কংগ্রেস সাংসদ তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এক সরকারি আইনজীবীকে (গভর্নমেন্ট প্লিডার) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। তুষার মজুমদার নামে ওই আইনজীবী মুর্শিদাবাদ জেলা জজ আদালতে কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে সরকারি পদ থেকে অপসারণের চিঠি ধরানো হয়।
তুষার মজুমদার।
|
তুষারবাবু বলেন, “সরকারি আইনজীবী পদ থেকে আমাকে সরানোর কোনও কারণ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে জমিজমা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে আমি কাজ করে থাকি। সে জন্যই আমাকে সরানো হয়েছে বলে মনে করছি।” গত দু’ বছরে সরকারের হয়ে লড়া তাঁর প্রতিটি মামলাতেই সরকারপক্ষের জয় হয়েছে বলেও দাবি করেন তুষারবাবু। অধীর চৌধুরীও মনে করছেন, তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই সরানো হয়েছে তুষারবাবুকে। অধীরবাবু বলেন, “আইনজীবীর কাছেই মানুষ আইনি পরামর্শ নিতে যান। আমরাও সেই মতো তুষারবাবুর কাছে গিয়েছি। এর সঙ্গে রাজনীতির তো কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁকে সরিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে অসম্মান করা হল।”
অপসারণ কারণ বিশদে জানাতে চাননি আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি শুধু বলেন, “সরকার মনে করেছে, তাই ওই আইনজীবীকে সরানো হয়েছে।” আর মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়ের বক্তব্য, “রাজ্য সরকারের লিগ্যাল রিমেমব্র্যান্সার (Legal Remembrancer) দফতর থেকে ওই চিঠি ফ্যাক্সে পাঠানো হয়েছে। জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি চিঠিটি ওই আইনজীবীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে কী কারণে তাঁকে সরানো হয়েছে, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।” তৃণমূলের অবশ্য অভিযোগ, তুষারবাবু সরকারি আইনজীবী পদে থেকে যথেষ্ট নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছিলেন না। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই আইনজীবীর নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে। তিনি কাজের নামে অকাজ করছিলেন। বিষয়টি জানিয়ে জেলা তৃণমূলের পক্ষ থেকে আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। তাঁকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমরা খুশি।”
রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের পরে ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মুর্শিদাবাদ জেলা জজ আদালতে দেওয়ানি সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা লড়ার জন্য গভর্নমেন্ট প্লিডার পদে তুষার মজুমদারকে বাছা হয়েছিল। তুষারবাবুর আগে ওই পদে ছিলেন দীপক রায়। বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরদিনই পদত্যাগ করেছিলেন দীপকবাবু। সাময়িক ভাবে তিন মাস ওই দায়িত্ব সামলান বিশ্বনাথ রায়। নতুন সরকার এসে ওই পদে তুষারবাবুকে মনোনীত করেন।
তবে সম্প্রতি সরকারি আইনজীবী হিসেবে তুষারবাবুর নিরপেক্ষতা নিয়ে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হয়। তারপরই অপসারণের সিদ্ধান্ত। জেলা আদালত ও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী দিনে মুর্শিদাবাদের আরও কয়েক জন সরকারি আইনজীবীকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। কামাল শেখ খুনের মামলায় অধীর চৌধুরীর হয়ে জেলা জজ আদালতে মামলা লড়ছেন, এমন কয়েক জন ওই তালিকায় রয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবীর বলেন, “সরকারের সুযোগ-সুবিধে নিয়ে বহরমপুরের বিভিন্ন আদালতে ও কান্দি মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবীরা অনিয়ম করছেন বলে কর্মী-সমর্থকরা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যাঁরা এ সব করছেন, তাঁরা সরকারি আইনজীবীর পদ ছেড়ে করুন, আমাদের আপত্তি নেই।” |