সম্পাদকীয় ২...
এই সুযোগে
বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের দোহা পর্যায়টি যাহাতে একেবারে মুখ থুবড়াইয়া না পড়ে, তাহার জন্য শান্তি-চুক্তির ব্যবস্থা হইল। চুক্তির এক দিকে ভারত, অন্য দিকে উন্নত দুনিয়ার দেশগুলি। অতি প্রয়োজনীয় শান্তি-চুক্তি, সংশয় নাই। দোহা পর্যায়ের সর্বাধিক বিতর্কিত প্রশ্নগুলির একটি— কৃষিতে ভর্তুকির ঊর্ধ্বসীমা— প্রসঙ্গে আপাতত শান্তিকল্যাণের ব্যবস্থা হইল। উন্নত দেশগুলির দাবি, দেশের মোট কৃষি উৎপাদনের মূল্যের দশ শতাংশের অধিক কৃষি ভর্তুকি দেওয়া চলিবে না। ভারতসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশই এই দাবি মানিতে সম্মত নহে। উন্নত দুনিয়ার দাবি এবং ভারতের আপত্তি, দুই-ই এক সঙ্গে বজায় রাখিতে গেলে দোহা পর্যায়টির আর ভবিষ্যৎ থাকিত না। অতঃপর শান্তি-চুক্তি হইল— আগামী চার বৎসর কৃষি ভর্তুকির ঊর্ধ্বসীমা প্রযোজ্য হইবে না। উন্নত দেশগুলি যখন কৃষি ভর্তুকি কমাইবার কথা বলে, তাহা যে নিতান্তই অ্যাডাম স্মিথের সত্যরক্ষার্থে, এমন কথা বলিবার উপায় দুর্ভাগ্যক্রমে নাই। বিবিধ কারণে সেই দেশগুলিতে কৃষি ভারত অপেক্ষা অধিকতর উৎপাদনশীল— কৃষিতে সরাসরি ভর্তুকি সেই কারণগুলির একটি— অতএব, ভারতে কৃষিভর্তুকি কমিলে বাজারের নিয়মেই সেই দেশগুলির পণ্য ভারতের বাজার ছাইয়া ফেলিতে পারে। উদার বাণিজ্যের দৃষ্টিকোণ হইতে এই ভবিষ্যৎ আপত্তিকর নহে। কিন্তু স্বার্থের মাছটি নৈতিকতার নটে শাকে ঢাকিতে চাহিলে তাহাকে শিরোধার্য ভাবিবার কারণ নাই। অতএব, আলোচনার টেবিলে চাপ বজায় রাখিবার নৈতিক অধিকার ভারতের বিলক্ষণ আছে। দোহা পর্যায়ের বৈঠকে ভারত সেই কাজটি মন্দ পারে নাই। উল্লেখ্য, এই পর্যায়ের জন্মলগ্ন আর ভারতের অর্থনৈতিক বিশ্বশক্তি হইয়া উঠিবার প্রতিশ্রুতির সূচনা সমসাময়িক।
কিন্তু আলোচনার যুক্তি আর নীতিতে ফারাক না করিতে পারিলে মুশকিল। আলোচনার টেবিলে ভারত নিজের কব্জির জোর দেখাক, সময় নিক— কিন্তু সেই সময়টি আলস্যে নষ্ট করিয়া ফেলিলে মুশকিল। ভারতে বিপুল কৃষিভর্তুকি প্রয়োজন হয়, কারণ ভারতীয় কৃষির উৎপাদনশীলতা নিম্নস্তরের। বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের নীতি মানিয়া কৃষি ভর্তুকির পরিমাণ দশ শতাংশে বাঁধিয়া ফেলিলে ভারতীয় কৃষি যে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মুখে খড়কুটার সম্বলও পাইবে না, এই কথাটি অস্বীকার করিবার কোনও উপায় নাই। কাজেই, আলোচনার টেবিলে যে সময় পাওয়া গিয়াছে, তাহার যথার্থ ব্যবহার প্রয়োজন। কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়াইবার প্রথম ধাপ, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অনিবার্য ভবিষ্যৎটি মানিয়া লওয়া। স্বীকার করিয়া লওয়া, আজ না হউক কাল, খোলা বাজারে খেলিতেই হইবে। এই সত্যটি মরমে প্রবেশ করিলে সরকার কৃষি গবেষণায় মন দিতে পারে। যে পরিমাণ অর্থ রাসায়নিক সার এবং বিদ্যুতের ভর্তুকিতে খরচ করা হয়, তাহার অংশমাত্র কৃষি গবেষণায় পৌঁছায় না। তাহার ফল কতখানি বিষম হইতে পারে, পঞ্জাব তাহার উদাহরণ। যে রাজ্য দেশের সবুজ রাজধানী ছিল, তাহার মাটি এখন গরল উগরাইতেছে। সবুজ বিপ্লবের যে কুফল ভারতীয় কৃষিতে পড়িয়াছে, তাহা দূর করিবার পথ গবেষণাগার হইয়াই যায়। সেচেও নূতন উদ্যোগ নাই বলিলেই চলে। সর্বত্রই ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িতেছে। ইহা সুস্থায়ী উন্নয়নের পথ হইতে পারে না। তাহার জন্য দেশের কৃষিব্যবস্থা ঢালিয়া সাজা চাই। নচেৎ, ভর্তুকিনির্ভর কৃষি আজ না হউক কাল বাজারে ভূপতিত হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.