|
|
|
|
জ্যোতির পাশে দুই রাজ্য, এটিএম বিনা পাহারাতেই |
সন্দীপন চক্রবর্তী • বেঙ্গালুরু
১ ডিসেম্বর
|
রবিবারের সকাল ৮টা। ছুটির সকালে বেঙ্গালুরু শহরের তখনও ভাল করে আড়মোড়া ভাঙা হয়নি! গত ১০ দিনে আপাত-বিখ্যাত হয়ে-যাওয়া হাসপাতালের সামনে তখনই ডিউটি বদল করে দায়িত্ব পালন শুরু করে দিচ্ছে কর্নাটক পুলিশের নতুন বেঞ্চ!
প্রশ্ন করলে কনস্টেবল রমেশের সহাস্য উত্তর, “কখন কোন ভিআইপি এসে পড়েন, বলা যায় না!”
সেরে উঠছেন। বাড়ি ফিরতে চাইছেন। তবে ওই ভিআইপি টানাপোড়েনই আপাতত বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে জ্যোতি উদয়নের পরিবারের কাছে! বেঙ্গালুরুর ব্যাঙ্ক এটিএমে সাতসকালে দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত মধ্য চল্লিশের জ্যোতির চিকিৎসা এবং সুস্থ জীবনে ফেরানোর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছে কর্নাটক ও কেরলের কংগ্রেস সরকার! কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে জে জর্জ হাসপাতালে এসে কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, চিকিৎসার সব দায়িত্ব তাঁদের। আবার পারিবারিক আমন্ত্রণের অবসরে বেঙ্গালুরু এসে জ্যোতিকে দেখে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডিও জানিয়েছেন, জ্যোতির জন্য যা যা করার দরকার, সব তাঁর সরকার করবে! হাসপাতাল জানে না, কার কাছ থেকে বিলটা নিতে হবে!
রীতিমতো বাপের বাড়ি আর শ্বশুর বাড়ির লড়াই! জ্যোতির বাবা প্রয়াত রামচন্দ্রন নায়ার তিরুঅনন্তপুরমের বিশিষ্ট মহলে পরিচিত নাম ছিলেন। জ্যোতি বিবাহসূত্রে এখন কর্নাটকের নাগরিক। সেই ঘটনার শিকার হওয়ার পরে জ্যোতির উপরে অধিকার ফলাতে পিছপা হচ্ছে না কোনও সরকারই। বলা হচ্ছে, ক’ মাস পরেই লোকসভা ভোট। নাগরিক সমাজের কাছে তাই এমন আতঙ্কজনক ঘটনার পরে পাশে থাকার বার্তা দেওয়া জরুরি!
কিন্তু এই পাশে থাকতে গিয়ে আসল জরুরি কাজ রয়েছে অবহেলায় পড়ে! সব এটিএম সুরক্ষিত করার কাজ এগোয়নি মোটেও। হেব্বলের ‘এস্টিম মলে’র তিন তলা বাড়ির নীচে কয়েক ফুট তফাতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের পাশাপাশি এটিএম। কোনওটাতেই এ দিন প্রহরীর বালাই নেই! অথচ সকালের এই সময়টাতেই জ্যোতির উপরে হামলা হয়েছিল। এমনও নয় যে, এটিএমে হামলার ঘটনা বেঙ্গালুরুতে নতুন। শহরের ঠিক বাইরে যে উত্তরাহাল্লি এলাকার হাসপাতালে জ্যোতি এখন চিকিৎসাধীন, সেখানেই মাত্র এক মাস আগে এটিএম লুঠের চেষ্টায় বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে হরিশঙ্কর শর্মা নামে এক প্রহরীকে।
কেমন আছেন জ্যোতি? আইসিইউ থেকে প্রাইভেট কেবিনে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ২৪ ঘণ্টাও হয়নি তখনও। হাসপাতাল সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রখ্যাত স্নায়ু-শল্যবিদ এন কে বেঙ্কটরামান্নার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন জ্যোতি। শরীরের ডান দিক পুরোপুরি অসাড় হয়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা ছিল, এখন তা কেটেছে অনেকটাই। মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের জন্য মুণ্ডিতমস্তক জ্যোতি শনিবারই সংবাদমাধ্যমকে ছোট্ট বিবৃতি দিয়েছেন। চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, বাড়ি ফিরতে চান। তাঁর স্বামী উদয়কুমারও বলছেন, “জ্যোতি এখন দ্রুত বাড়ি যেতে চায়।”
আর হামলাকারী? বেঙ্গালুরু পুলিশ এখনও হাতড়ে চলেছে! ওই রকমই দেখতে এক সন্দেহভাজন নাকি অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরে ধরা পড়েছে! ওই পর্যন্তই। ক’দিন আগেই কাঞ্চিপুরমের এক এটিএমে এক মহিলার উপরে হামলার পরে নড়েচড়ে বসেছে তামিলনাড়ু পুলিশও। |
|
|
|
|
|