বীরভূমের যে এলাকায় পিপিপি ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশি অভিযানকে ঘিরে তুলকালাম ঘটেছিল গত বছর, সেই লোবায় ডিভিসি-এমটার হাতে থাকা জমি খাস করে নিয়েছে রাজ্য সরকার। একই ভাবে বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকেও বেঙ্গল-এমটার জমি খাস করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, লোবা ও খয়রাশোলে খোলামুখ কয়লাখনির জন্য ওই সংস্থা দু’টি সিলিং বহির্ভুত (২৪.২২ একর) জমি নিজেদের হাতে রেখেছিল। রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, অতিরিক্ত জমি হাতে রাখার জন্য ১৪ওয়াই ধারায় রাজ্য সরকারের কাছে অনুমতি চাইতে হয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। লোবায় খোলামুখ কয়লাখনি গড়ার জন্য ডিভিসি-এমটা (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি ভিত্তিতে গড়ে ওঠা) সংস্থা ইতিমধ্যেই প্রায় ৭৫০ একর জমি কিনেছে। আবার খয়রাশোলেও পিপিপি ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বেঙ্গল-এমটা সংস্থার খোলামুখ খনির জন্য অনেকটা জমি অধিগৃহীত হয়েছে।
বীরভূম জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রের খবর, খয়রাশোলে বেঙ্গল-এমটার হাতে থাকা ১২৭১.৬৮ একর জমি খাস করা হয়েছে। অন্য দিকে, লোবায় ডিভিসি-এমটার হাতে থাকা জমিও খাস করা হয়েছে। বীরভূম জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শ্যামাশিস রায় বলেন, ‘‘সপ্তাহখানেক আগেই ওই জমিগুলি খাস করে রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। এ বার রাজ্য সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেই মতো কাজ হবে।” তিনি জানান, দু’টি ক্ষেত্রেই সংস্থাগুলি প্রয়োজনীয় অনুমতি ছাড়াই অতিরিক্ত জমি নিজেদের হাতে রেখেছিল।
যদিও বেঙ্গল-এমটা এবং ডিভিসি-এমটা, এই দুই সংস্থারই এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর নিমাই মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “আমাদের অধিগৃহীত জমি খাস হওয়ার কথা জেনেছি। কিন্তু, লোবার কৃষিরক্ষা কমিটির আন্দোলন এবং অশান্তি মিটে গেলে আমরা ওই জমি ফেরত পাওয়ার জন্য সরকারি নিয়মেই আবেদন জানাব। আপাতত সেখানকার অফিস আমরা বন্ধ রেখেছি।” আর খয়রাশোল প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ওখানে টুকটাক কয়লা তোলার কাজ চললেও তা মাঝপথে লুঠ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমরা কাজ আংশিক ভাবে চালাচ্ছি।”
লোবা এলাকায় প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি গড়তে এসে ডিভিসি-এমটা’র জমি কেনার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের দাবিতে ওই সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র আটকে কয়েক বছর ধরেই বিক্ষোভ শুরু করেছিল ‘লোবা কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’। সেই আন্দোলন এখনও চলছে। ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর ওই যন্ত্র উদ্ধার করতে লোবায় পুলিশি অভিযান হয়। তার জেরে পুলিশ-গ্রামবাসী খণ্ডযুদ্ধ বাধে। গুলিও চলে। পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েক জন গ্রামবাসী আহত হন বলে অভিযোগ। এমটা সংস্থার সেই মাটি কাটার যন্ত্রটি আজও পড়ে রয়েছে লোবায়। |