|
|
|
|
জাল নোট-সহ ধৃত বিহারের যুবক আইএম-সদস্য |
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা
|
পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণের চার দিন পরে কলকাতায় জাল নোট-সহ ধরা পড়েছিল সে। বিহারের মুজফ্ফরপুরের বাসিন্দা বলে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) গোড়াতেই সন্দেহ করেছিল, ধৃত ব্যক্তি জাল নোটের মামুলি কারবারি নয়, তার সঙ্গে পটনা বিস্ফোরণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ থাকতে পারে। শেষমেশ সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সম্প্রতি জেনেছে, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দক্ষিণ ফটকের সামনে থেকে ধৃত যুবক মহম্মদ আলি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনেরই স্লিপার সেল-এর সদস্য এবং সে পটনা বিস্ফোরণ কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত হায়দার আলি ওরফে আবদুল্লার ঘনিষ্ঠ।
গত ২৭ অক্টোবর পটনায় বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থলের অদূরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে সাত জন নিহত ও ৮০ জনের বেশি আহত হন। তার পরে ৩১ অক্টোবর মহম্মদ আলি কলকাতায় ধরা পড়ে। তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভারতীয় জাল নোট ও কিছু আসল নেপালি টাকা উদ্ধার করা হয়।
গত বছর নভেম্বর মাসে হায়দার ও মহম্মদ আলি এক সঙ্গে বিহারের রক্সৌল হয়ে নেপালের কাঠমান্ডুতেও গিয়েছিল বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিহারে কোনও ‘অপারেশন’ করে দেশের বাইরে পালানোর রাস্তা বা ‘এগজিট রুট’ ঠিক করতেই ওই দু’জন নেপালে গিয়েছিল। সম্প্রতি এনআইএ-র একটি দল লালবাজারে এসে মহম্মদ আলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার মোবাইল ফোনের কথোপকথনের রেকর্ডও সগ্রহ করা হয়। প্রথমে নিজের আইএম-যোগ এবং হায়দার আলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করতে না চাইলেও মোবাইল ফোনের সূত্রে গোয়েন্দাদের হাতে এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট প্রমাণ আসার পর মহম্মদ আলি বিষয়টি স্বীকার করে নেয় বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
মুজফ্ফরপুর জেলার মনিয়ারি এলাকার নিরপুর গ্রামের বাসিন্দা, বছর তিরিশের মহম্মদ আলি এখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। আলির বিরুদ্ধে পটনা বিস্ফোরণে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ অবশ্য গোয়েন্দারা পাননি। তবে মুজফ্ফরপুরে নিজের গ্রামে হায়দার আলি-সহ আইএমের কয়েক জন সদস্যের জন্য আস্তানার বন্দোবস্ত সে একাধিক বার করে দিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। হায়দার আলির বাড়ি বিহারের ঔরঙ্গাবাদ জেলায়। আবদুল্লা ছাড়াও হায়দারের আর একটি নাম ‘ব্ল্যাক বিউটি’। গত ৭ জুলাই বিহারের বুদ্ধগয়ার ধারাবাহিক বিস্ফোরণেও হায়দার আলি জড়িত বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। তাঁদের বক্তব্য, গত ২৯ অগস্ট ইয়াসিন ভটকল গ্রেফতার হওয়ার পর আইএমের নতুন ‘অপারেশনাল চিফ’ তেহসিন আখতারের নির্দেশেই পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটাতে হায়দার মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল। তেহসিন ও হায়দারকে গ্রেফতার করায় সাহায্য করবে, এমন তথ্য কেউ দিতে পারলে নগদ ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছে এনআইএ।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা আইএমের প্রতিষ্ঠাতা কর্নাটকের রিয়াজ ও ইকবাল ভটকল এবং কলকাতার আমির রেজা খান-সহ ওই জঙ্গি সংগঠনের ১২ জন চাঁইয়ের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। ওই ১২ জন মূলত আইএমের আজমগড় ও দ্বারভাঙা গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য লোকজন নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে। ওই একই মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় কলকাতায় ধৃত মহম্মদ আলিরও নাম যোগ করা যায় কি না, সেই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে এনআইএ। সেটা করা হলে তার পর মহম্মদ আলিকে নিজেদের হেফাজতে নিতে এনআইএ আদালতে আবেদন জানাতে পারে।
লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “কলকাতায় ধরা না পড়লে মহম্মদ আলি হয়তো ভবিষ্যতে আইএমের কোনও হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারত। হায়দার আলি ওকে সে ভাবেই তৈরি করছিল।”
কিন্তু মহমম্দ আলি কলকাতায় এল কেন? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, আলি দুবাই যাওয়ার চেষ্টা করছিল এবং সে জন্যই তার লক্ষ্য ছিল, কলকাতায় এসে দুবাইয়ের ভিসা সংগ্রহ করা। আলি এক সময়ে দুবাইয়ে ট্যাক্সি চালকের কাজ করত। ২০১০-এ সে দেশে ফিরে আসে। তার পরের বছর মুজফ্ফরপুরে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হায়দারের সঙ্গে আলির আলাপ ও হৃদ্যতা হয় এবং ক্রমশ হায়দারের প্রভাবে আলি আইএমের কাজকর্মে যুক্ত হয়। এমনকী, মুজফ্ফরপুরে আলির বাড়িতেও হায়দার থেকেছে। গোয়েন্দারা জানান, আলির আর্থিক অবস্থা মোটেই ভাল নয়। তদন্তকারীদের ধারণা, আইএমের কোনও কাজেই হয়তো আলিকে এ বার দুবাইয়ে পাঠানো হচ্ছিল। |
|
|
|
|
|