কেন্দ্রেরই গড়া বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলিতে উৎপাদন ঊর্ধ্বমুখী। তা সত্ত্বেও চিনি প্যাকেজিংয়ে চটের বস্তার ব্যবহার ২০ শতাংশ এবং খাদ্যশস্যে ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন?
এই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রের কাছে কড়া চিঠি পাঠাচ্ছে রাজ্য সরকার। তারা ইতিমধ্যেই ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছে। আজ, সোমবার এই বিষয়ে বিধানসভাতেও আলোচনা হবে। তার পরেই দিল্লিকে চিঠি লেখা হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। শাসক দল তৃণমূলের সাংসদেরা তো প্রতিবাদ জানাবেনই। রাজ্যের অন্য সাংসদেরাও যাতে দিল্লিতে এর প্রতিবাদ করেন, সেই অনুরোধ জানাতে পারে সরকার।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অর্থ বিষয়ক কমিটির বৈঠকে চিনি এবং খাদ্যশস্য প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে চটের বস্তার ব্যবহার যথাক্রমে ২০ এবং ১০ শতাংশ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বণিকমহল জানায়, এই সিদ্ধান্তের জেরে চটশিল্পের বার্ষিক ক্ষতি প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী কে এস রাওয়ের বক্তব্য, চটের বস্তার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিপুল ফারাক। তাই শর্ত শিথিল করে চটের বস্তার ব্যবহার কমানোর কথা ভাবতে হয়েছে। অথচ বণিকমহল বলছে, কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের নির্দেশে ২০০৯ সালে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়। বিভিন্ন হিসেব, চটকলগুলির খাতাপত্র যাচাই করে কমিটি ওই বছর অগস্টে যে-রিপোর্ট পেশ করে, তার মূল বক্তব্য ছিল, পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলিতে উৎপাদন ঊর্ধ্বমুখী। ২০০৪ সাল থেকে এই রাজ্যের চটকলগুলির সম্পদ ৮১৫ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে হয় ১৯৪৫ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ ওই সময়ে ১৩৯ শতাংশ সম্পদ বেড়েছে।
কেন্দ্র নিজেই যেখানে রিপোর্ট তৈরি করে বলছে, রাজ্যে চটশিল্প ঠিক পথে চলছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে উৎপাদন নিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে কেন, প্রশ্ন তুলেছে বণিকমহল। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “কোন যুক্তিতে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী বললেন যে, চটের বস্তার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে বিস্তর ফারাক? চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলছি, ওরা কোনও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না।” রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কেন্দ্র নিজেদের আইন (জুট প্যাকেজিং মেটিরিয়ালস কম্পালসরি ইউজ ইন প্যাকিং কমোডিটিজ অ্যাক্ট, ১৯৮৭) নিজেরাই বারবার ভাঙছে। এই সিদ্ধান্তে পাটচাষি ও চটকল শ্রমিকেরা বিপাকে পড়বেন। |