পড়ুয়ার অভাবে ধুঁকছে দিল্লির বাংলা স্কুলগুলি
নসংখ্যায় দ্বিতীয়। পঞ্জাবিদের পরেই। তবু রাজধানীর স্কুল-কলেজগুলিতে বাংলা পঠনপাঠন বন্ধ হতে বসেছে। কারণ পড়ুয়ার অভাব! রাজধানীতে বাঙালির সংখ্যা ১৬ থেকে ১৮ লক্ষের কাছাকাছি। তবু বাংলা পড়ানো হয় এমন স্কুলের সংখ্যা কমতে কমতে আটে এসে ঠেকেছে। তা-ও খাতায়-কলমে। দু’টি স্কুলে শিক্ষকের অভাবে বাংলা পঠনপাঠন উঠে গিয়েছে। বাকি স্কুলে টিমটিম করে চলছে বাংলা শিক্ষা। কোথাও শিক্ষক আছেন, ছাত্র নেই। কোথাও উল্টো। এর প্রভাব পড়ছে কলেজগুলিতেও। সেখানে বাংলা শিক্ষা বাঁচিয়ে রেখেছেন পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা থেকে স্নাতক স্তরে বাংলা পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা। আশঙ্কা, এই ভাবে চললে আগামী দিনে দিল্লিতে বাংলা ভাষা শিক্ষা লোপ পাবে। তাই দেরিতে হলেও বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন। আগামী মাসে একটি আলোচনার আয়োজন করেছে তারা। সেখান থেকে যে দিশা মিলবে, তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করবে সংগঠন।
কিন্তু কেন এই দশা? বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সেনগুপ্ত এর জন্য দায়ী করেছেন প্রশাসনকেই। তাঁর অভিযোগ, দিল্লিতে বাংলা ভাষা সরকারি উদাসীনতার শিকার। উদাসীনতার বিষয়টি তুলে তুলে ধরতে দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। তপনবাবুর কথায়, “বাংলার ক্ষেত্রে ছাত্র-শিক্ষক দু’য়েরই অভাব রয়েছে। এটা আসলে একটি চক্র। ছাত্র না হলে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। আর শিক্ষক না থাকলে কেউ ইচ্ছা থাকলেও পড়তে পারে না। এই জট ছাড়াতে সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন। কিন্তু কেউ মাথা ঘামাতে চায় না।” শুধু সরকার নয়, এই পরিস্থিতির জন্য প্রবাসী বাঙালি পরিবারগুলির সন্তানদের বাংলা স্কুলে না দেওয়ার অনীহাকেও দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকেরা।
অথচ দিল্লিতে বাংলা স্কুলের ইতিহাস একশো বছরের পুরনো। ১৮৯৯-এ তিমারপুরে প্রথম বেঙ্গলি বয়েজ স্কুল হয়। ১৯১১-তে কলকাতা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের পরই দিল্লিতে বাড়তে থাকে বাঙালি সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা। তাঁদের সন্তানদের জন্য তৈরি হয় একাধিক বাংলা স্কুলও। ১৯২৫-এ রাইসিনা বেঙ্গলি স্কুল। তার দু’বছরের মাথায় লেডি আরউইন স্কুল। ইউনিয়ন অকাদেমি হয় ১৯৩১-এ। বাঙালি অধ্যুষিত লোদি কলোনি, বিনয়নগর এবং মোতি বাগেও গড়ে ওঠে ‘বেঙ্গলি স্কুল’। কিন্তু ছবিটা বদলাতে থাকে স্বাধীনতার পরেই। স্বাধীনতার পর দিল্লিতে বাংলা স্কুল বেড়েছে মাত্র ২টি। পরিসংখ্যান বলছে, ওই একই সময়ে রাজধানীতে বাঙালির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দশ গুণ। লোদি রোডের শ্যামাপ্রসাদ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিত্রা সাহার পর্যবেক্ষণ, “গত এক-দেড় দশকে বাংলা পড়ুয়ার সংখ্যা কমেছে। উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবার ছেড়ে দিন, নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রথম পছন্দ ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল।” তারই মধ্যে কিছু বাংলা স্কুলের পরিচালন কমিটি স্কুলের মান খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নিম্ন আয়ের বাঙালি পরিবারের সন্তানদের ভর্তি নিতে চাইছে না বলেও অভিযোগ। স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার অভাব প্রতিফলিত হচ্ছে কলেজগুলিতেও। স্নাতক পর্যায়ে পড়ুয়া না থাকায় বন্ধ শিক্ষক নিয়োগও।
অথচ এক দশক আগেও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি কলেজে স্নাতক স্তরে বাংলা ভাষা পড়তে পারতেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এখন ১৪টি কলেজের বাংলা বিভাগের ৩৭টি স্থায়ী পদের মধ্যে ২২টিই ফাঁকা। মাত্র ৮টি পদে স্থায়ী অধ্যাপক রয়েছেন। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নন্দিতা বসুর অভিযোগ, “বাংলা ভাষার কোনও শিক্ষক অবসর নিলেও তাঁর পরিবর্তে কাউকে নেওয়া হচ্ছে না। কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই জায়গায় অন্য কোনও বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ করছেন।” এই করে ইতিমধ্যেই ৮টি কলেজে বাংলা ভাষা পড়ানো উঠে গিয়েছে।
এরই সঙ্গে এ বছর থেকে দিল্লিতে স্নাতক স্তরে চার বছরের নতুন পাঠ্যক্রমে ভাষা শিক্ষার জন্য যে বিষয়গুলি রাখা হয়েছে, তাতে জায়গা পায়নি বাংলা। তপনবাবুর কথায়, “সব জায়গাতেই ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রী কম থাকে। তা বলে বাংলা একেবারে বাদ! এ তো একেবারে বাংলাকে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।” আগে পড়ুয়ারা অন্য বিষয়ে অর্নাস পড়লেও পাসের বিষয় হিসাবে বাংলা রাখতে পারতেন। এখন সেই পথও বন্ধ হওয়ার জোগাড়। কলেজের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়েও আধুনিক ভারতীয় ভাষা বিভাগে বাংলার ক্ষেত্রে সাতটি স্থায়ী পদের মধ্যে পাঁচটিই খালি। পূর্ণ সময়ের দু’জন অধ্যাপকই চালাচ্ছেন স্নাতকোত্তর বিভাগের দায়িত্ব। নিয়োগ বন্ধ থাকায় তাদের অবসরের পরে কী হবে সেই উত্তর হাতড়ে বেড়াচ্ছে সংশ্লিষ্ট সব মহল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.