নির্মাণ সহায়ক নেই। জেলার শিল্পাঞ্চল এলাকার তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় এই সমস্যা বেশি, জানা গিয়েছে জেলা পরিষদ সূত্রে। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু মেনে নেন, “অন্তত ৩০% পঞ্চায়েতে নির্মাণ সহায়ক নেই।”
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার যোগ্যতাসম্পন্নেরা নির্মাণ সহায়ক পদে নিযুক্ত হন। যে সব পঞ্চায়েতে নির্মাণ সহায়ক নেই, সেখানে একশো দিনের কাজ হবে কী করে? জেলা সভাধিপতি বলেন, “প্রতিটি পঞ্চায়েতকে প্রয়োজন মতো কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের এসটিপি (স্কিল টেকনিক্যাল পার্সন) হিসেবে নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। তাতে অনেকটা সমস্যা মিটবে বলে আমরা আশা করছি।” যদিও এই সব কর্মীদের ‘ভেটিং’ করা বা ‘মেজারমেন্ট বই’ (এম বি) লেখার ক্ষমতা নেই।
সভাধিপতি জানান, ব্লকের অবর সহ-বাস্তুকার (এসএই) বা দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্মাণ সহায়ক এ ব্যাপারে তাঁদের সাহায্য করবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। নির্মাণ সহায়কদের থেকে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজে এম বি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তা ঠিক না থাকলে ‘চুরির দায়ে’ ধরা পড়তে হতে পারে। এক নির্মাণ সহায়কের কথায়, “এসটিপি-রা সব কাজ করবে আর আমাদের এম বি করতে হবে! একটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।”
এ সব সত্ত্বেও জেলা প্রশাসন অবশ্য ১০০ দিনের কাজে তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব বলে মনে করছে। আট মাসে যেখানে ৩১৪ কোটি টাকা খরচ হলেও, শেষ চার মাসে ৩৯৯ কোটি টাকা খরচের জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। প্রতিটি পঞ্চায়েতকে নির্দিষ্ট ভাবে সামনের চার মাসে কত টাকা খরচ করতে হবে, তা বৈঠকে জানিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “শিল্পাঞ্চল এলাকার পঞ্চায়েতের চেয়ে গ্রামীণ এলাকার পঞ্চায়েতকে বেশি দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় কাজ করার সুযোগও বেশি আছে।”
১০০ দিনের কাজে রাজ্যের মধ্যে সেরা হওয়ার জন্য কী কী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে?
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গ্রাম ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মধ্যে সংযোগকারী রাস্তা ১০০ দিনের কাজে তৈরি করা হবে। এই পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ নতুন বলে প্রশাসনের দাবি। জেলায় এ বারই প্রথম প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা তৈরিতে ১০০ দিনের কাজ থেকে সাহায্য করা হবে। সেচ দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে ভাঙন রোধের কাজ করা হবে। ইতিমধ্যে জামালপুরে দামোদরের ভাঙন রোধে সাফল্য মিলেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। এ ছাড়া রানিগঞ্জ, আসানসোল, অন্ডাল এলাকায় খাদান বোজানো, চর মজে যাওয়া নদী ও সেচখাল সংস্কার ইত্যাদি কাজ করা হবে বলে পরিকল্পনা হয়েছে।
পরিকল্পনা কতটা ফল দিল, বোঝা যাবে মাস চারেক পরেই। |