প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলিতে বেড়া, খেলার মাঠ গড়ে তোলার কাজকেও এ বার ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের আওতায় আনতে চলেছেন বোলপুর ব্লক প্রশাসন। মঙ্গলবার ব্লকের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ কথা জানালেন বোলপুরের বিডিও শমীক পানিগ্রাহী। তিনি বলেন, “এখানে এমন বহু প্রাথমিক স্কুল আছে, যাদের কোনও বেড়া নেই। অবসরে কচিকাঁচারা যে একটু খেলবে, মাঠ না থাকার জন্য তারও উপায় নেই। মাঠ গড়তে, বেড়া দিতে কিংবা সংস্কারের প্রয়োজন থাকলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে আবেদন করবেন। আমরা সেগুলি ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করব।” বোলপুরের পারুলডাঙায় শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে হওয়া ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষ প্রমুখ।
ঘটনা হল, জেলায় এমন বহু প্রাথমিক স্তরের স্কুলে আজও কোনও খেলার মাঠ গড়ে তোলা যায়নি। ফলে ওই সব স্কুলের পড়ুয়াদের শরীরচর্চা করার কোনও উপায় থাকে না। কম নয় সীমানা প্রাচীর না থাকা স্কুলের সংখ্যাও। ফলে খোলা স্কুল ছাড়িয়ে বাচ্চারা কোথাও চলে যাবে, এই আশঙ্কায় ভোগেন বহু অভিভাবকই। একই কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। কিন্তু অভিযোগ, সরকারি বদান্যতার অভাবে ওই সব স্কুলে আজও মাঠ বা প্রাচীর গড়ে ওঠেনি। অরক্ষিতই রয়ে গিয়েছে। যেমন, বোলপুরেরই বনডাঙা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুল লাগোয়া ফাঁকা জমি পড়ে আছে। একটু সংস্কার করলেই তা ওই স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের একটি সুন্দর খেলার মাঠ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। স্কুলে শিক্ষক সুবীর রায় বলেন, “ওই প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে খেলার মাঠ তৈরি করা হলে, তা খুবই ভাল উদ্যোগ।” একই ভাবে খেলার মাঠ পেতে পারে বোলপুরের শিশু বিদ্যাপীঠ, তারাশঙ্কর প্রাথমিক স্কুলগুলির পড়ুয়ারাও। খেলার মাঠ নেই নানুরের কুরুম্ব ঘোষ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। তার পরিচালন সমিতির সদস্য সন্ন্যাসী মণ্ডল বলেন, “অন্য ব্লকগুলিতেও এই উদ্যোগ নেওয়া হলে আমাদের মতো বহু স্কুল উপকৃত হবে।” বোলপুরের বিডিও-র ওই প্রস্তাবকে কার্যত স্বাগত জানিয়েছেন জেলার প্রায় সব মহলই।
অনুষ্ঠানের পরে জেলা সভাধিপতি বলেন, “কোনও সন্দেহ নেই বোলপুর ব্লক প্রশাসনের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সম্প্রতি বীরভূমে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বেশ কিছু বিকল্প কাজ অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। স্কুলের মাঠ, বেড়া তৈরির কাজ ছাড়াও গ্রামে গ্রামে খেলার মাঠ সংস্কার, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় নির্মিত রাস্তার দু’ধারে বনসৃজনের মতো কাজকেও আমরা ওই প্রকল্পের আওতায় এনেছি।” অন্য দিকে, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের জেলা প্রকল্প আধিকারিক বিশ্বজিৎ মোদকও বলেন, “ওই প্রকল্পে জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটি জায়গায় স্কুলের মাঠ সংস্কার, বেড়া তৈরির কাজ হয়েছে। তবে জেলা জুড়ে যদি এমন উদ্যোগ নেওয়া যায়, তা হলে এই প্রকল্পের নিরিখে তা দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে।” যদিও তিনি জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী স্কুলগুলির বেড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা কংক্রিটের নির্মাণ করতে পারেন না। তবে বাঁশ বা অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে বেড়া বানানো বা প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ করা যাবে। তিনি বলেন, “কোনও স্কুলে কংক্রিটের নির্মাণ প্রয়োজন হলে সর্বশিক্ষা মিশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তা করা যেতেই পারে।” প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি রাজা ঘোষও। |