নিয়মিত উত্থান-পতনের পর বাজারের বর্তমান অবস্থান বেশ ভালই বলতে হবে।
সেনসেক্স যখন আবার ২১ হাজারের দোরগোড়ায়, নিফটি তখন পৌঁছেছে ৬১৭৬ অঙ্কে। দুই সূচকের এতটা উচ্চতা সত্ত্বেও এদের অন্তর্গত শেয়ারের দাম ও আয়ের অনুপাত (পি ই রেশিও) ১৮-র আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। অর্থাৎ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আরও দাম বাড়ার জায়গা আছে বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে পি ই রেশিও-র বর্তমান অবস্থান। বাজারের এই উত্থানে অনেক ভাল শেয়ারই এখনও কাঁধ মেলায়নি। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র যথেষ্ট ম্লান। একই অবস্থা সিমেন্ট এবং বিদ্যুৎ শিল্পের। হালে কিঞ্চিৎ মুখ তুলেছে ইস্পাত শেয়ারগুলি। দীর্ঘ দিন পর হাজার পেরিয়েছে এল অ্যান্ড টি। গাড়ি শিল্পের অবস্থা মন্দের ভাল। খানিকটা ওঠার পর গতি হারিয়েছে এফএমসিজি শেয়ারগুলি।
সূচককে এই উঁচু জায়গায় ধরে রেখেছে মূলত তথ্যপ্রযুক্তি এবং ওষুধ শেয়ার। এতটা ওঠার পরও তথ্যপ্রযুক্তির আরও ওঠার জায়গা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরতে শুরু করায় ওই দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বাজেট আবার ফুলেফেঁপে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফসল তুলবে ভারতীয় আই টি কোম্পানিগুলি। ভারতীয় অর্থনীতির পালে একটু হাওয়া লাগলেই যে-সব শেয়ার বেশ কিছু দিন ঝিমিয়ে আছে, তারাও জেগে উঠবে বলে আশা করা যায়। অর্থাৎ দুই সূচক আবার নতুন নজির গড়বে, এমন স্বপ্ন দেখাই যেতে পারে। |
জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির উপাদান
(জুলাই-সেপ্টেম্বর) |
|
|
২০১৩-১৪
শতাংশ |
২০১২-১৩
শতাংশ |
• কৃষি
• বিদ্যুৎ, গ্যাস কারখানায় উৎপাদন
• খনন শিল্প
• আর্থিক পরিষেবা, আবাসন,
ব্যবসায়িক পরিষেবা
• নির্মাণ শিল্প
• হোটেল, পরিবহণ, যোগাযোগ |
৪.৬
৭.৭
১.০
(-)০.৪
১০
৪.৩
৪.০ |
১.৭
৩.২
০.১
১.৭
৮.৩
৩.১
৬.৮ |
মোট জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ৪.৮ |
|
যে-দু’টি জুজুকে সূচক ভয় পাচ্ছে, সেগুলি হল পণ্যমূল্যের অনমনীয়তা এবং মার্কিন অর্থনীতিতে ত্রাণ প্রকল্প সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কা। এরা যদি খুব প্রতিকূলে না-যায়, তবে সূচক ভাল জায়গাতেই অবস্থান করবে বলে আশা করা যায়।
আর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই হাতে এসে যাবে পাঁচটি রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল। ফল বাজারের পছন্দ হলে সাময়িক ভাবে তেড়েফুঁড়ে উঠতে পারে সূচক। আগামী লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল কোন দিকে যেতে পারে, তারও কিছুটা ইঙ্গিত মিলতে পারে এই ফলাফলে। চলতি আর্থিক বছরের দ্বিতীয় তিন মাসে জাতীয় উৎপাদন ৪.৮ শতাংশে পৌঁছে যাওয়ার খবর শেয়ার সূচককে উসকে দিতে পারে আজ সোমবার।
অবশেষে মূল্যবৃদ্ধি-সূচক বন্ড ইস্যু সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজারে আত্মপ্রকাশ করতে পারে এই বন্ড। এই বন্ডে সুদ হবে দু’রকম। স্থির সুদের হার ১.৫ শতাংশ। এ ছাড়া থাকবে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সুদ। তিন মাসে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির গড় হারই হবে পরিবর্তনশীল সুদ। বর্তমানে এই হার ৯.৮৪ শতাংশ। অর্থাৎ প্রথম বাজারে আসার সময়ে এই বন্ডে সুদের হার হতে পারে ১১.৩৪ শতাংশের আশপাশে। সুদ পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে ৬ মাস অন্তর। প্রতিটি বন্ডের ফেস ভ্যালু ৫,০০০ টাকা। এই প্রকল্পে বছরে সর্বাধিক লগ্নি করা যাবে ৫ লক্ষ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ১০ বছর। সুদ ক্রমপুঞ্জিত হবে ৬ মাস অন্তর। স্পষ্ট করে বলা না-হলেও এই সুদ করযোগ্য হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় টাকার প্রকৃত মূল্যপতন বাবদ ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়াই এই বন্ডের লক্ষ্য। লগ্নির জায়গা হিসেবে সোনা থেকে মানুষের নজর সরিয়ে আনাও এই বন্ড ইস্যুর আর এক উদ্দেশ্য।
নতুন করে বাজারে এসেছে করমুক্ত বন্ড। ইস্যুকারী সংস্থাগুলি হল হাডকো (দ্বিতীয় পর্যায়) এবং এনটিপিসি। ‘ট্রিপল-এ’ রেটিংযুক্ত এনটিপিসি ব্যক্তিগত ক্ষেত্রের লগ্নিকারীদের ১০, ১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদে করমুক্ত সুদ দেবে যথাক্রমে ৮.৬৬, ৮.৭৩ এবং ৮.৯১ শতাংশ হারে। ইস্যু খুলছে ৩ ডিসেম্বর, চলবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। |