ওয়েবসাইটে জেনে নিতে পারছেন জেলা ফুটবল লিগে কী অবস্থায় রয়েছে আপনার পাড়ার ক্লাব। জেলার ক্লাবগুলো সম্পর্কে তথ্য নেট-দুনিয়ায় এনেছে বর্ধমান জেলা ক্রীড়া সংস্থা। সংস্থার নিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকছে জেলা ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিক্সের হালহকিকত। যদিও রাজ্যের অন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলির প্রায় কারও নিজস্ব কোনও ওয়েবসাইট নেই।
প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ ক্রীড়াক্ষেত্রকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার ভাবনা নিয়েই বর্ধমান জেলা ক্রীড়া সংস্থা কয়েক বছর আগে তাদের ওয়েবসাইটটি চালু করে। এই বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন বর্ধমানের তৎকালীন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। কিন্তু বর্ধমান যেটা পারল রাজ্যের অন্য কোনও জেলা ক্রীড়া সংস্থা সেটা পারল না কেন?
বেশির ভাগ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, সিএবি ও আইএফএ-র ওয়েবসাইটেই তারা প্রয়োজনীয় তথ্য ‘আপডেট’ করে দেন। কিন্তু সিএবি-র ওয়েবসাইটে বিভিন্ন আন্তঃজেলা ক্রিকেট প্রতিযোগিতার নাম ও বিজয়ী দলের নাম থাকলেও জেলাভিত্তিক বিশদ তথ্য নেই। আইএফএ-র সাইটে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় কোন জেলা জিতল, সেই ফল দেওয়া থাকলেও জেলাভিত্তিক খেলার ফল দেওয়া থাকে না। ফলে, কোনও জেলা লিগে কোন ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হল, কে হল রানার্সসেটা সেই জেলার অনেক ক্রীড়াপ্রেমীই জানতে পারেন না।
নদিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বছর ছয়েক আগে আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলাম। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে সেটি বর্তমানে ‘আপডেট’ করা নেই। স্বীকার করতে বাধা নেই, এর জন্য আমাদের গাফিলতিই দায়ী।” একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, “এই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই ওয়েবসাইটে জেলার ম্যাচ প্রতি তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করব।”
ফুটবল ও ক্রিকেটে নতুন খেলোয়াড় তৈরি করে হাওড়া ও হুগলি জেলা দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য স্তরের বিভিন্ন খেলায় ‘সাপ্লাই লাইন’ বলে পরিচিত। কিন্তু এই দুই জেলা ক্রীড়া সংস্থারও নিজস্ব ওয়েবসাইট নেই। আগামী দেড়-দু’মাসের মধ্যে এই ওয়েবসাইট চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন হাওড়া ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। হুগলি জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্যতম সম্পাদক বিকাশ মল্লিক জানান, তাদের জেলা ক্রীড়া সংস্থার অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ-সহ একটি কম্পিউটার থাকলেও প্রয়োজনীয় কর্মী না থাকায় তাঁরা নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু করতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, “২০১৪-র জানুয়ারির মধ্যেই আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওয়েবসাইট চালু করার চেষ্টা করব।”
মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অন্যতম কর্তা বিদ্যুৎ বসু বলেন, “জানুয়ারিতে নির্বাচন জেলা ক্রীড়া সংস্থার। তার পরেই নিজস্ব সাইট চালু করব।” জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরির জন্য টাকার অভাবই মূল সমস্যা বলে দাবি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের।
উত্তরবঙ্গেও ছবিটা আলাদা নয়। উত্তর দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, “ওয়েবসাইট তৈরি ও নিয়মিত ‘আপডেট’ করা খরচ সাপেক্ষ বিষয়। আমাদের সংস্থার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। যখন ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট করার মতো জায়গায় আসব, তখনই চালু করব।”
বর্ধমান জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওয়েবসাইটে জেলা স্তরের ফুটবলে সুপার, প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডিভিশনের খেলার সূচি এবং লিগ টেবিলে কোন দল কোথায় রয়েছে, তা নজর বোলালেই জানা যাবে। অ্যাথলেটিক্স-এ পুরুষ এবং মহিলা বিভাগের জেলা স্তরের প্রতিযোগিতার ফল দেওয়া রয়েছে। জেলা স্তরের ক্রিকেট ক্রীড়াসূচিও রয়েছে।
ওই জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক পীরদাস মণ্ডলের কথায়, “আপাতত আমাদের ওয়েবসাইটে বর্ধমান শহর ও তার আশেপাশের খেলার খবর দেওয়া হয়। মহকুমা স্তরের খেলাগুলির সূচি ও ফল যাতে নিয়মিত ‘আপডেট’ করা যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।” তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব ‘মেল’ পাঠানোর ব্যবস্থা নেই। তাই ওয়েবসাইট থাকলেও মহকুমার খেলাগুলির খবর দেওয়া যাচ্ছে না।
নিজের জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওয়েবসাইট থাকায় জেলার উঠতি খেলোয়াড়েরা পরিচিতি পাচ্ছেন দাবি করে মোহনবাগানের বর্তমান খেলোয়াড় বর্ধমানের জৌগ্রামের বাসিন্দা রাম মালিক বলেন, “ঘরে বসে বিদেশি ফুটবল দেখে জেলা ফুটবলে অনেকেই আগ্রহ হারিয়েছেন। আকর্ষণীয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে জেলা ফুটবলে আরও বেশি করে নিয়ে আসা যেতে পারে। সব জেলা ক্রীড়া সংস্থারই এই বিষয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত।”
চলতি বছরের জাতীয় প্যারালিম্পিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনটি সোনাজয়ী বর্ধমানের কালনার ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্রী শ্রেয়া ভট্টাচার্যের কথায়, “সাঁতারে এমনিতেই প্রচার কম। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওয়েবসাইটগুলিতে যদি ফুটবল-ক্রিকেটের সঙ্গে জেলা স্তরের সাঁতারের ফল দেওয়া যায়, তা হলে আরও বেশি করে কিশোর-কিশোরী সাঁতারে আগ্রহী হবে।”
প্রাক্তন ফুটবলার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “জেলা স্তরে আগে যে পরিমাণ ফুটবল হত, এখন সেটা অনেকটাই কমে গিয়েছে। যদি প্রতিটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার ওয়েবসাইট থাকে তা হলে জেলার খেলাগুলি সবার নজরে থাকবে। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারেরও উদ্যোগী হওয়া উচিত।” |