মূল রাস্তার ভার কমানো, যানজট কাটানোর উদ্দেশ্যে বছর দশেক আগে শুরু হয়েছিল বিকল্প রাস্তা তৈরির কাজ। কিছুটা অংশে মাটি ফেলা, বোল্ডার ফেলার কাজ হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই। বাকি রাস্তা তৈরি না হওয়ায় রানিগঞ্জ শহরের মূল রাস্তা দিয়েই চলছে পণ্য বোঝাই ভারী লরি। ফলে প্রায়শয়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণহানি ঘটছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, প্রস্তাবিত রাস্তাটির কাজ অবিলম্বে শুরু না হলে আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।
২০০৩ সালে দু’নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া রানিগঞ্জের রানিসায়র মোড় থেকে বার্নস ক্লাব পর্যন্ত এই ছ’কিলোমিটার রাস্তাটি বানানোর উদ্যোগ হয়েছিল। কারণ রানিগঞ্জের মূল রাস্তা নেতাজি সুভাষ রোডটি ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের মর্যাদা পাওয়ার পরেই পণ্যবোঝাই দশ, কুড়ি চাকার ভারি লরিগুলি এই রাস্তা ধরে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্রে যাতায়াত শুরু করে। এর জেরে শুরু হয় নিত্যদিনের যানজট। অথচ শহরে ঢোকা-বেরোনো থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, স্টেশন, হাসপাতাল, বাজার সবই ওই রাস্তার আশপাশে। বেশ কিছু বসতিও রয়েছে।
|
রানিগঞ্জে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে ছোট-বড় গাড়ির এমন খেয়ালখুশি
মতো যাতায়াতে নাকাল পথচারী। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ। |
স্থানীয় বাসিন্দা তথা রানিগঞ্জ নাগরিক মঞ্চের সম্পাদক রামদুলাল বসুর অভিযোগ, রাস্তাটি এমনিতেই ব্যস্ত ও জনবহুল। তার উপর লরি যাতায়াত করায় নরকদশায় পৌঁছেছে। বেপরোয়া লরি চলাচলের জন্য প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে বলেও তাঁর দাবি। বছরের পর বছর কেটে গেলেও পরিস্থিতির বদল না হওয়ায় ক্ষুব্ধ একাধিক সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন এবং ব্যবসায়ী মহল। অবিলম্বে পণ্য বোঝাই ভারি লরি যাতায়াত বন্ধের দাবি তুলেছেন তাঁরা। নাহলে বিক্ষোভ, অবস্থান এমনকী বৃহত্তর আন্দোলন করার কথাও বলেছেন।
রানিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের কর্ণধার রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতানের দাবি, “আমরা জানতাম পণ্য বোঝাই লরি যাতায়াত করলেই ব্যপক যানজট হবে। এর জেরে শহরবাসীর নিত্য প্রয়োজনের জিনিসের ছোট লরি ঢুকতে পারবে না। এলাকার বাজার অর্থনীতি মার খাবে।” এই সব যুক্তি দেখিয়ে প্রথম থেকেই বিরোধীতা করেন তাঁরা। বিকল্প রাস্তা তৈরিরও প্রস্তাব দেন। বিক্ষোভ থামাতে আসরে নামেন এডিডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। রানিসায়র মোড় থেকে রানিগঞ্জের বার্নস ক্লাব পর্যন্ত রাস্তাটি তৈরিতে উদ্যোগী হন তিনি। |
এডিডিএ-র অর্থানুকুল্যে রাস্তাটি বানানো হবে বলেও জানান। ২০০৩ সালে বংশগোপালবাবুই ফিতে কেটে প্রস্তাবিত ওই রাস্তা তৈরির সূচনা করেন। কিন্তু সেই কাজ হয়নি এখনও। বাসিন্দারা জানান, রাস্তার কিছু অংশে মাটি ও বোল্ডার ফেলার কাজ করে দিনকয়েক গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু স্থায়ী কিছু হয়নি। ফলে আবার নেতাজি সুভাষ রোড দিয়েই যাতায়াত শুরু করেছে পণ্যবোঝাই লরিগুলি।
কিন্তু কাজের সূচনা হওয়ার পরেও এডিডিএ সময়মতো কাজ শেষ করতে পারল না কেন? বংশগোপালবাবুর দাবি, “আমরা শুরু করেছিলাম। বেশ কিছুদিন গাড়িও চলেছে। আমরা থাকলে এতোদিনে বানিয়েও দিতাম। কিন্তু যাঁরা এখন ক্ষমতায় তাঁদেরই উদ্যোগ করতে হবে।” বিষয়টি নিয়ে বর্তমান এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, তিনি নিজে দিন সাতেক আগে ওই রাস্তাটি পরিদর্শন করেছেন। সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে কথাও হয়েছে। নিখিলবাবু বলেন, “রাস্তা তৈরির কাগজপত্রে অনুমোদন দিয়েছি। দ্রুত কাজে হাত পড়বে।” |