|
|
|
|
হুঁশ ফেরাল দুর্ঘটনা, অটো দৌরাত্ম্য রুখতে ধরপাকড় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসল পুলিশ। অটো দৌরাত্ম্য রুখতে শুরু হল ধরপাকড়।
সোমবার খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার মোহনপুরের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে একটি যাত্রিবাহী অটো। মৃত্যু হয় ৪ জনের। বাড়তি যাত্রী তোলার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে। এরপরই মঙ্গলবার সকাল থেকে ধরপাকড় শুরু হয়। এ দিন মেদিনীপুরে মোট ১৩টি অটো আটক করা হয়েছে। কোনওটিতে বাড়তি যাত্রী তোলা হয়েছিল, কোনও অটোয় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না। খড়্গপুরেও এ দিন নজরদারি চলে।
ধরপাকড়ের জেরে এ দিন রাস্তায় অটো তুলনায় কম নেমেছে। ফলে, দিনভর দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। এলআইসি মোড়, কালেক্টরেট মোড়, কেরানিতলা, জজকোর্ট রোড-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় নিত্যযাত্রীদের ভিড় চোখে পড়ে। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, অটো পরিবহণ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েনি। কিছু অটো কম চলেছে। ফলে, কিছু সমস্যা হয়েছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অরনিকা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অন্য দিন অটোয় করেই বাড়ি ফিরি। মঙ্গলবার অটোর জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। আমার মতো বহু ছাত্রছাত্রীই সমস্যায় পড়েছেন।” |
 |
মেদিনীপুর পুলিশ সুপারের অফিস চত্বরে বাজেয়াপ্ত করা অটো। |
আজ, বুধবার অটো মালিকদের সঙ্গে পুলিশের এক বৈঠক হতে পারে। এই বৈঠকে অটো মালিকদের সতর্ক করে দেওয়া হবে। জানিয়ে দেওয়া হবে, নিয়ম না মেনে অটো চালালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় সাড়ে আটশো অটো চলাচল করে। বেশিরভাগই মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঘাটালের মতো শহরে। ঝাড়গ্রামেও অটো রয়েছে, তবে সংখ্যায় কম। আর মেদিনীপুর-খড়্গপুরে অটোর সংখ্যা বেড়েছে। নতুন নতুন রুটে অটো চালু হয়েছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অটো দৌরাত্ম্য।
অটোর ক্ষেত্রে কী কী অভিযোগ ওঠে?
১) প্রায় সব অটোই বাড়তি যাত্রী তোলে। বেশির ভাগ সময় ৮-১০ জন যাত্রী না হলে স্ট্যান্ড থেকে অটো ছাড়ে না।
২) অধিকাংশ অটো বেপোরোয়া ভাবে চলাচল করে। গতি নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
৩) অনেক সময় বেশ কিছু অটো রুট ভেঙে অর্থাৎ, ‘কাট- রুট’ দিয়ে চলে। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। এ সবের জেরে দুই শহরেই তীব্র যানজট তৈরি হয়। অটো দৌরাত্ম্য বন্ধে সহমতে পৌঁছচ্ছে শ্রমিক সংগঠনগুলোও। এআইটিইউসি নেতা বিপ্লব ভট্ট বলেন, “সোমবারের ঘটনাটি মর্মান্তিক। মঙ্গলবারই অটো চালকদের নিয়ে বৈঠক করেছি। জানিয়ে দিয়েছি, কোনও ভাবেই বাড়তি যাত্রী তোলা যাবে না। পুলিশও মাঝেমধ্যে জোরজুলুম করে। এটাও মেনে নেওয়া যায় না।” আইএনটিটিইউসি নেতা দেবাশিস চৌধুরীর বক্তব্য, “চালকের পাশে যদি দু’-তিনজন যাত্রীকে বসানো হয়, তাহলে চালক অটো চালাবেন কী করে? আমি খড়্গপুর শহরে যতগুলো অটো দুর্ঘটনা দেখেছি, তার অধিকাংশই বেপোরোয়া ভাবে অটো চালানোর ফলে ঘটেছে। কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি যাত্রী তোলার ফলে। আমাদের সকলকে আরও সতর্ক হতে হবে।” সিটু নেতা সারদা চক্রবর্তীর অভিযোগ, “নজরদারির অভাব রয়েছে বলেই বেপোরোয়া ভাবে অটো চলাচল করছে। সেই সঙ্গে অটো মালিকদের সুবিধে-অসুবিধের দিকটিও পুলিশের দেখা উচিত।” |
 |
দুর্ঘটনা-ধরপাকড় সত্ত্বেও বাড়তি যাত্রী নিয়ে ঝুঁকির যাত্রা চলছেই। |
কিন্তু সতর্ক করবে কে? দুর্ঘটনা? তাতেও যে হুঁশ ফেরে না! পুলিশের সহায়তায় পরিবহণ দফতর অটো চালকদের সতর্ক করতে পারে। তবে, দফতরের পরিকাঠামো বেহাল। কর্মীসংখ্যা কম। ফলে, সব সময় রাস্তায় নেমে অভিযান চালানো যায় না। জেলা পরিবহণ দফতরের সরকার মনোনীত সদস্য প্রদ্যোৎ ঘোষ বলেন, “কিছু সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেও নজরদারি চালানো হয়। ভবিষ্যতে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।” একই সঙ্গে তাঁর মত, “চালক এবং যাত্রী, কেউই দায় এড়াতে পারেন না। অধিকাংশ অটো চালক বাড়তি যাত্রী তোলেন। এরফলে, অনেক সময় অটো নিয়ন্ত্রণ হারায়। অন্য দিকে, যাত্রীদেরও বোঝা উচিত, যে অটোয় ৬-৭ জন উঠে গিয়েছেন, সেই অটোয় আর ওঠা উচিত নয়। তাতে বিপদের আশঙ্কা থাকে।”
সব পক্ষের হুঁশ কবে ফেরে, আদৌ ফেরে কিনা, সেটাই দেখার।
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
|
 |
|
|