বাজে না বাঁশি, দশ বছর শিকলে পা বাঁধা বিধানের
বাঁশিওয়ালা আজ শিকলবন্দি।
তাঁর বাঁশির সুরে মজত গোটা এলাকা। এখন আর বাঁশি বাজান না। কথাও বলতে পছন্দ করেন না। অনেক প্রশ্নের পর ভেসে আসে এক আধটা উত্তর। নিজের ইচ্ছেয় হাঁটতে পারেন না প্রায় দশ বছর। কারণ ‘পাগলামি’র জন্য তাঁর পা দুটো শিকলে বাঁধা।
বছর পঁয়তাল্লিশের ওই মানুষটির নাম বিধান বাদ্যকর। বাড়ি অন্ডালের কাজোড়া বাদ্যকর পাড়ায়। বছর দশেক আগে থেকে পায়ে শিকলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন তিনি। প্রতিবেশী বাবলু রুইদাস জানান, স্থানীয় ব্যান্ড পার্টির ওস্তাদ ছিলেন বিধানবাবু। তাঁর বাঁশির সুরে মুগ্ধ ছিল গোটা গ্রাম। “এখন সব ভাবলে অবাক লাগে”-- আক্ষেপ বাবলুবাবুর।
কী করে বদলে গেল সব কিছু?
বিধানবাবুর বড় দাদা দিনমজুর বাবুলাল বাদ্যকর বলেন, “আমরা চার ভাই। সেজো ভাই বিধানকে নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ ছিল না। তাঁর বাঁশি শুনতে অনেকেই তাঁকে নিজেদের এলাকায় অনুষ্ঠানে নিয়ে যেত। নিজের একটি ব্যান্ড পার্টিও ছিল ওঁর। কিন্তু হঠাৎ ১৬ বছর আগে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে সেজভাই বিধানকে নিয়ে তাঁদের গর্বের শেষ ছিল না। তাঁর বাঁশি শুনতে অনেকেই তাঁকে নিজেদের এলাকায় অনুষ্ঠানের জন্য নিয়ে যেত। নিজের একটি ব্যান্ড পার্টিও ছিল। হঠাৎ ১৬ বছর আগে বিধান অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে।”

বিধান বাদ্যকর। —নিজস্ব চিত্র।
বাবুলালবাবু জানান, দুর্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছিল বিধানের। কিন্তু চিকিৎসক জানান, বিধান মানসিক রোগের শিকার। ধারাবাহিক চিকিৎসা করালে সুস্থ হওয়া সম্ভব। অর্থের অভাবে তা আর হয়নি।
বুধবার দুপুরে বিধানবাবুর খোঁজে তাঁর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির পাশের ক্লাবের সামনে বসে আছেন তিনি। দু’টো পা বাঁধা লোহার শিকলে। ‘নাম কী?’ উত্তরে সঠিক জবাবই আসে। ‘কী করেন?’ উত্তর আসে এ বারও। “ঝুড়ি বুনি। বাঁশি বাজাই।” পুরনো দিনের কথা আউড়ে যান। তার পরে হঠাৎ চুপ।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রায় প্রতি দিনই বিধানবাবু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ির বাইরে আসেন। কয়েক ফুট দূরে ক্লাবের দাওয়ায় বসেন। নিজের মতো থাকেন। বাঁশি তাঁর সঙ্গ ছেড়েছে কবেই। সাধারণত কাউকে বিরক্ত করেন না।
পরিবারের সদস্যেরা জানান, রোগ ধরা পড়ার পরে বিধান প্রথম কয়েক বছর এদিক-ওদিক চলে যেত। বার বার তাঁকে খুঁজে আনা হত। বিধানের দাদার কথায়, “বাড়ি়র সামনেই বাজার, রেললাইন। দুর্ঘটনার ভয়ে ১০ বছর দু’পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছি। এতে ও খুব ধীরে ধীরে হাঁটতে পারলেও বেশি দূর যেতে পারবে না জেনে নিশ্চিন্তে আছি। তবে ওর অতীত মনে করলেই আমাদের চোখ জলে আসে। কিন্তু আমাদের আর কিছু করার নেই।
তবে এই তত্ত্ব মানতে রাজি নয় প্রশাসন। অন্ডালের বিডিও মানস পাণ্ডে বলেন, “কাউকে বেঁধে রাখা কখনও সমর্থনযোগ্য নয়। প্রয়োজনে আমরা ওঁকে হোমে পাঠাব।” ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ধীমান মণ্ডল বলেন, “বেঁধে রাখার ফলে ওই ব্যক্তির শরীরে অন্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.