ওঝার কবলে মৃত্যু যুবকের
দিন চারেক ধরে পেটে ব্যথা। গলার কাছে অস্বস্তি। আর মাঝে মধ্যে ‘ভুল বকা’। তাতেই মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের এক পরিবারের মনে হয়, তাদের বাড়ির ছেলেকে ‘ভূতে ধরেছে’। সেই ‘ভূত তাড়াতে’ তারা এক মহিলা ওঝাকে ডাকে। সেই ওঝা প্রথম ক’দিন বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন ওই যুবককে। সেই অবস্থাতেই তাঁকে ১৮ কিলোমিটার দৌড় করিয়ে একটি ডোবাতে স্নান করতে বাধ্য করেন। ভিজে জামা প্যান্ট পরেই তাঁকে দৌড় করানো হয়। তাতেও ‘ভূত না ছাড়ায়’ ওঝার নিদান ছিল, এই শীতের দিনে ভৈরব নদে সাঁতার কাটতে হবে।
যত বার পারবেন মাথা ডোবাতে হবে। এত অত্যাচার সহ্য হয়নি। শনিবার বিকেলে ভৈরবেই ডুবে মারা গিয়েছেন সাহিন শেখ (২৬) নামে ওই যুবক। ওই ওঝাকে পুলিশ রবিবার গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, শাহিনের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বাংলায় স্নাতক শাহিন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরশিক্ষার মাধ্যমে স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছিলেন। বাবা মোক্তার শেখ স্থানীয় বাজারে সব্জি বিক্রি করেন। তাঁর দুই মেয়ে, এক ছেলে। শাহিনও দিনমজুরি করতেন। রাজমিস্ত্রির কাজ করতে চেন্নাই গিয়েছিলেন। মাস দেড়েক আগে বাড়ি ফেরেন। গত মঙ্গলবার থেকে তাঁর শরীর খারাপ হয়। প্রতিবেশী রাফিজুল শেখ বলেন, “এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরার পথে একটি কবরস্থানের পাশের জঙ্গল দিয়ে এসেছিল শাহিন। তারপরেই অসুস্থ হয়। তাতেই ওর বাড়ির লোক ধরে নেন, ওকে ভূতে ধরেছে।” সেই সময়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন শাহিনের এক মাসিও। মোক্তার বলেন, “আমার শ্যালিকা ও ছেলে দু’জনকেই ভূতে ধরেছে বলে মনে হয়েছিল। তাই ওঝাকে খবর পাঠাই।”
এরপরেই শুরু হয় ওই ওঝার ‘চিকিৎসা’। অসুস্থ শরীরে শাহিনকে শনিবার বিকেলে ভৈরবে নিয়ে যাওয়া হয়। শাহিন ভাল সাঁতার জানতেন। প্রায় আধঘণ্টা তিনি ভৈরব নদে ছিলেন। এর মধ্যে বারবার ডুব দিয়েছেন জলে। তারপর এক সময় তিনি আর উঠছেন না দেখে স্থানীয় একটি খেয়া নৌকার এক মাঝির সন্দেহ হয়। তিনি তখন লোকজন নিয়ে গিয়ে শাহিনকে জল থেকে তোলেন। শাহিন ততক্ষণে মারা গিয়েছেন।
বহরমপুর মানসিক হাসপাতালের সুপার পবিত্র সরকার বলেন, “হরিহরপাড়া এমন কিছু দূর নয়। ওই যুবক ভুল বকছে বলে যদি তাঁর বাড়ির লোকের মনে হয়েও থাকে, সেক্ষেত্রে হাসপাতালের আউটডোরে বিনামূল্যেই তাঁকে দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। কুসংস্কারেরই বলি হয়েছে ওই যুবক।”
তরতিপুরের সাক্ষরতার হার ৪০ শতাংশেরও নীচে। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ গরিব দিনমজুর। জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়ের বক্তব্য, “ওই এলাকায় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে জেলা প্রশাসন চেষ্টা চালাচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.