পটকার আগুনে অগ্নিদগ্ধ বহুরূপী
গায়ে পাটের তৈরি পোশাক। মুখময় ভূষোকালি। হনুমান সেজে বিসর্জনের শোভাযাত্রার আগে লম্ফঝম্ফ করতে করতে যাচ্ছিলেন। মজা দেখতে পথের দু’পাশে ছোটদের সঙ্গে ভিড় করেছিলেন বড়রাও। হঠাৎ বাজির আগুনের স্ফুলিঙ্গ পড়ে বহুরূপীর পাটের পোশাকে। লাফালাফিতে তা ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর শহরে কালী প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় আগুনে পুড়ে গুরুতর জখন হন হনুমান রূপী বাসুদেব লোহার। বিষ্ণুপুর হাসপাতালে এখন তিনি বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিষ্ণুপুর শহরের আবালবৃদ্ধ মানুষ তাঁকে ‘হনুমান বাসু’ নামেই চেনেন। শহরের পুজো-পার্বন, এমনকী বিয়ে-মুখেভাতের মতো অনুষ্ঠানেও আনন্দ বিলিয়ে আসেন বাসুদেববাবু। বয়স ষাটে পৌঁছালেও তাঁর লম্ফঝম্পে এর ছাপ পড়েনি। সোমবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুরের যুগী পাড়ায় কালী বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ছিলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শোভাযাত্রায় পটকা ফাটানো হচ্ছিল। হঠাৎ পটকার আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছিটকে এসে পড়ে বহুরূপীর গায়ে। তখন তিনি লাফালাফিতে মেতে ছিলেন। ফলে হাওয়ায় পাটের মতো দাহ্যবস্তুতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হুঁশ হতে তিনি ভয়ে দৌড়োন। হয়তো ভেবেছিলেন আগুন নিভে যাবে। কিন্তু উল্টে তাঁর শরীর আগুনের ঝলসে যায়। শোভাযাত্রায় থাকা লোকজন আগুন নিভিয়ে যখন তাঁকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে নিয়ে যান, ততক্ষণে তাঁর অবস্থার বেশ অবনতি হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের সহকারী সুপার নিবেদিতা মিশ্র বলেন, “বাসুদেববাবুর বুক, পা ও হাত পুড়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশ অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তিনি। বিপদ অনেকটাই কাটলেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না।”
মঙ্গলবার হাসপাতালের বার্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, ভুষো কালি মাখা সেই মানুষটি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। পাশে স্ত্রী নিয়তি দেবী, বিয়াই অরুন মিদ্যা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বহু কষ্টে বাসুদেববাবু বলেন, “সবাইকে খুশি করতে ব্যস্ত থাকায়, কখন আমার পোশাকের উপরে আগুন এসে পড়েছে বুঝতে পারিনি। খেয়াল হতে ভয়ে দৌড় দিয়েছিলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই। বাঁচবো তো? বাঁচলেও আমার সংসার কী করে চলবে?” শিল্পীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। নিয়তি দেবী বললেন, “দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে আমাদের সংসার। বড় ছেলে জন মজুরি করে। কিন্তু তার আয় তো অনিয়মিত। স্বামীই সংসারটা টেনে নিয়ে যেতেন। এখন কী হবে?”
হাসপাতালে এই লোকশিল্পীকে দেখতে এসেছিলেন রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা বিষ্ণুপুরের কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিষ্ণুপুর শহরের গোপালপুরের বাসিন্দা বাসুদেববাবু সারা জীবন এই পেশাকে আঁকড়ে আছেন। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে যাতে তাঁকে সাহায্য করা হয়, আমরা সে চেষ্টা করব।” বিষ্ণুপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক আজিজুর রহমান বলেন, “ওই শিল্পীর পরিবারকে আবেদন জানাতে বলা হচ্ছে। আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.