ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচাগার গড়তে আলাদা ভাবে টাকা বরাদ্দ করা হয় প্রাথমিক স্কুলগুলির জন্য। কিন্তু বর্ধমান জেলায় পাঁচশোর বেশি স্কুলে এখনও গড়ে ওঠেনি এই পৃথক শৌচাগার। কোথাও জায়গার সমস্যা, কোথাও আবার অন্য নির্মাণকাজ বাকি থাকায় তা আগে করাকারণ হিসেবে এ ধরনের নানা সমস্যার কথাই জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি।
নানা প্রাথমিক স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মতে, অনেক ছাত্রীর স্কুলে না যেতে চাওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ পৃথক শৌচাগার না থাকা। তাঁরা আরও জানান, পৃথক শৌচাগার থাকলে ছাত্রদের সঙ্গে একই শৌচাগার ব্যবহারের বিড়ম্বনা এড়ানো ছাড়াও রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কারণ, খুদে পড়ুয়ারা তুলনায় কম সাবধানী হওয়ায় প্রাথমিক স্কুলে এই ধরনের সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েই যায়। কিন্তু বর্ধমান জেলার বেশ বড় সংখ্যক স্কুলে আলাদা শৌচাগার না থাকায় বিপাকে পড়ে ছাত্রীরা।
স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান জেলায় মোট প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৩৩০৩। তার মধ্যে ২৭৯৩টি স্কুলে ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচাগার গড়া হয়েছে। জেলার মোট ৩১টি ব্লকের মধ্যে মধ্যে মাত্র ৫টিতে সব প্রাথমিক স্কুলে পৃথক শৌচাগার রয়েছে। এই ব্লকগুলি হল বর্ধমান ১ ও ২, কালনা ১ ও ২ এবং পূর্বস্থলী ২।
সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি কাঁকসা ব্লকে। সেখানকার ১০৭টির মধ্যে ৪০টিতে, অর্থাত্ প্রায় ৩৭% স্কুলে পৃথক শৌচাগার নেই। এ ছাড়া আউশগ্রাম ২ ব্লকে ৩৬.০৯%, কাটোয়া ১ ব্লকে ৩৫.৩৫%, সালানপুরে ৩১.৪৩%, মন্তেশ্বরে ৩১.০৭%, রায়না ২ ব্লকে ২৬.৫৫% স্কুলে পৃথক শৌচাগার নেই। তুলনায় কিছুটা হলেও ভাল পরিস্থিতি রানিগঞ্জ, পাণ্ডবেশ্বর, গলসি ও জামালপুর ব্লকে। রানিগঞ্জে ৪৫টির মধ্যে ৪১টি, পাণ্ডবেশ্বরের ৪৪টির মধ্যে ৪১টি, গলসি ১ ব্লকে ১১৫টির মধ্যে ১০৯টি এবং জামালপুরে ১৬৭টির মধ্যে ১৫৭টি স্কুলে ইতিমধ্যেই পৃথক শৌচাগার তৈরি হয়ে গিয়েছে। |
এক নজরে |
• জেলায় মোট প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ৩৩০৩।
• ছাত্রীদের শৌচাগার গড়তে স্কুল পিছু ৬২ হাজার টাকা দেয় সর্বশিক্ষা অভিযান।
• ছাত্রীদের আলাদা শৌচাগার নেই ৫১০টি স্কুলে।
• বর্ধমান ১ ও ২, কালনা ১ ও ২ এবং পূর্বস্থলী ২ ব্লকের সব স্কুলে এই ব্যবস্থা রয়েছে।
• সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কাঁকসা, আউশগ্রাম ২ ও কাটোয়া ১ ব্লকের।
|
|
সর্বশিক্ষা অভিযানের বর্ধমান জেলা প্রকল্প আধিকারিক ভাস্কর পাল বলেন, “পৃথক শৌচাগার গড়ার জন্য স্কুল পিছু ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। মাস দুয়েক আগে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক মিলিয়ে মোট ১৬২১টি স্কুলকে ছাত্রীদের জন্য পৃথক শৌচাগার গড়ার টাকা পাঠানো হয়েছে।”
সর্বশিক্ষা অভিযান সূত্রে জানা যায়, স্কুলগুলিতে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, টাকা পেয়েও অনেক স্কুল এখনও শৌচাগার তৈরি করে উঠতে পারেনি। কারণ হিসেবে কোনও কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অন্য নির্মাণকাজ বাকি থাকায় আগে তাতে হাত দেওয়া হয়েছে। সেটা হয়ে গেলে পরে ছাত্রীদের শৌচাগার গড়া হবে। শহরের কিছু স্কুলে আবার জায়গার সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সর্বশিক্ষা অভিযানের এক আধিকারিক। তাঁর আরও দাবি, জেলার কয়েকটি স্কুলে আবার পরিচালন সমিতির গাফিলতির জন্যও শৌচাগার গড়ার কাজ আটকে রয়েছে।
কাঁকসা ১ চক্রের বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখা গিয়েছে, প্রয়াগপুর প্রাথমিক স্কুল, হাজরাবেড়া প্রাথমিক স্কুল, পানাগড় বারুইপাড়া মেটেপাড়া প্রাথমিক স্কুল, ত্রিলোকচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুল, ডোমরা প্রাথমিক স্কুল, পানাগড় বাজার রেলপাড় প্রাথমিক স্কুল-সহ অনেক জায়গাতেই পৃথক শৌচাগার নেই। ত্রিলোকচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বন্ধন দাস বলেন, “পৃথক শৌচাগার গড়ার টাকা এসে গিয়েছে। দ্রুত কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলা হবে।” গলসির চাকতেঁতুল প্রাথমিক স্কুলে পৃথক শৌচাগার আছে। তবে সরকারি ভাবে নয়, তা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তা তৈরি করে দিয়েছে বলে জানালেন প্রধান শিক্ষক ক্ষেত্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগ বলেন, “যে সব স্কুলে পৃথক শৌচাগার নেই সেগুলির তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। শীঘ্রই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।” বিশ্ব এডস্ দিবসে অনুষ্ঠান। বিশ্ব এডস্ দিবস উপলক্ষে রবিবার জেলা জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বর, বিসি রোড ও নানা জায়গায় মিছিল করে পড়ুয়া ও নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে এড্স বিষয়ক সচেতনতা গড়ে তুলতে কর্মী, চিকিত্সক এবং নার্সেরা মিছিল বের করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক চিকিত্সক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুর প্রয়াস জন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য চেতনা উন্নয়ন সমিতির পক্ষ থেকেও এ দিন দুর্গাপুরের রাঁচি কলোনিতে মিছিল বের করা হয়। এরপরে স্থানীয় ক্ষুদিরাম মাঠে একটি সমাবেশ হয়। সেখানে ছিলেন স্থানীয় বোরো চেয়ারম্যান চন্দন সাহা। ছিল বিনামূল্যে রক্তের শ্রেণি নির্ণয়ের ব্যবস্থা। |