|
|
|
|
দুর্গ রক্ষায় কেন্দ্রের সাহায্য চাইল প্রশাসন |
উত্তম সাহা • শিলচর |
মোগল না ব্রিটিশ আমলে তৈরি করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর দুর্গ, সেই বিতর্ক দীর্ঘ দিনের। জনজাতিদের আক্রমণ ঠেকাতে না কি সীমান্তে নজরদারির জন্য তৈরি হয়েছিল এই দুর্গ—এ প্রশ্নও অমীমাংসিত। ইউরোপীয় নির্মাণশৈলীর দূর্গটি ইদানীংকালে পর্যটক টানার বদলে হয়ে উঠেছে জুয়াড়িদের নিরাপদ আশ্রয়।
তবে দেরিতে হলেও দুগের্র্র দিকে নজর এ বার নজর পড়েছে প্রশাসনের। জেলাশাসক সঞ্জীব গোঁহাই বরুয়া এই দূর্গের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কথা বলেছেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার (এএসআই) সঙ্গে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জেলাশাসক জানান। এ মাসেই এএসআইয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল বদরপুরে যাবেন বলে তারা সঞ্জীববাবুকে জানিয়েছে। জেলাশাসকের কথায়, সরকারি উদ্যোগে দু’একবার এর সংস্কার হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগেও ক’বছর আগে দুগর্র্টিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু নিয়মিত নজরদারি নেই বলে ফের পরিত্যক্ত-প্রায় চেহারা নিয়েছে বদরপুর দুগর্র্। তাঁর মতে, এএসআই দায়িত্ব নিলে এ সব সমস্যা মিটে যাবে। তারা যদি দুর্গটির দায়িত্ব না-ও নেয়, তাহলেও যাতে দূর্গটিকে রক্ষা করা যায় তার চেষ্টা চালাচ্ছেন জেলাশাসক। সঞ্জীববাবু জানান, “স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে। তাঁরা একজন মালি দিতে পারেন। তিনি সময়মতো দুর্গে আলো জ্বালাবেন, নেভাবেন। পাশাপাশি, দুর্গের যাবতীয় দেখভাল করবেন। অর্থের সংস্থান হলে বদরপুর টাউন কমিটিও এর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিতে রাজি বলে জানিয়েছেন টাউন কমিটির চেয়ারপার্সন বাবলি দাস। |
|
পরিত্যক্ত বদরপুর দুর্গ। অনিন্দ্য ভট্টাচার্যের তোলা ছবি। |
করিমগঞ্জ জেলার একেবারে শেষ প্রান্তে দুর্গটি কে, কেন তৈরি করেছিলেন—এ নিয়ে বহু কথা প্রচলিত থাকলেও দুর্গ গাত্রেই বহু প্রশ্নের জবাব রয়েছে। কিন্তু এখন সে লেখা আর পড়া যায় না। তবে তা যে এক সময় পড়া যেত, তার উল্লেখ রয়েছে ‘কাছারের ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থের অমলেন্দু ভট্টাচার্য ও সঞ্জীব দেবলস্কর সম্পাদিত সংস্করণে। বইটির ভূমিকায় লেখা হয়েছে, শ্রীহট্ট-কাছার অনুসন্ধান সমিতির সম্পাদক জগন্নাথ দেবের হাতের লেখা ‘বদরপুর শেলখানার প্রাচীরলিপি’ তাঁদের কাছে রয়েছে। প্রাচীরলিপিটি এই রকম:
‘ইংরেজি ১৮০১ সাল, সন ১২০৭ সাল বাঙ্গালা
পরগণে চাপঘাট, মুকাম বদরপুর আমলে
শ্রীযুক্ত মেস্তর জর্জ রাপল্ট সাব গবনর পল্টন
শ্রীযুক্ত মেস্তর জান ইংলিস সাব বরক্ত তদ্বিরান
নিমাএ রামদাস ছরবরা শ্রী নিত্যানন্দ
নীলমণি ভদ্র দত্ররায় সেলখানা বানায়ে শ্রী ধনিরাম
রাজমেস্থরি ইতি।’
অমলেন্দুবাবুর কথায়, আসলে তৎকালীন সিলেট জেলার শেষ সীমায় এই দুর্গটি একটি নজরদারি সীমান্ত চৌকি রূপে নির্মিত হয়েছিল। এর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালে বরাক নদীর বাঁক স্পষ্ট দেখা যায়। ওই জায়গাটাই ছিল ব্রিটিশ ও সংলগ্ন রাজন্যশাসিত এলাকার জলসীমা। ফলে জলপথে শত্রুপক্ষ আসছে কি না, সেখানে দাঁড়িয়েই লক্ষ রাখত ব্রিটিশ সৈন্যরা। গোলাবারুদও মজুদ রাখা হত এতে। তাই জগন্নাথবাবু একে শেলখানা বলে উল্লেখ করছেন। প্রাচীরলিপির কথার উল্লেখ রয়েছে রাজমোহন নাথের ‘অ্যান্টিকুইটিস অব কাছার’ গ্রন্থেও। যদিও বদরপুর নবীনচন্দ্র কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শিবতপন বসুর দাবি, ব্রিটিশ আমলে এর সংস্কার হয়েছিল মাত্র। আসলে এটি মোগল শাসনকালে নির্মিত। জনজাতিদের হাত থেকে সুরক্ষার জন্যই দুর্গটি তৈরি করা হয়েছিল। জেলাশাসক সঞ্জীববাবু বলেন, এএসআই দুর্গাটির দায়িত্ব নিলে শুধু দেখভালই নয়, এই সব বিতর্কেরও অবসান ঘটবে। সব প্রশ্নের সঠিক উত্তরই তারা খুঁজে বের করবে। |
|
|
|
|
|