জামিন পেলেন ডিএম, পাঠানো হল ছুটিতে
জামিন পেলেন ২৪ ঘণ্টায়। জেলা ফিরে পাবেন কি না, সন্দেহ।
গোদালা কিরণকুমারকে আপাতত ১৫ দিনের ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, মালদহে নতুন বছরে নতুন জেলাশাসক পাঠানো হতে পারে। এক রাত হাজতে
থাকা কোনও অফিসারকে আর জেলাশাসকের পদে বসাতে চাইছেন না প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডির তলব পেয়ে সোমবারই শিলিগুড়ির সদ্য প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন কলকাতায় আসছেন। আসার আগে সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে শিলিগুড়িতে তিনি বলে এলেন, “আমি কোনও ভুল করিনি।” কোন পরিস্থিতিতে মালদহের জেলাশাসককে তিনি গ্রেফতার করেছিলেন, রাজ্যের পুলিশ প্রধানের কাছে তারই ব্যাখ্যা দেবেন জয়রামন। শুধুমাত্র কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে রাখাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
কেন গোদালাকে এখনই মালদহের জেলাশাসকের পদে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না?
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, জেলাশাসকের পদের আলাদা সম্মান রয়েছে। তাই শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র মালদহের জেলাশাসককে গ্রেফতারির নিন্দা করেন। কিন্তু তা বলে হাজতে কাটানো কোনও অফিসারকে সঙ্গে সঙ্গে জেলাশাসকের পদে ফিরিয়ে আনাও উচিত হবে না। তাই আপাতত গোদালা কিরণকুমারকে ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, কিরণকুমারের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় তদন্ত শুরুর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে। জেলাশাসক হিসেবে তাঁকে যাতে টানা ৪৮ ঘণ্টা হাজতে থাকতে না হয়, সে জন্য রবিবারই কিরণকুমারকে আদালতে তোলা হয়। যে সরকারি আইনজীবী শনিবার জেলাশাসকের পুলিশি হেফাজত চেয়েছিলেন, এ দিন তিনিই জামিনের বিরোধিতা করলেন না। ফলে কিরণকুমার জামিন পেয়ে যান।
কিন্তু জয়রামনকে কেন শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে?
প্রশাসনের ওই শীর্ষ কর্তা জানান, শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের দুর্নীতি মামলায় কিরণকুমারের ভূমিকা সম্পর্কে সরকার আগে থেকেই অবহিত ছিল। এ নিয়ে জয়রামন সরকারকে দু’টি রিপোর্ট পাঠান। সেখানে কিরণকুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ, প্রয়োজনে গ্রেফতারির অনুমতিও চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নভেম্বরের মাঝামাঝি কলকাতায় ডেকে পাঠিয়ে জয়রামনকে জানিয়ে দেওয়া হয়, জেলাশাসককে গ্রেফতার করার প্রয়োজন নেই। বরং জিজ্ঞাসাবাদের পরে চার্জশিট দেওয়া হোক। তার পরেই প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হবে। গোদালাকে জেলাশাসকের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নবান্নের কর্তারা।
প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “কিরণকুমারের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ, তাতে ওই অফিসারের পক্ষে কেউই ছিলেন না। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁর চাকরি যাওয়ার কথা। আমাদের এই মনোভাব শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারও জানতেন। তা বলে, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কী ভাবে এক জন জেলাশাসককে গ্রেফতার করেন তিনি? স্বরাষ্ট্রসচিবের মোবাইলে পুলিশ কমিশনার এসএমএস মারফত গ্রেফতারির খবর পাঠান। তার আগে পর্যন্ত কেউ এর বিন্দুবিসর্গ জানতেন না।” তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
সে জন্যই তড়িঘড়ি জয়রামনকে সরিয়ে দার্জিলিঙের দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল আইজি জাভেদ শামিমকে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে বলা হয়। যদিও শাস্তিতে দমছেন না জয়রামন। “যা করেছি, আইনগত ভাবে ঠিকই করেছি। আমার কোনও অনুতাপ নেই,” শিলিগুড়ি ছাড়ার আগে এ কথা বলে নতুন করে বিতর্ক তৈরি করলেন তিনি। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, শনিবার মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার যা করেছেন, তা ঠিক হয়নি। এর পরে ‘ঠিক করেছি’ বলে সেই বক্তব্যকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ করে বসেছেন জয়রামন। এর জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা যেতে পারে। প্রশাসনের ওই শীর্ষ কর্তাটির বক্তব্য, “এই মামলায় জয়রামন তদন্তকারী অফিসার ছিলেন না। তিনি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক অফিসার। পাশাপাশি এই মামলায় তাঁর উপর নজর রাখছিলেন মুখ্যসচিব থেকে আইজি (আইন-শৃঙ্খলা), সকলেই। ফলে এঁদের না জানিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারীও ছিলেন না।”
এই ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ বলেন, “সরকার বা পুলিশ চাইলে জামিনের বিরোধিতানা-ও করতে পারেন। কিন্তু যে সরকারি আইনজীবী গত কাল পুলিশি হেফাজত চেয়েছিলেন, কোন যুক্তিতে তিনি আজ জামিনের বিরোধিতা করলেন না? এর অর্থ, আইন আইনের পথে চলছে না, সরকার নির্দেশিত পথে চলছে।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “তৃণমূলের এক বড় নেতা প্রায়ই বলছেন, আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু যা দেখছি, তাতে তো আইন আইনের পথে চলছে না। রঞ্জিতকুমার পচনন্দা, দময়ন্তী সেনদের ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, জয়রামনের ক্ষেত্রেও তাই হল। আর ছাড়া পেয়ে গেলেন অভিযুক্ত জেলাশাসক। এ কেমন ব্যবস্থা?”
এই নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব মুখ খুলতে চাননি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “আমি কিছু বলব না। এটা পুরোপুরি প্রশাসনিক বিষয়।” এক প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও বলেন, “এটা প্রশাসনের ব্যাপার। প্রশাসন দেখছে। দলের তরফে এ নিয়ে কিছু বলার নেই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.