ভর দুপুরে অন্ধকার ঘুপচি ঘরে কাজ হচ্ছে মোমবাতি জ্বালিয়ে। একটি মাত্র শৌচাগার সাফাই হয় না। রাত নামলেই পাশের সরকারি আবাসনে মদ বিক্রি শুরু হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। কোনও স্থানীয় বাজার নয়, এই ছবি খোদ আসানসোল আদলত চত্বরের।
আদালত ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই পরিকাঠামোর সমস্যায় ভুগছে এই আদালত। প্রায় চার মাস বিচারক নেই আসানসোলের বিশেষ আদালতে। ঝুলে রয়েছে মামলা। ফিরে যাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা। আদালত চত্বরে জেনারেটর থাকলেও ঠিকাদার পর্যাপ্ত তেল না পাওয়ায় প্রতি মাসে অন্তত ১০ দিন লোডশেডিং হলে আদালতে মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ হয়। |
নির্দিষ্ট জায়গা নেই, তাই রাস্তার উপরেই রাখা মোটরবাইক।—নিজস্ব চিত্র। |
এই আদালতের আইনজীবী গোপাল নন্দ, অশোক ঘোষ জানান, নির্দিষ্ট পার্কিং জোন না থাকায় যেখানে সেখানে গাড়ি রাখতে বাধ্য হন আদালত কর্মী থেকে বিচার প্রার্থীরা। ফলে, প্রায়ই ঘটছে গাড়ি চুরির ঘটনা। কয়েক বার আইনজীবীদের গাড়িও চুরি হয়েছে। আদালত চত্বরে নেই কোনও সিসিটিভি। মাস দুয়েক আগে দিনের বেলা আদালত চত্বরের সামনে থেকে মোটরবাইকে চেপে এসে দুই দুষ্কৃতী এক সরকারি কর্মচারীর হাত থেকে টাকার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে পালায়।
কিছু আইনজীবী জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই বিভিন্ন ছোট কেসে জরিমানা নেওয়ার রসিদ অমিল। এই রসিদ সাধারণত আসে রাজ্যের বিচার বিভাগ থেকে। ফলে যে সমস্ত আসামীদের জরিমানা দিলেই ছাড়া পেয়ে যাওয়ার কথা সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। পুলিশ কোনও গাড়ি বাজেয়াপ্ত করলেও হচ্ছে সমস্যা। এ ক্ষেত্রে মোটর ভেহিক্যালস আইন অনুযায়ী জরিমানা জমা দেওয়ার কথা থাকলেও রসিদ না থাকায় জরিমান দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে দিনের পর দিন বাজেয়াপ্ত হয়ে থাকছে গাড়ি। আইনজীবীদের ক্ষোভ, আদালত চত্বরে অপেক্ষা করার জন্য কোনও প্রতীক্ষালয় নেই। ফলে, বিচারপ্রার্থী ও এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এফিডেফিট করতে আসা ব্যক্তিরা নাকাল হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চার দিক ঘেরা আদালত চত্বরের মাঝখানে জল ট্যাঙ্কের পাশের এক সরকারি আবাসনে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয়ে যায় মদ বিক্রির কারবার। আদালত চত্বরে রয়েছে একটিই শৌচাগার। মহিলাদের জন্য আলাদা কোনও শৌচাগার নেই। আইনজীবী সমীর ভট্টাচার্য জানান, মহকুমাশাসকের কার্যালয় চত্বর দিয়ে আদালতের নতুন ভবনে যাওয়ার প্রধান রাস্তাটি এখনও কাঁচা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই এই রাস্তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। মাঝে মধ্যে আবার এই রাস্তাটির মূল দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আসানসোল বার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক বাণী মণ্ডল দাবি, “অবাধে মদ বিক্রি-সহ আদালতের নানা সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়ে আমরা মন্ত্রী, মহকুমাশাসক ও জেলা আদালতের বিচারককে বারবার জানিয়েছি। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় আমরা প্রতীকি ধর্মঘটও করেছি। এ বার বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো।” |