পরিকল্পনা করে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে গ্রেফতার হলেন স্কুল শিক্ষক স্বামী। বিষ্ণুপুর শহরের গোপালগঞ্জ বুড়োশিবতলার বাসিন্দা, ওই বধূর নাম পারমিতা দে (২৭)। শুক্রবার ভোরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিষ্ণুপুর হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে তাঁর বাবা প্রতাপ চাবড়ী জামাই জয়ন্ত দে-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জয়ন্তকে গ্রেফতার করলেও বাকি অভিযুক্তেরা পালিয়েছেন। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষ বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। মৃত বধূটির চার বছরের ছেলে ওই রাতে বাড়িতে ছিল। তার কাছেও আমরা ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইব।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার ভোর রাতে বাড়িতে ওই বধূ অগ্নিদ্বগ্ধ হন। বিষ্ণুপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বধূটির দেহের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাই কলকাতায় নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাস্তায় তাঁর মৃত্যু হয়। দুপুর ১২টা নাগাদ দেহটি ফের বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়। |
জয়ন্ত-পারমিতা। পারিবারিক অ্যালবাম থেকে। |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার খড়কুসমা গ্রামের পারমিতার সঙ্গে কোতুলপুরের গোগড়া হাইস্কুলের শিক্ষক জয়ন্তর বছর ছয়েক আগে বিয়ে হয়েছিল। বর্তমানে তাঁদের চার বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বধূটির বাবার অভিযোগ, তিন লক্ষ টাকা ও ২০ ভরি সোনার গয়না দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরেও জামাইয়ের পরিবার আরও দু’লক্ষ টাকা চেয়ে চাপ দেয়। তা দিতে না পারায় ওরা আমার একমাত্র মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারল। আমি ওদের সবার কঠিন শাস্তি চাইছি।” তিনি মেয়ের শ্বশুর সুকুমার দে, শাশুড়ি লক্ষ্মী দে, মেজ দেওর জয়দীপ দে, ননদ জয়শ্রী পাল, নন্দাই স্বরূপ পালের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।
এ দিন দুপুরে বধূটির শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ বাড়ির দরজা সিল করে দিয়েছে। হাসপাতালে দেহটির সুরতহাল করেন বিষ্ণুপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুধাকর রায়। তিনি জানান, বধূটি মারাত্মক ভাবে পুড়ে গিয়েছিলেন। তবে দেহে আঘাতের চিহ্ন নজরে আসেনি। হাসপাতালে নিহতের ছেলে জয়মাল্যকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন অলঙ্কার ব্যবসায়ী দাদু প্রতাপবাবু। জয়মাল্য বলছিল, “পিসি, পিসাই, মেজকা মায়ের গায়ে আগুন দিল। বাবাও ছিল।” বলতে বলতে কান্নায় ভরে ওঠে তার চোখ। |