কাঁকুড়গাছিতে একটি বাড়ি তৈরির কাজ ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ওই কাজের জন্য একটি রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর প্রতিবাদে তৈরি হয়েছে স্বাধিকার রক্ষা কমিটি। ওই নির্মাণ বন্ধের দাবিতে কিছু দিন ধরে এলাকায় বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে। রবিবার শতাধিক বিক্ষোভকারী মিছিল করে থানায় স্মারকলিপি দেন। সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সাধন পাণ্ডের নেতৃত্বে তাঁদের আন্দোলন চলবে। তাঁদের অভিযোগ, মানিকতলার বিধায়ক পরেশ পাল ও তাঁর কিছু অনুগামী এই নির্মাণে মদত দিচ্ছেন। পরেশবাবু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মানিকতলা মেন রোড ও কাঁকুড়গাছি রোডের সংযোগস্থল হিসেবে স্থানীয়েরা ১০ ফুট চওড়া একটি রাস্তা ব্যবহার করতেন। সম্প্রতি বাড়িটি তৈরির জন্য ওই রাস্তাটি টিন দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাইলিংয়ের কাজ হচ্ছে। বোর্ডে লেখা নির্মাণকাজ ও নিরাপত্তার স্বার্থে রাত সাড়ে দশটা থেকে সকাল সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত এই রাস্তা বন্ধ থাকবে। রাজ্য সরকারের বাজার দর বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ কোলের অভিযোগ, “প্রথমে এ ভাবে রাস্তাটি নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিল। তার পরে পুরো বন্ধ করে দেওয়া হল।”
কাঁকুড়গাছি সেকেন্ড লেনের বাসিন্দা শীলা রায় বলেন, “সারা জীবন যে রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করেছি, সেটি যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, কখনও ভাবিনি।” আর এক বাসিন্দা নিবেদিতা দে বলেন, “রাস্তাটি বন্ধ থাকায় এখন যেখান দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে, রাতে সেটা বিপজ্জনক।” এক গৃহবধূ পাপিয়া বিশ্বাস বলেন, “আমরা রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হল।”
সাধনবাবুর দাবি, “এ ভাবে রাস্তা বন্ধ করা যায় না।” তাঁর অভিযোগ, ওই নির্মাণকাজের দায়িত্ব যিনি পেয়েছেন, পরেশবাবু তাঁর ঘনিষ্ঠ। সাধনবাবু বলেন, “উনি (পরেশ) এই এলাকার কেউ নন। দেখি কার মদতে, কী ভাবে বাড়িটা হয়।” জবাবে পরেশবাবু বলেন, “আমার জন্ম, বড় হওয়া সবই ওই তল্লাটে। আমিও ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতাম। এখন সাধনদা বিধায়ক। কিন্তু উনি তো নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের অর্ধেক জায়গায় যেতেই পারেন না।” এ প্রসঙ্গে সাধনবাবু বলেন, “আমি এলাকার ছেলেদের বলেছি, আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে। বিষয়টি আমরা মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও আনব।”
বাড়িটির নির্মাতা কেশবদেও ওরফে বাবলু তিওয়ারির সঙ্গে পরিচয়ের কথা স্বীকার করে পরেশবাবু বলেন, “আমি ওঁকে বলেছিলাম রাস্তা যেন পুরো আটকানো না হয়। যাতায়াতের জন্য কিছুটা ছেড়ে দিতে বলেছি।” বাবলুবাবু বলেন, “যে অংশ ঘেরা হয়েছে, সেটি ৬৭ নম্বর কাঁকুড়গাছি সেকেন্ড লেনের অধীন। আমি বেআইনি নির্মাণ করছি না। কাজ চলাকালীন রাস্তাটি খোলা রাখলে দুর্ঘটনার ভয় থাকে। পরে রাস্তাটি খুলে দেওয়া হবে।”
কলকাতা পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং) অনিন্দ্য কারফর্মা জানান, কাঁকুড়গাছি সেকেন্ড লেনে বেআইনি নির্মাণের কথা তাঁর জানা নেই। তবে পুরসভা সূত্রের খবর, ৬ মে তিন নম্বর বরোর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে জি+৪ বাড়িটি তৈরির নকশা মঞ্জুর হয়েছে বাবলু তিওয়ারির নামে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “রাস্তা খোলা রাখতে আমরা আইনি পরামর্শ নিয়েছি। শীঘ্রই আদালতে যাব।” |