বছর যদি হয় ছয়ের নীচে, তবে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে মিলবে খিচুড়ি। প্রাথমিক, উচ্চপ্রাথমিকের স্কুল-পড়ুয়াদের রোজ মেলে মিড ডে মিলের ভাত। কিন্তু ১৪ থেকে ১৮ বছরের কিশোরী? তাদের বরাদ্দ সপ্তাহে এক দিন ছাতুর প্যাকেট, তা-ও বন্ধ দীর্ঘ পাঁচ মাস।
রাজ্যের ছয় জেলার কিশোরীরা সবলা প্রকল্পের পুষ্টিকর খাবার গত এপ্রিল মাস থেকে পাচ্ছেন না। কলকাতা-সহ রাজ্যের ছ’টি জেলার প্রায় সাত লক্ষ কিশোরী পুষ্টিকর খাবার থেকে পাঁচ মাস বঞ্চিত রয়েছেন। তার ফলে এই প্রকল্পের যারা অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, সেই দরিদ্র, স্কুলছুট কিশোরীরা উৎসাহ হারাচ্ছে এই প্রকল্পে। কোচবিহার জেলার অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের ডিপিও কাজী রুহাল আমিন বলেন, “কেবল আলোচনা শোনার জন্য মেয়েদের পাঠাতে রাজি হন না অনেক অভিভাবক। বলেন, কী পাবে ওখানে গিয়ে? কেন পাঠাব মেয়েকে?”
কেন মিলছে না খাবার? সমাজকল্যাণ দফতরের সচিব রোশনি সেন জানান, “ছয়টি জেলায় প্যাকেটের খাবার দিতে পারে, এমন কোনও সংস্থা পাওয়া যাচ্ছিল না। এখন আমরা সব জেলার জেলাশাসকদের জানিয়ে দিয়েছি, তাঁরা টেন্ডার ডেকে এক বা একাধিক সংস্থাকে খাবারের প্যাকেট সরবরাহের দায়িত্ব দিতে পারেন।” রোশনিদেবীর আশ্বাস, ডিসেম্বর মাসের শেষাশেষি নাগাদ খাবার সরবরাহ শুরু হবে। ২০১২ সালে অক্টোবর মাসে পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি জেলায় (পুরুলিয়া, নদিয়া, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহ এবং কলকাতা) ‘সবলা’ প্রকল্পের পাইলট প্রজেক্ট শুরু হয়। প্রথমে টেন্ডার ছাড়াই তিন মাসের জন্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার বরাত পায় ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ কনজিউমার ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড কোম্পানি (এনসিসিএফ)। আইএসআই সার্টিফায়েড এই কোম্পানি ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পযন্ত খাবার দেয়। কিন্তু বকেয়া প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা সমাজকল্যাণ দফতরের কাছে পায়নি এনসিসিএফ। টাকা না পাওয়ায় খাবার বন্ধ করে দেয়। এর পরেই অর্থ দফতর সবলার খাবার দেওয়ার জন্য ই-টেন্ডার ডাকতে নির্দেশ দেয়।
মহাকরণ সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থ দফতরের এই নির্দেশ পেয়ে সমাজকল্যাণ দফতর ১২০ কোটি টাকার টেন্ডার ডাকে। টেন্ডারের শর্ত ছিল, খাবারের আইএসআই সার্টিফিকেট থাকতে হবে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজস্থানের একটি সংস্থা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের পক্ষে রায় দিয়ে বলে, টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে পুষ্টিকর খাবার তাড়াতাড়ি দিতে। এর পর অর্থ দফতর থেকে নোট দিয়ে বলা হয়, জেলা শাসকদের মাধ্যমে খাবারের টেন্ডার করতে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এই নোট পাওয়ার পর বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন, হাইকোর্টের নির্দেশ মেনেই খাবার দেওয়া চালু করতে হবে। নতুন করে টেন্ডার করা হলে সময় নষ্ট হবে তাতে খাবার থেকে বঞ্চিত হবে গরিব মেয়েরা। টেন্ডার কমিটির সব সদস্য তার সপক্ষে সই করেন। সেই কপি অর্থ দফতরে পাঠানো হয়। কিন্তু এখনও কোনও সুরাহা হয়নি। কেন এই জট খুলছেনা? সরকারি সূত্রে খবর, মন্ত্রীর সঙ্গে আমলাদের একাংশের ব্যক্তিগত বিরোধের কারণেই বিষয়টি এত দিন আটকে রয়েছে। দ্রুত খাবার সরবরাহ শুরু না হলে বরাদ্দ টাকা ফেরত যাবে। |