দিনরাত ছুটছে একের পর এক যানবাহন, পণ্যবোঝাই লরি। রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পশহর দুর্গাপুর ও আসানসোলের বুক চিরে যাওয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়কে ব্যস্ততা লেগে সব সময়ই। অথচ, এই ব্যস্ত সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। ২ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে রয়েছে একাধিক বাইপাস ও বেশ কয়েকটি চৌমাথা। কিন্তু বাইপাসের মুখে বা দুর্ঘটনাপ্রবণ চৌমাথাগুলিতে কোনও সিগন্যাল নেই। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণহানিও হচ্ছে বলে অভিযোগ।
দুর্গাপুর থেকে বরাকরের ডুবুরডিহি চেকপোস্ট পর্যন্ত ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গেলে দেখা যাবে প্রায় সতেরোটি জনবহুল ‘বাইপাস’ আছে। একাধিক চৌমাথাও আছে। এখান দিয়ে দুই শিল্পশহরের নানা প্রান্তে যাতায়াত করেন বাসিন্দারা। সব সময়ে চলে যানবাহনও। অথচ বেশির ভাগ জায়গাতেই সিগন্যাল-বাতি নেই। সড়কের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করেন সিপিভিএফ বা ট্রাফিক পুলিশ কর্মী। আবার বেশ কিছু মোড়ে সিগন্যাল-বাতির খুঁটি দুমড়ে মুচড়ে পড়ে থাকতেও দেখা গিয়েছে। |
নিয়ামতপুরের চৌমাথা মোড়ে অকেজো সিগন্যাল ব্যবস্থা। খেয়ালখুশি মতো চলছে লরি ও গাড়ি। |
যেমন, আসানসোলের সেনর্যালে রোড ও দু’নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগ স্থলে একটিও সিগন্যাল বাতির খুঁটি অক্ষত নেই। কুলটির চৌরঙ্গী এলাকার অবস্থাও একইরকম। রাস্তার মাঝখানে উঁচু করে লাগানো রয়েছে সিগন্যাল বাতির ভাঙা খোলস। রানিগঞ্জের রানিসায়র মোড়ের কাছেও উধাও সিগন্যাল-বাতি। আসানসোলের ঘাঘরবুড়ি মন্দিরের কাছে আবার সিগন্যাল বাতি তো নেই, যান নিয়ন্ত্রণকারী পুলিশ বা সিপিভিএফ কর্মীরও দেখা মেলে ভার। জামুড়িয়ার শ্রীপুর ফাঁড়ি মোড়েরও একই অবস্থা। দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি, এবিএল, মুচিপাড়া এলাকায় সিগন্যাল বাতি রয়েছে, কিন্তু তা স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া দুর্গাপুরের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা সিটি সেন্টার ও জাতীয় সড়কের সংযোগস্থলেও বেশিরভাগ সময়ে সিগন্যাল-বাতি কাজ করে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এই চৌমাথায় যান নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনও পুলিশ কর্মী বা সিপিভিএফের দেখা মেলে না বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। |
আসানসোলের জুবিলি মোড়ে ভেঙে পড়ে সিগন্যাল পোস্ট। |
অথচ এই প্রত্যেকটি চৌমাথা বা বাইপাসেই যে সিগন্যাল-বাতি থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (ট্রাফিক) সুরেশ কুমার চাডিভে। তাঁর যুক্তি, এই সড়ক ধরে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে যান চলাচল করে। শহরের মধ্যে বা শহর থেকে বাইরে যাতায়াতকারী যানবাহন ও পথচারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই উন্নতমানের সিগন্যাল বাতি লাগানো উচিত। যাতে অন্তত বেশ কিছুটা দূর থেকে সিগন্যালের আলো দেখা যায়। তিনি বলেন, “আমরা উন্নতমানের সিগন্যাল বাতি লাগানোয় উদ্যোগী হয়েছি। কিছু বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গে কথাও হয়েছে। তাঁরা সিগন্যাল বাতি লাগাবে ও নিজেদের বিজ্ঞাপন দেবে।” কিন্তু পুলিশের এই উদ্যোগ কার্যকর করতে গিয়ে কিছু সমস্যা দেখা গিয়েছে। কমিশনারেটের এক পুলিশ আধিকারিক জানান, ওই বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো নিজেদের বিজ্ঞাপনের স্বার্থে শহরের জনবহুল এলাকায় সিগন্যাল বাতি লাগাতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এমন অনেক জায়গা আছে যেগুলো তুলনামূলক কম জনবহুল। সেখানে এই সংস্থাগুলো সিগন্যাল বাতি লাগাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। তবে এডিসিপি-র দাবি, বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে উত্সাহিত করতে নতুন পন্থা নেওয়া হচ্ছে। আসানসোল শহরের যান নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করা হবে বলেও জানান সুরেশকুমার চাডিভে। এই কাজের জন্য শহরের বেশ কয়েকটি জনবহুল জায়গাকে প্রাথমিক ভাবে বেছে নিয়েছে পুলিশ। প্রথম উদ্যোগ করা হয়েছে আসানসোলের ভগত্ সিংহ মোড় এলাকায়। এডিসিপি (ট্রাফিক) জানান, এই চৌমাথার চারিদিকে সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। মোড়েই একটি ছবি গ্রহণ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। সেখানে একজন প্রশিক্ষিত কর্মী থাকবেন। তিনি ছবি নেওয়ার পাশাপাশি সেই ছবি ইন্টারনেটের সাহায্যে পুলিশ কন্ট্রোলে পাঠাবেন। ফলে কাজটি অনেক দ্রুত হবে। তবে পুরো ব্যস্থা শেষ হতে আরও কয়েকমাস সময় লাগবে বলে তিনি জানিয়েছেন। |
ছবি দু’টি তুলেছেন শৈলেন সরকার। |