পরাগই দেন দেড় কোটি, কবুল পিনাকেশের
দু’জনেই জমি-বাড়ির কারবারি। দু’জনেই শর্ট স্ট্রিটের হামলায় অভিযুক্ত। তাঁদের মধ্যে পরাগ মজমুদারই জমির দখল নিতে পিনাকেশ দত্তকে দেড় কোটি টাকা দিয়েছিলেন। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিতে পিনাকেশ এ কথা স্বীকার করছেন বলে মঙ্গলবার ব্যাঙ্কশাল আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জানালেন সরকারি আইনজীবী।
১১ নভেম্বর ভোরে ৯এ শর্ট স্ট্রিটে দখলদারদের হামলায় গুলি চললে দু’জন মারা যান। তার দু’মাস আগে ওই বাড়িতে আরও একটি হামলা ও ডাকাতি হয়েছিল বলে গোয়েন্দারা আগেই জানান আদালতে। সেই ডাকাতিতেও পরাগ অভিযুক্ত। মঙ্গলবার সেই ডাকাতির মামলায় পরাগকে পুলিশি হাজতে রাখার আবেদন জানান সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস। তিনি বলেন, পরাগ ডাকাতিতে লুঠ হওয়া রিভলভার উদ্ধারে সাহায্য করবেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। সেই জন্যও তাঁকে পুলিশি হাজতে নেওয়া দরকার। পরাগকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ব্যাঙ্কশাল আদালতে অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (২) বিশ্বনাথ প্রামাণিক। এ দিন শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডে ধৃত অন্যতম অভিযুক্ত রাজেশ দামানিকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।
পরাগের বিরুদ্ধে আরও একটি সম্পত্তি দখলের জন্য চক্রান্ত নিয়েও তদন্ত করছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের দাবি, ১০৪ নম্বর সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে একটি সম্পত্তি দখলের জন্য বেআইনি ভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন পরাগ। ঠিক কী হয়েছিল সেখানে?
পুলিশ জানায়, কাগজপত্র জমা দিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়েছিলেন ওই সম্পত্তির হেফাজতকারী কল্পনা মজুমদার। মিলেছিল বিদ্যুতের বিলও। কিন্তু দু’মাস যেতে না-যেতেই হঠাৎই বিদ্যুৎ মিটারের মালিকানা বদলে যায়। কল্পনাদেবীর বদলে ২০১১ সালের মার্চে বিল আসে পরাগের নামে। কল্পনাদেবী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে সিইএসসি-র কাছে নিজেকে ওই জমির মালিক বলে দাবি করেছেন পরাগ। নিজের নামে জমির দলিল, মিউটেশন বা নামপত্তনের কাগজ জমা দেন তিনি। আবেদনপত্রেও সই করেন নিজে। তার পরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কল্পনাদেবী। ওই মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত।
শিলিগুড়ির বাসিন্দা কল্পনাদেবী জানান, ১০৪ সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে (মেঘনাদ সাহা রোড) সাউ পরিবারের ১৫ কাঠা জমি ছিল। সেটি কেনার জন্য তিনি ২০ লক্ষ টাকা অগ্রিম দেন। জমিটির সরকারি দাম এক কোটি ২০ লক্ষ টাকা। খোঁজখবর করে জানা যায়, জমিটি নিয়ে মামলা চলছে। তার পরে কল্পনাদেবী সাউ পরিবারের শরিকদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। তাতে বলা হয়, সাউ পরিবার মামলায় জিতে জমির দখল পেলে মামলার খরচ বাদ দিয়ে কল্পনাদেবী বাকি টাকা মিটিয়ে দেবেন। ওই মহিলার দাবি, আইন মোতাবেক তিনি সেই চুক্তির প্রবেটের ব্যবস্থা করেন। তার পরে সাউ পরিবারের কাছ থেকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ নিয়ে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করেন ওই জমিতে।
কল্পনাদেবী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, পরাগ লোক পাঠিয়ে তাঁর রক্ষীদের মারধর করেন। থানায় অভিযোগ করে প্রতিকার না-হওয়ায় লালবাজারের কর্তাদের দ্বারস্থ হন কল্পনাদেবী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১০ সালের মে মাসে পরাগকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মহিলার অভিযোগ, কিছু দিন হাজতে কাটানোর পরে বেরিয়ে এসেই পরাগ ফের জমি দখলের চেষ্টা শুরু করেন। ২০১১-র জানুয়ারি থেকে ওই জমির ঠিকানায় মহিলার নামে বিদ্যুতের বিল আসছিল। কিন্তু মার্চে বিল আসে পরাগের নামে। মহিলা খোঁজখবর নিতে সিইএসসি-র অফিসে যান। সিইএসসি জানায়, পরাগ নিজের নামে বিল করার জন্য নথি জমা দিয়েছেন। ফের পুলিশ ও আদালতের দ্বারস্থ হন কল্পনাদেবী। আদালত কল্পনাদেবীর নামে বিল করার নির্দেশ দেয় সিইএসসি-কে।
কিন্তু ওই জমির নামপত্তন পরাগের নামে হল কী ভাবে?
তদন্তকারীদের সূত্র জানাচ্ছে, ওই জমির মালিকানা স্বত্ব নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন পরাগ ২০০৫ সালে ওই জমির মালিক পক্ষের দুই শরিকের কাছ থেকে সই করে একটি দলিল তৈরি করেন। তার ভিত্তিতেই নামপত্তনের জন্য আবেদন করেন পুরসভায়। পুলিশের দাবি, প্রভাব খাটিয়ে পুরসভা থেকে নামপত্তন করিয়েছিলেন পরাগ। ওই জমিতে একটি বাড়ির নকশা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন তিনি। কল্পনাদেবীর মামলার ভিত্তিতে নকশা অনুমোদনে স্থগিতাদেশ জারি করে হাইকোর্ট। এক পুরকর্তা বলেন, “মামলার বিষয়টি লুকিয়ে দলিলের ভিত্তিতে মিউটেশনের আবেদন করেছিলেন পরাগ। পরে কল্পনাদেবী জমির নথি পুরসভায় দাখিল করায় পরাগের দাবি বাতিল হয়ে যায়।”
শর্ট স্ট্রিট কাণ্ডের এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ওই জমির নথি জাল করার পিছনে পরাগের অভিসন্ধি ছিল। ওই জমিতে বহুতল গড়ার নকশা অনুমোদন করিয়ে তা দেখিয়ে বাজার থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা তুলতে চেয়েছিলেন পরাগ। তাই প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি জমির মালিকানা বদলের ছক কষেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.