অপেক্ষার ৩৫ বছর পার, মৃত স্বামীর পেনশন পেলেন বৃদ্ধা
গ্রামের স্কুলের জন্য তিনিই চার বিঘা জমি দান করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদও সামলেছেন। কিন্তু মৃত্যুর ৩৪ বছর পার হলেও স্বামীর পেনশনের এক টাকাও পাননি ওই প্রধান শিক্ষকের অশীতিপর বিধবা স্ত্রী। গত বছর তাই সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চিঠি লিখে নিজের কষ্টের কথা জানিয়েছিলেন পাড়ুই থানার কেন্দ্রডাঙাল গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আবুল খালেকের বৃদ্ধা স্ত্রী সাগিনা বিবি। অবশেষে শনিবার স্বামীর পেনশনের চিঠি এসে পৌঁছল ওই বৃদ্ধার বাড়িতে।
গত বছর ২৮ জুলাই বৃদ্ধার বঞ্চনার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। প্রায় ১৬ মাস পরে সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের যখন ফল মিলল, তখন বৃদ্ধা কার্যত শয্যাশায়ী। চলাফেরার ক্ষমতাও হারিয়েছেন। এ দিন নিজের বাড়িতে কিছুটা ক্ষোভ, কিছুটা স্বস্তি মিশিয়ে অস্পষ্ট গলায় বললেন, “আমার স্বামীকে এলাকার মানুষ এক জন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে দেখতেন। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রাপ্য দাবি পেতে হন্যে হয়ে সরকারের দফতরে দফতরে ঘুরেছি। কিন্তু অন্নসংস্থানের জন্য ওইটুকুও পাইনি। বরং অন্যের মুখাপেক্ষী হয়েই এত বছর বেঁচে থাকতে হয়েছে। অনেক দেরিতে হলেও স্বামীর না পাওয়া পেনশন পাব, এটাই শান্তির।” এত দিন পরে মায়ের মুখে হাসি ফুটতে দেখে খুশি ছেলে মহম্মদ সাদ্দাকাসও।
পরিবার ও জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে জানা গিয়েছে, আবুল খালেক ১৯৫৬ সালের ১ জুলাই কেন্দ্রডাঙাল আংশিক বুনিয়াদী বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। বোলপুর পশ্চিম চক্রের অন্তর্গত এই শিক্ষকের অবসর নেওয়ার কথা ছিল ১৯৭৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু এলাকায় আদর্শ শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিত আবদুল খালেক অসুস্থ হয়ে তার আগেই ওই বছরেরই ২৯ এপ্রিল মারা যান। পরিবারের হাল ধরেন সাগিনা বিবি। আর সেই কারণেই স্বামীর পেনশন পাওয়াটা তাঁর জরুরি ছিল খুব। কিন্তু অভিযোগ, আব্দুল খালেকের মৃত্যুর পরে পেনশনের জন্য বারবার সরকারের বিভিন্ন দফতরে আর্জি জানিয়েও সাগিনা বিবি কোনও সুরাহা পাননি। শিক্ষা দফতর থেকে সংশ্লিষ্ট সব মহলকেই পেনশন না পাওয়ার বিষয়টি তিনি জানিয়েছিলেন। অভিযোগ, ৩৪ বছরেও তাঁর কথা কেউ শোনেনি। গত বছর শেষচেষ্টা হিসেবে তিনি স্বামীর পেনশন থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেই লিখে পাঠিয়েছিলেন। ঘটনার খবর পেয়ে তখনই এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি রাজা ঘোষও। তখন বোলপুর পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) জানিয়েছিলেন, বিষয়টি বহু দিন আগের। তাই বৃদ্ধার আবেদন পেয়ে ‘সার্ভিস রোল’ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পেনশন চালুর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল।
এ দিন রাজা ঘোষ বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং আমাদের সরকার মানুষের প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর। সেই অনুযায়ী ওই বৃদ্ধার যা প্রাপ্য, তা-ই তিনি পেলেন।” যদিও তাঁর দাবি, সাগিনা বিবির পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা ছিল। সরকারি নিয়ম, নীতি মেনে তা সমাধান করা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.