বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতে ইতিহাস গড়ার বছরটা দারুণ ভাবে শেষ করলেন পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধু। ম্যাকাও-এ আরও একটা গ্রাঁ প্রি গোল্ড খেতাব জিতে! এর আগে গত মে মাসে মালয়েশিয়া ওপেন জিতেছিলেন তিনি। আজ ম্যাকাও ওপেনও জেতায় বছর শেষে জোড়া ট্রফি হায়দরাবাদের অষ্টাদশীর শো-কেসে।
ম্যাকাও ওপেনের শীর্ষ বাছাই সিন্ধু এ দিন ফাইনালে বিশ্বের তিরিশ নম্বর, কানাডার মিশেল লি-কে ২১-১৫, ২১-১২ চুরমার করার পর জানান, সেমিফাইনাল জেতার পর থেকেই খেতাব নিয়ে ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বিশ্বের এগারো নম্বর বলেন, “সেমিফাইনালে চিনের মেয়েটাকে হারানোর পর থেকেই মনে হচ্ছিল ট্রফি জিততে পারব। নিজেকে বলেছিলাম, কোর্টে কোনও ভুল করলে চলবে না।” খেতাবের সঙ্গে পুরস্কারমূল্যে ৯ হাজার মার্কিন ডলারও জিতলেন সিন্ধু।
ছোটবেলা থেকে সিন্ধু ব্যাডমিন্টন যাঁর কাছে শিখেছেন, সেই জাতীয় কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দ ছাত্রীর এই টাটকা সাফল্য সম্পর্কে বলেছেন, “গতি বাড়ানো আর কোর্টে আরও আক্রমণাত্মক হওয়া নিয়ে সিন্ধু গত এক মাস প্রচুর খেটেছে। এখানে সেই পরিশ্রম আর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে চিন্তাটাই দারুণ ভাবে কাজে লাগালো ও।” ম্যাকাওয়ের জন্য এই প্রস্তুতির পিছনে সময় দিতেই চিন ওপেন থেকে সিন্ধুর নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন গোপীচন্দ। দিন বারো আগেই হংকং সুপার সিরিজে নেমে প্রথম রাউন্ডে ছিটকে যান সিন্ধু। ম্যাকাওয়ের এই টুর্নামেন্টে শীর্ষ বাছাই হওয়া সত্ত্বেও শুরুর ম্যাচগুলোয় তিনি কিছুটা নার্ভাস ছিলেন। ভারতীয় দলের সঙ্গে এখানে আসা প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মধুমিতা সিংহ বিস্ত যেমন বলেছেন, “প্রথম দিকের রাউন্ডগুলোয় সিন্ধুর আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা কিছুটা নড়বড়ে থাকলেও সেমিফাইনাল আর ফাইনালে ও যা দাপট দেখিয়েছে, তাতে একেবারে যোগ্যতম হিসাবেই মুকুটটা জিতেছে।” |
ম্যাকাও ওপেন জিতে সিন্ধু। রবিবার। ছবি: পিটিআই। |
কিছু দিন আগে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির সিন্ধু এ দিনের ফাইনালে শুরুটাই করেছিলেন একেবারে খুনে মেজাজে। এবং টুর্নামেন্টের সপ্তম বাছাই কানাডার মেয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরুর দু’মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যান ৭-০। এবং এই চাপটা প্রতিপক্ষের উপর ক্রমশ বাড়াতে বাড়াতে একটা সময় তাকে প্রায় শ্বাসরুদ্ধ করে ছাড়েন। তুলনায় সেমিফাইনালে চিনের কিন জিংজিং-কে হারাতে অনেক বেশি ঘাম আর বুদ্ধি খরচ করতে হয় সিন্ধুকে। চলতি বছরে এশীয় যুব ব্যাডমিন্টনের সোনাজয়ী চিনা টিনএজার কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিলেন সিন্ধুকে। যে লড়াই হায়দরাবাদি চ্যাম্পিয়ন শেষ পর্যন্ত জেতেন ২১-১৩, ১৮-২১, ২১-১৯।
সিন্ধুর এই লড়াকু মানসিকতার জন্য গোপীচন্দকেই ধন্যবাদ দিচ্ছেন তাঁর বাবা এবং অর্জুনজয়ী প্রাক্তন জাতীয় ভলিবলার পি ভি রামানা। “ওর জেতার খবরে আমরা অসম্ভব খুশি। বছরটা দারুণ গেল সিন্ধুর!” মেয়ে এই ফর্ম পরের মরসুমেও ধরে রাখতে পারবে বলে আশা বাবার। রামানার কথায়, “আমরা চাই, পরের বছরেও বড় টুর্নামেন্টে ও এই ভাবেই ভাল খেলে দেখাক। এশিয়ান গেমস আছে, কয়েকটা সুপার সিরিজ আছে। তবে ওর কোচ গোপীচন্দ সে সব দেখে নেবেন। উনি ওকে যে ভাবে গাইড করছেন, তাতে দারুণ উন্নতি করছে সিন্ধু।”
যে বছরে ভারতের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহওয়ালের নামের পাশে একটাও খেতাব নেই, সেই বছরেই সিন্ধুর জোড়া গ্রাঁ প্রি গোল্ড জয় এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ব্রোঞ্জ এসেছে। এসেছে অর্জুন পুরস্কারের মতো বড় সম্মান। এটা ঠিক যে ইন্ডিয়ান ব্যাডমিন্টন লিগে দুই হায়দরাবাদির মুখোমুখি সাক্ষাতে সিন্ধু দু-দু’বার বিশ্রী হারেন তাঁর অগ্রজ সাইনার কাছে। কিন্তু বছর শেষের হিসাব বলছে, বিশ্বের ছ’ নম্বর সাইনার পাশে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে সিন্ধু নিজের দাবি শুধু আরও জোরদারই করে তোলেননি। বরং চলতি মরসুমে পারফরম্যান্সের বিচারে তাঁর পাশে হয়তো বা কিছুটা ম্লানই দেখাচ্ছে সাইনাকে!
|
আমার ফর্ম আর ফিটনেস দু’টোই ঠিক আছে। এ বছরটা ভাগ্য পাশে থাকেনি। সেটুকু বাদ দিলে গোটা বছর যথেষ্ট ধারাবাহিকতা দেখিয়েছি। অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, মালয়েশিয়া ওপেন আর ইন্দোনেশিয়া ওপেন সুপার সিরিজ প্রিমিয়ারে সেমিফাইনালে উঠেছি। কয়েকটা ম্যাচ ক্লিক করে গেলে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে চারে ফিরতে পারতাম। তবে হারটা হারই। চোটের কারণে সুদিরামন কাপ না খেলায় আমার প্রায় সাত হাজার র্যাঙ্কিং পয়েন্ট নষ্ট হয়। তবে চোট-আঘাতকে ব্যর্থতার কারণ বলব না। মরসুম লম্বা হলেও আমি ক্লান্ত নই। আগের চেয়ে অনেক বেশি ফিট আর একাগ্র। আপাতত সামনের লক্ষ্য বিডব্লিউএফ সুপার সিরিজ ফাইনাল।
সিন্ধুর জয়ের দিন নিজের খারাপ ফর্মের ব্যাখ্যা দিলেন সাইনা নেহওয়াল |
|