সোয়েটার রয়েছে। আছে জয়নগরের মোয়াও। কলকাতা থেকে শুধু উধাও হয়ে গিয়েছে শীতের আমেজটাই।
রবিবার, ডিসেম্বরের প্রথম দিনে মালুম হল না উত্তুরে হাওয়ার দাপট। যা এই সময়ে কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, এ দিন কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি বেশি। গত পাঁচ বছরের নিরিখে এটাই ডিসেম্বরের উষ্ণতম প্রথম দিন বলে আবহবিজ্ঞানীরা জানান। শনিবার উষ্ণতার নিরিখে এক দশকের রেকর্ড গড়ে ফেলেছে নভেম্বরের শেষ দিনও।
আবহাওয়া দফতরের খাতায়-কলমে এখনও পাকাপাকি ভাবে শীত আসার সময় হয়নি। তবে নভেম্বরের শেষ থেকেই শীতের আমেজ জাঁকিয়ে বসে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। যেমন হয়েছিল গত বছরেও। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালে ডিসেম্বরের প্রথম দিনে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৩ ডিগ্রি কম। তার আগের দশ বছরের মধ্যে সেটাই ছিল ডিসেম্বরের শীতলতম প্রথম দিন।
আম-বাঙালির জন্য অবশ্য ডিসেম্বর মানেই শীত শুরু। এই মাসের প্রথম রবিবার থেকেই শীত-উৎসব শুরু হয় শহরে। এ বছর আবার প্রথম দিনটাই পড়েছে রবিবার। কিন্তু তাতেও শহর ঘুরতে বেরোনো মানুষ চোখে পড়েনি।
সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, ডিসেম্বরের রবিবার মানেই কলকাতা সংলগ্ন জেলা থেকে ট্রেনে-বাসে চেপে এসে ময়দান, ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা ঘোরা। কিন্তু এ দিন বনগাঁ বা মেন লাইনের ট্রেনে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। দুপুরে ডাউন মাঝেরহাট লোকালে দেখা মিলল বছর ছয়েকের রিন্টু দাসের। দাদু-মা-বাবার সঙ্গে কলকাতা দেখতে চলেছে সে। তার দাদু বিজয়গোপাল কুণ্ডু জানালেন, নাতির বায়না রাখতে গরমেই বেরিয়েছেন।
বছর চব্বিশের স্নেহাংশু বিশ্বাস আবার এসেছেন বান্ধবী রিনার আবদার মেটাতে। হাবরার বাসিন্দা স্নেহাংশু চাকরি সূত্রে ভিন্ রাজ্যে থাকেন। ছুটিতে বাড়ি এসেছেন। রবিবার তাই বান্ধবীর সঙ্গে গঙ্গাপারে ঘুরছিলেন তিনি।
তবে শহর বেড়াতে আসা কারও গায়েই এ দিন শীতবস্ত্র চোখে পড়েনি। খদ্দেরের অভাবে মাছি তাড়িয়েছেন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার বা হেদুয়ার সোয়েটারের দোকানিরাও। দার্জিলিং থেকে প্রথম কলকাতায় এসেছেন প্রেরণা তামাঙ্গ। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের সামনে দোকানে বসে বললেন, “তেমন বিক্রি হয়নি। শীত পড়লে হয়তো ব্যবসা ভাল হবে।”এখানেই দোকান দিয়েছেন প্রেম সিংহ। হিমাচলপ্রদেশ থেকে চল্লিশ বছর ধরে শীতবস্ত্র বিক্রি করতে এই শহরে আসছেন। তিনি বললেন, “আগে ডিসেম্বরে ভালই ঠান্ডা পড়ত। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে কেনা শুরু হত। তেমন শীত কোথায়?” মাঝ ডিসেম্বরের আগে বাজার জমবে না বলেই তাঁর ধারণা।
এ বছর কিন্তু নভেম্বর থেকে দাপটে ব্যাটিং শুরু করেছিল ঠান্ডা। মাঝ নভেম্বরেই উত্তুরে হাওয়ার দাপট দেখেছিল শহর। তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। আলমারি থেকে বেরিয়েছিল কম্বল-সোয়েটার-মাফলার। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, “নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পর থেকে দু’টি ঘূর্ণিঝড়, হেলেন ও লহরের আগমনেই বদলেছে পরিস্থিতি। দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে জলীয় বাষ্প ও মেঘ ঢুকে চড়তে থাকে তাপমাত্রা।”
শীত তা হলে আসবে কবে?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের আবহবিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগামী দিন কয়েক তাপমাত্রা একটু কমবে। মাঝ সপ্তাহে তা ১৬ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করবে। এক বিজ্ঞানী বলেন, “শীত আসার আগে পর্যায়ক্রমে ঠান্ডা-গরম পড়তে থাকে। দিন কয়েক ঠান্ডা বাড়ার পরেই ফের গরম পড়বে। ওই গরমের পর্যায় কেটে গেলেই শীত থিতু হবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে।” |