অবশেষে জেল থেকে মুক্তি, দেশে ফিরছেন হুসেইনি
তিনি সর্বজিৎ সিংহের নাম শুনেছেন। কখনও কখনও ভাবতেন, তাঁর অবস্থাও কি সর্বজিতের মতোই হতে চলেছে? উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই, গুপ্তচর সন্দেহে অসমের জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন ১৫টি বছর। যে আইনের ফাঁদে আটকে তাঁর এমন দুর্দশা, কারাবাসের সময় সেই আইন বিষয়ে পড়াশোনা চালিয়ে স্নাতকও হয়ে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের সৈয়দ ফসিউল্লাহ হুসেইনি। অবশেষে মিলল মুক্তি। আক্ষরিক অর্থেই লঘুপাপে প্রায় ‘যাবজ্জীবন’-এর মতো গুরুদণ্ড কাটিয়ে আজ দিল্লি পৌঁছলেন হুসেইনি। ৬ ডিসেম্বর ওয়াঘা সীমান্ত পার হয়ে তিনি পা দেবেন স্বভূমিতে।
১৯৯৯ সালের ৭ অগস্ট, অসম পুলিশ ‘সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা’ করার অভিযোগে হুসেইনি, জাভেদ ওয়াকার ও মৌলানা হাফিজ নামে তিন ব্যক্তিকে পল্টনবাজার থেকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে প্রথম দু’জন পাক নাগরিক। হাফিজ কাশ্মীরের বাসিন্দা। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি, ১২০এ, ১২২, ১৫৩এ ও ৩৪ ধারায় এবং বিদেশী আইনের ১৪ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের করে। পুলিশের দাবি ছিল আদতে করাচির বাসিন্দা হুসেইনি আইএসআইয়ের চর। অসমে অশান্তি ছড়াতেই তাঁর আসা। এই সংক্রান্ত মামলায় পরে আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়। হুসেইনি জানান, ঘড়ির ব্যবসা করতে তিনি বাংলাদেশ এসেছিলেন। সেখান থেকেই ঢুকে পড়েন অসমে।
জাভেদকে গত বছর এক বিস্ফোরক উদ্ধার সংক্রান্ত মামলায় পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিদের কামরূপ দায়রা আদালত ২০০৮ সালেই মুক্তি দেয়। তাঁদের কারও বিরুদ্ধেই পুলিশ পর্যাপ্ত প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি। তবে বেআইনি ভাবে ভারতে ঢোকার জন্য আদালত হুসেইনিকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। যে মেয়াদ তিনি ইতিমধ্যেই কাটিয়ে ফেলেছিলেন।
পাকিস্তানের উদ্দেশে রওনা হলেন মুক্ত হুসেইনি। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
কিন্তু দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অসম পুলিশ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। নগাঁও, পশ্চিমবঙ্গ, চতিয়া, পল্টনবাজার, গোয়ালপাড়া, লতাশিল থানার বিভিন্ন মামলায় হুসেইনির নাম জড়ানো হয়। গোয়ালপাড়ার দায়রা আদালত তাঁকে যে দিন সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন, সেদিনই ফের তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। অপরাধ: বোমা বিস্ফোরণ, এনডিএফবি, আলফার সঙ্গে যোগাযোগ। শেষ অবধি কোনও অভিযোগই প্রমাণ হয়নি। ইতিমধ্যে জেলের ভিতরেই পড়ে, পরীক্ষা দিয়ে হুসেইনি আইনের স্নাতক হয়েছেন।
চলতি বছরের ৪ জুলাই সিজেএম আদালত হুসেইনিকে তাঁর দেশে পাঠাবার ব্যাপারে পুলিশ ও জেলাশাসককে নির্দেশ দেয়। ১৭ মে হাইকোর্টও প্রমাণাভাবে হুসেইনিকে মুক্তি দেয়। আদালত ৩০ দিনের মধ্যে হুসেইনিকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠাবার নির্দেশ দেয়। এর পরেও হুসেইনি মুক্তি পাননি। হুসেইনির আইনজীবী রফিকুল ইসলাম ঘটনাটি নিয়ে ফের হাইকোর্টে যান। আদালত ফের হুসেইনিকে অবিলম্বে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
কিন্তু প্রশাসন জানায়, আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার কারনেই হুসেইনিকে ফেরত পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে। অক্টোবরে ফের হুসেইনির আইনজীবী হাইকোর্টে ‘হেবিয়াস করপাস’ দাখিল করেন। ২০ নভেম্বর হাইকোর্ট এই বিষয়ে ভারতের সলিসিটার জেনারেলের কাছে জবাবদিহি চায়।
অবশেষে গত কাল ১৫ বছর পরে মুক্তি পেয়েছেন হুসেইনি। অসম পুলিশের ৭ জনের একটি দল হুসেইনিকে নিয়ে আজ দিল্লি পৌঁছেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে ৬ ডিসেম্বর ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ৫৩ বছরের হুসেইনি পাকিস্তানে ফিরবেন। মুক্তির পরে হুসেইনি জানান, করাচির কাছে একটি গ্রামে তিনি জমি কিনেছিলেন। সেখানেই বাবা দোতলা বাড়ি বানান। ইচ্ছা ছিল বাবা-মার সঙ্গে বিদেশি স্ত্রীকে নিয়ে থাকবেন। কিন্তু তাঁর বাবাও দু’বছর আগে মারা গিয়েছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.