সম্পাদকীয় ১...
বৃহৎ বঙ্গের সন্ধানে
ংবাদটি বিস্ময়কর নহে। বস্তুত, অনিবার্য। ভারতের রাজধানীতে বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় স্তরে বাংলা ভাষার পঠনপাঠনের ধারা শুকাইয়া আসিতেছে। বঙ্গ আমার জননী আমার জাতীয় আবেগে না ভাসিয়া খোলা মনে বিচার করিলে মানিতে হইবে যে, ইহাই বাস্তব। খাস কলিকাতাতেই বহু বিদ্যালয়ে নব্য বাঙালি পড়ুয়ারা বাংলার পরিবর্তে পাঠ্য হিসাবে ইদানীং অন্য ভাষা গ্রহণ করে। সুতরাং দিল্লিতে বঙ্গভাষাপ্রেম বজায় থাকিলে তাহাই বিস্ময়কর হইত। কেন এমন হইতেছে তাহা বিচার করা জরুরি। সকলই নিয়মের অধীন। ভাষা-সংস্কৃতিও ব্যতিক্রম নহে। বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি বিশেষ কারণে একদা প্রাগ্রসর হইয়াছিল, বিশেষ কারণেই আবার তাহার পশ্চাদ্যাত্রা। স্বাধীনতার পূর্বে ‘বৃহৎ বঙ্গ’ বলিয়া একটি কথা চালু হইয়াছিল। সেই আমলে ইংরেজি ভাষা ভাল ভাবে জানিবার সুবাদে বঙ্গদেশের বাহিরে নানা স্থানে বঙ্গজ বাবুরা প্রশাসনিক কাজকর্ম করিতে যাইতেন। তাঁহাদের অনুবর্তী হইয়া আরও কিছু বাঙালির দেশান্তর ঘটিত, সমৃদ্ধ বাঙালিটোলা গড়িয়া উঠিত, বঙ্গসংস্কৃতির চর্চা জমিত। অসম, ওড়িশা, বিহার, লখনউ, বেনারস, দিল্লি, ইলাহাবাদ— নানা স্থানে বঙ্গসংস্কৃতির বিস্তার সম্ভব হইয়াছিল। বঙ্গের বাহিরের এই ‘বঙ্গ’ই সে কালের বৃহৎ বঙ্গ।
জাতি হিসাবে বঙ্গজরা শিক্ষা-দীক্ষা-বিত্ত অধিকার করিয়াছিল বলিয়াই বঙ্গভাষা-সংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়াছিল। অপর ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ কালে-দিনে অগ্রসর হইয়াছেন, দেশ স্বাধীন হইয়াছে, সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বাঙালি কম পড়িয়াছে, হিন্দি ভাষা আগাইয়াছে, সুতরাং একদা যাহারা ‘দাদাগিরি’ ফলাইত সেই বাঙালিদের হটাইয়া দিবার প্রচেষ্টা শুরু হইয়াছে। বাঙালি হটিয়াছে। ইহা বাহিরের মার। ভিতরের মারও রহিয়াছে। ‘সাম্যবাদী’ বাঙালি সরকার শিক্ষা হইতে ইংরাজিকে ছাঁটকাট করিয়াছে, সকলকে শিক্ষা দিতে হবে বলিয়া তলাকে যোগ্য না করিয়া উপরকে টানিয়া নামাইয়াছে। আবার, সাম্যবাদী বিক্ষোভ ঘেরাও ধর্মঘটের তাড়নায় অর্থনীতিতে মন্দা লাগিয়াছে। ইংরেজি-হারা, বিত্তবিহীন বাঙালি ক্রমশ ভিতর হইতে আত্মপ্রত্যয় হারাইয়াছে। একদা নাকি বেঙ্গল আগে যাহা ভাবিত, বাকি দেশ তাহা পরে ভাবিত। ক্রমে দেখা গেল, অন্যরা আগে ভাবিতেছে, বাঙালি তাহা অনুসরণেও অপারগ বা অনিচ্ছুক। নিজের ভাষা-সংস্কৃতি বিসর্জন দিয়া যে ভাষায় কর্ম ও বিত্ত লাভ করা যায় তাহা শিখিতেছে। দিল্লিতে বাংলা শিক্ষার দুর্দশা, কলিকাতায় বাংলা ভাষার অমর্যাদা ইহারই ফল। কাঁদিয়া লাভ নাই, ইহা স্বীকার করিতে হইবে। কিন্তু স্বীকৃতিতেই থামিলে চলিবে না। জীবনের ন্যায় ভাষার ক্ষেত্রেও ওঠা-পড়া থাকে। প্রশ্ন হইল, বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির উত্থান কী ভাবে সম্ভব? ইহা বড় প্রশ্ন। দীর্ঘমেয়াদি মোকাবিলার প্রশ্ন। ভাষা-সংস্কৃতির ইমারতটি নূতন করিয়া গড়িয়া তুলিতে গেলে শিক্ষাদীক্ষায় যে বাঙালি এখনও অগ্রসর তাঁহাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উনিশ শতকে ইংরেজি-শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত বাঙালি ভাষা নির্মাণে যোগ দিয়াছিলেন বলিয়াই বঙ্গসংস্কৃতি আগাইয়াছিল। দাশু রায়ের পাঁচালী, ঈশ্বর গুপ্তের পদ্য, কবিগান ছাপাইয়া মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের কলমে ভাষার ধার ও ভার বৃদ্ধি পাইয়াছিল। এখন শিক্ষিত বাঙালি বিদেশে, দেশজ বাঙালির শিক্ষিত অংশের ছেলেমেয়েরা সুখ্যাত ইংলিশ মিডিয়ামে। অবশিষ্ট নিরুপায় বাঙালিদের দিয়া ভাষাকে সমৃদ্ধ করিতে হইবে, এই চিন্তা ভুল। শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিতদের বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহান্বিত করা আবশ্যক। তাঁহাদের পরবাসী বা অনাত্মীয় বলিয়া দূরে না ঠেলিয়া কাছে টানিতে হইবে। সাংস্কৃতিক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিষ্ঠিত বাঙালিদের উপভোগের মতো সামগ্রী নির্মাণ করিতে হইবে। ইহা হাহাকারের সময় নহে, পুনরধিকারের লগ্ন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.