বিধানসভার সদস্য নন, এমন কাউকে অধিকার ভঙ্গের আওতায় আনার এক্তিয়ার স্পিকারের আছে কি না, তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক এবং বর্তমানে কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষের দায়ের করা সেই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার। আবেদনকারী নিজেও পেশায় আইনজীবী।
একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বসে অরুণাভবাবু বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মর্যাদাহানিকর মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের সূত্রেই ওই আইনজীবী-রাজনীতিককে গত ২৭ অগস্ট ডেকে পাঠিয়ে বিধানসভা ভবনের দোতলার একটি ঘরে মার্শালের পাহারায় আড়াই ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। স্পিকারকে কটাক্ষ করে অরুণাভবাবু বিধানসভার অভিভাবকের (স্পিকার) এবং সেই সঙ্গে গোটা সভারই অধিকার ভঙ্গ করেছেন বলে রিপোর্ট দিয়েছিল অধিকার রক্ষা কমিটি।
ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই বিধানসভা ও স্পিকারের অধিকার ভঙ্গের জন্য কাউকে দায়ী করার ক্ষেত্রে স্পিকারের এক্তিয়ার কতটা, সেই প্রশ্ন তুলে এবং স্পিকারের এ ব্যাপারে অধিকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই অরুণাভবাবু উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন। এ দিন শুনানিতে তাঁর আইনজীবী সমরাদিত্য পাল জানান, সংবিধান প্রণয়নের সময় থেকেই স্পিকারের এক্তিয়ার এবং সেই সঙ্গে তাঁর অধিকার ভঙ্গের বিষয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছে। সংবিধান তৈরির সময় ঠিক হয়েছিল, ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে অধিকার ভঙ্গের বিষয়টি যে-ভাবে দেখা হয়, এখানেও স্পিকারের অধিকার ভঙ্গের জন্য কাউকে দায়ী করার ক্ষেত্রে স্পিকারের এক্তিয়ারের প্রসঙ্গটি সেই ভাবেই বিবেচিত হবে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও ভারতের আইনসভা কেন ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সের মতো চলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিতর্কের মধ্যেই তখন ঠিক হয়, পরে এই বিষয়টি বদলে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। সেই অনুসারে পরবর্তী কালে ‘হাউস অব কমন্স’ শব্দবন্ধটি তুলে দেওয়া হয় ঠিকই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্পিকারের এক্তিয়ার নিয়ে সংবিধানে নতুন কোনও নিয়মবিধি সংযোজনের ব্যবস্থা হয়নি। তাই অধিকার ভঙ্গের জন্য কাউকে দায়ী করার ক্ষেত্রে স্পিকারের এক্তিয়ার ঠিক কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে বলে জানান সমরাদিত্যবাবু।
বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এই মামলায় অংশগ্রহণকারী সব পক্ষকে হলফনামা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাতে বলেছেন। |