ভোরের আলো সবে ফুটছে তখন। দিন শুরু হচ্ছে মাছের বাজারে। একটু একটু করে খুলছে আড়ত। ট্রাক থেকে মাছ নামানো শুরু হয়েছে সদ্য। তার মধ্যেই আচমকা দুই যুবক এসে মাছ বার করে দিতে বলে। দিতে না চাইলে বন্দুক দেখিয়ে কেড়ে নেয়। এর পরে মাছবাজারের বাইরে উড়ালপুলের নীচে এসে ফের মালবাহকদের কাছে মাছ চায় তারা। এ বার বাধা পেলে এক যুবক সটান গুলি চালিয়ে দেয় এক মালবাহকের পা লক্ষ করে। তার পরে তাড়া খেয়ে পালিয়েও যায় চত্বর ছেড়ে। পনেরো-কুড়ি মিনিট ধরে এই গোটা ঘটনার মধ্যে কোথাও পুলিশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবার ভোরে শিয়ালদহের বৈঠকখানা বাজারের এই ঘটনা এক দিকে যেমন ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার হাল বেআব্রু করে দিয়েছে, তেমনই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে হতাহতের কোনও খবর নেই। ঘটনাস্থল থেকে একটি কার্তুজের খোল উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে এসেছিল। তবে সেটির নম্বর পায়নি পুলিশ। আতঙ্কিত মাছ ব্যবসায়ীরা এ দিন দুপুরে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে মুচিপাড়া থানায় স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
কী ঘটেছে মঙ্গলবার ভোরে? |
বৈঠকখানা বাজারে এখানেই হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র। |
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ একটি মোটরবাইকে দুই যুবক বৈঠকখানা মাছবাজারের শিয়ালদহ উড়ালপুলের দিকের গেটের বাইরে আসে। সেখানে তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন ঝলক সাউ নামে এক মালবাহক। ওই দুই যুবক ঝলকের কাছে জানতে চায়, মাছ কোথায় পাওয়া যাবে। ঝলক তাদের নিয়ে যান মাছবাজারের ভিতরে। সেখানে তখন মাছ-ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্র গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। ওই দুই যুবক মনোজ নামের মাছবাজারের এক কর্মীর কাছে মাছ চায়। মনোজ জানান, মালিক এখনও আসেননি। তাই মাছ দেওয়া যাবে না। এর পরেই এক যুবক বন্দুক বার করে মনোজের দিকে তাক করে। চারপাশে অন্ধকার থাকায় ঘটনাটি অন্য কারও নজরে আসেনি।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বৈঠকখানা বাজার ফিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির এক সদস্য খোকন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মনোজের কাছে মাছ না পেয়ে ওই দুই যুবক মাছের আড়তদার সঞ্জয় সাউয়ের কাছে মাছ চায়। সঞ্জয়ও মাছ দিতে অস্বীকার করলে ওই যুবক ফের কোমর থেকে বন্দুক বার করে সঞ্জয়ের গায়ে ঠেকায়। ভয়ে দশ কেজি ওজনের দু’টি মাছ তাদের দিয়ে দেন সঞ্জয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই মাছ নিয়ে বৈঠকখানা বাজার থেকে বেরিয়ে ওই যুবকেরা উড়ালপুলের নীচে আসে। সেখানে তখন মাছ নামানোর কাজ চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই যুবকেরা ঝলককে সেখানে দেখে ফের তাঁর কাছে মাছ চায়। ঝলক প্রতিবাদ করলে তাঁর পা লক্ষ করে গুলি চালায় এক দুষ্কৃতী। গুলির শব্দে আশপাশের মালবাহক ও মাছ-ব্যবসায়ীরা ছুটে এলে মোটরবাইকে চেপে এম জি রোডের দিকে পালিয়ে যায় ওই যুবকেরা।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা বাজারে এসে প্রথমে জানতে চেয়েছিল, ওই এলাকা থেকে কারা তোলা নেয়। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, এলাকায় নিজেদের প্রভাব বাড়াতেই এ দিন ওই বাজারে এসেছিল ওই যুবকেরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন গোটা ঘটনার সময়ে পুলিশের দেখা মেলেনি। পুলিশ সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, কোলে মার্কেট, বৈঠকখানা বাজার এবং শিশির মার্কেটে পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়। ঘটনার সময়েও টহলদার পুলিশ ছিল।
কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ জানান, ওই এলাকায় দু’টি মোটরবাইকে পুলিশ সারা রাত টহল দেয়। এ দিনও খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। দুই দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিসি (সেন্ট্রাল)। |