কেউ দোকান বন্ধ রেখে বেরিয়ে পড়ছেন টালির সন্ধানে। কেউ আবার পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে টিন কেনার টাকা সংগ্রহ করছেন। জনা কয়েক যুবক দিনভর পরিশ্রম করছেন যাতে তাড়াতাড়ি ঘরটা খাড়া করা যায়। ওই ঘরেই একরত্তি কন্যাসন্তানকে নিয়ে থাকবেন তেহট্টের এইচআইভি আক্রান্ত এক মহিলা।
মাস দেড়েক আগে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই মহিলা। গাড়ি করে হাসপাতাল থেকে বাবার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে দায় সেরেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আর বাবার বাড়ির লোকজনের কাছে শুনতে হয়েছিল‘অভাবের সংসারে এতগুলো পেট চলবে কী করে?’
বৃষ্টি মাথায় করে সেই সন্ধ্যায় প্রথমে স্থানীয় একটি স্কুলের বারান্দা ও পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে।
এখন একটা খাস জমিতে ওই মহিলার জন্য ঘর তুলছেন স্থানীয় ওই যুবকরা। জয়দেব পাল, সুব্রত রায়, সুদন হালদার, তাপস পালদের কথায়, “কী রোগ হয়েছে সেটা বড় কথা নয়। তার জন্য চিকিৎসা আছে। কিন্তু নিজের থাকার জন্য একটা ঘর জুটবে না! সেই কারণেই আমরা নানা জায়গায় গিয়ে বাঁশ, টালি সংগ্রহ করে আনছি। ঘরের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। ঘরটা হয়ে গেলেই সেখানে নিজের মতো করে সন্তানকে নিয়ে ওই মহিলা সুস্থভাবে থাকতে পারবেন।” ওই যুবকরা বলছেন, “ হাসপাতাল থেকে ফিরে আসার পর থেকে উনার সঙ্গে যে ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটেছে তা অত্যন্ত দূভার্গ্যজনক।”
তেহট্ট ১ এর বিডিও জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, “ওই যুবকদের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রশাসনও সবরকমভাবে সাহায্য করবে।”
বছর দেড়েক আগে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে ওই মহিলার বিয়ে হয়। কর্মসূত্রে স্বামী পুণেতে থাকেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার মাস পাঁচেক পরে জানা যায় ওই দম্পতি এইচআইভি আক্রান্ত। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। স্বামী মারা যাওয়ার পরে তিনি ফের বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষের শাশুড়িই এখন ওই মহিলা ও তাঁর মেয়েকে দেখভাল করছেন।
ওই মহিলার দিদি বলেন, “ওর রোগের জন্য যে আমরা ওকে দূরে সরিয়ে দিয়েছি ব্যাপারটা কিন্তু সেরকম নয়। হাসপাতালে যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত ও তো আমার কাছেই থাকত। কিন্তু আমরা সকলেই খুব গরিব। এখন ও যেখানে আছে সেখানেও বেশি দিন থাকা মুশকিল। বোনের স্বামীও এখন সেভাবে আর খোঁজখবর রাখছে না। এখন এলাকার ওই ছেলেরা আমার বোনের জন্য যা করছে তাতে ওদের ধন্যবাদ জানানোর কোনও ভাষা আমার জানা নেই।”
তেহট্ট গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের চায়না মণ্ডল বলেন, “বাচ্চাকে নিয়ে ওই মহিলার যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সেজন্য পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেও সবরকম সাহায্য করা হবে। আর ওই যুবকদের দেখে আমাদের সকলেরই শিক্ষা নেওয়া উচিত।”
১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এডস দিবস উপলক্ষে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে তেহট্টে একটি র্যালির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তেহট্টের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শচীন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “এ দিন আমরা ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করে এসেছি। অসুবিধা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।” |