এত দিন ছিলেন ‘কিং কোবরা’। এখন তিনিই কিনা বাগানের ‘কাল-সাপ’!
ওডাফা অ্যান্ড কোং-এর কদর্য পারফরম্যান্স দেখে রবিবার গ্যালারিতে সমর্থকরা বুক চাপড়ে বলছিলেন, “কিং কোবরা নয়। ওডাফা বাগানের কাল-সাপ। ক্লাবে ঢোকার পরে তাই আর ট্রফি নেই।”
যুবভারতীতে ভারতীয় ফুটবলের ‘স্পাইডারম্যান’ সুব্রত পালের সঙ্গে দ্বৈরথে ‘কাল-সাপ’ ওডাফা শুধু নাস্তানাবুদ হয়ে হারেননি। ম্যাচ শেষে জুতো হাতে মারমুখী সবুজ-মেরুন জনতার ‘গো ব্যাক ওডাফা’ ধ্বনি শুনে স্টেডিয়ামের পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ক্লাব সদস্যের বাইকে চেপে কার্যত পালালেন।
পঁচাত্তরে পাঁচ গোল খেয়ে সুব্রত ভট্টাচার্যরা বাড়ি ফেরেননি। গঙ্গার ধারে নৌকায় শুয়ে ঝাপসা চোখে তারা গুনেছিলেন। এখন ওডাফারা কোটি কোটি টাকা পান। সুদিনে সমর্থকদের উত্তরীয় গায়ে চড়ান। ক্লাবের দুঃসময়ে পালানোর জায়গাটাও তৈরি রাখেন। সমর্থকদের আবেগ-ক্ষোভ বোঝার দায় তাঁদের কোথায়?
ওডাফারা নাকি পেশাদার! কিন্তু গত তিন মরসুমে প্রি-সিজন প্রস্তুতিতে ফাঁকি দিয়েছেন বিস্তর। মোহনবাগানের আগের রি-হ্যাব বিশেষজ্ঞ জোনাথন কর্নার ফিজিক্যাল ট্রেনিং করানোর সময় এই মরসুমেও দেখা গিয়েছে সে সব এড়িয়ে মাঠে শুয়ে রয়েছেন ওডাফা। এখন নমনীয়তা হারিয়ে বিদ্রোহ করছে পায়ের পেশি। এখন ‘মরণকালে হরিনাম’ নিচ্ছেন একা অনুশীলন করে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ছুটছেন মাঠে ‘মেন্টর’ চিমাকে নিয়ে। রাঙ্গদাজিদ কোচ সন্তোষ কাশ্যপ তেরো মাস আগে ঘর করেছেন ওডাফার সঙ্গে। এই বাগানেই। তাই পুরনো ক্লাবের হাল-হকিকত ভালই জানেন। স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় তাই এ বারের লিগে প্রথম তিন পয়েন্ট পাওয়ার আনন্দে বলে গেলেন, “আমরা বল ধরে খেলছিলাম। জানতাম ওরা গোটা ম্যাচ দৌড়ে কিছু করতে পারবে না।”
আই লিগের ‘লাস্ট বয়ের’ কাছে ঘরের মাঠে দু’গোলে হেরে সমর্থকদের কাছে জোড়হাতে ক্ষমা চাইছেন করিম। বললেন, “ওদের দুঃখ বুঝি আমরা। দেখলেন, ছেলেরা ম্যাচের পর জল পর্যন্ত না ছুঁয়ে মাঠেই শুয়ে পড়ল। তবে আমরা খুব বাজে খেলিনি।”
শুনে হাসছেন খেলা দেখতে আসা সাতষট্টির আইএফএ শিল্ডে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে বাগানের গোলদাতা বিক্রমজিৎ দেবনাথ। বললেন, “টিমটার না আছে রক্ষণ, না আক্রমণ। আনফিট ওডাফা তো মাঠে হাঁটছে। সেই টার্নিং, শুটিং গেল কোথায়?”
শুধু ওডাফা কেন? দায় এড়াতে পারেন না কোচও। মেঘালয়ের যে দল আই লিগে এ দিনের আগে পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখেনি, তাদের বিরুদ্ধে করিম অবশ্য নামলেন ৪-৩-৩। কিন্তু সেই অ্যাটাকিং ফর্মেশন নিয়েও একাধিক প্রশ্ন! মাঝমাঠে তা হলে কেন তিন জনই ডিফেন্সিভ হাফ? ৪-৪-২ ছকে সামনে জোড়া স্ট্রাইকার রেখে মণীশ ভার্গব বা রাম মালিককে শুরু থেকে নিয়ে এলেন না কেন? কেন ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে ভাল খেলা রোউইলসনকে এ দিন ব্যবহার করাই হল না? করিমের সাফাই, “হাতে যা অস্ত্র, তা নিয়েই লড়তে হবে।”
কিন্তু ‘হাতের অস্ত্র’ও যে মরচে ধরা। ৪-৩-৩ ছকে উইংহাফদের ওঠানামা করতে হয় প্রচুর। আদিল, ডেনসনদের তা বলা হয়েছিল কি? আক্রমণে এরিক আর কাতসুমি বল হোল্ড করতে পারছেন না। কাতসুমি ড্রিবল জানলেও সেটা কখন, কোথায় করবেন জানেন না। ডান দিকে বল পেলে অহেতুক বাঁ দিকে সরছেন। বাঁ দিকে পেলে সে রকমই ডান দিকে ‘নেগেটিভ রানিং’। আর ওডাফা? তিনি তো গ্যালারির ভাষায়, “ভগবান বৃদ্ধ হয়েছেন, বল আর ধরতে পারেন না।” ফলে কাতসুমি দু’একটা বল বাড়ালেও তা গোলে রাখতে ব্যর্থ এক সময়ের গোলমেশিন।
রক্ষণ সংগঠনেও ‘ম্যান মার্কিং’ শব্দটা এ দিন বোধহয় ড্রেসিংরুমে রেখে এসেছিল মোহনবাগান। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই মননদীপের গোল। লিংডোর দ্বিতীয় গোলের সময়ও বিপক্ষের সেই এক ভুল। গোলের সময় প্রীতম কোটাল গোল লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটু উঠে আসলেই লিংডো অফসাইড ট্র্যাপে পড়তেন। এ সব অনুশীলন কি বাগানে হয় না?
করিম বলছেন, সুদিন ফেরাতে ক্লাবে ফুটবলার-কর্তা সকলে মিলে আলোচনায় বসবেন। সেখানে বরং এই প্রশ্ন উঠুক কেন শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবে ঢুকে পড়ছে এরিকের মতো নিম্নমানের চতুর্থ বিদেশি? জানতে চাওয়া হোক, ঠিক কী কারণে র্যান্টি এলেন না? নবি-সঞ্জুরা আগ্রহ দেখালেও কোন যুক্তিতে তাঁদের নেওয়া হল না?
এটাও জানতে চাওয়া হোক, কোটি টাকার ‘কিং কোবরা’ ঠিক কোন কারণে এখন ‘কাল-সাপ’?
মোহনবাগান: সন্দীপ, প্রীতম, ইচে, আইবর (মণীশ), সৌভিক, আদিল ( রাম), কিংশুক, ডেনসন, কাতসুমি, এরিক (সাবিথ), ওডাফা। |