জয়পুর গার্লস স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ (টিআইসি) নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়ল। ফের অভিযোগ উঠল স্কুলের অভ্যন্তরীণ কাজে ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের’।
পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতির নির্দেশ মেনে স্কুলের যে শিক্ষিকাকে টিআইসি হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁর বদলে কেন অন্য শিক্ষিকাকে সেই পদে বসানো হল, তা জানতে চেয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শককে (মাধ্যমিক) কার্যত ‘শো-কজ’ করেছেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ। এই বিষয়টিকে ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বৃহস্পতিবার জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক প্রশাসক হিসাবে জয়পুর গার্লস স্কুলের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই টিআইসি হিসাবে জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর মনোনীত রুমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদলে আর এক শিক্ষিকা অর্চনা চৌধুরীকে টিআইসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এই খবর জেনে এ দিন বিকেলেই শিক্ষা কর্মাধক্ষ্য সুষেণচন্দ্র মাঝি জেলা স্কুল পরিদর্শক রাধারানি মুখোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠান। সূত্রের খবর, চিঠিতে শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ জানতে চেয়েছেন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি একজন প্রতিমন্ত্রীর মযার্দা পান। তবু কী ভাবে রাধারানিদেবী টিআইসি হিসাবে সভাধিপতির মনোনীত প্রার্থীকে সরিয়ে সভাধিপতির নির্দেশ ‘অমান্য’ করলেন। এ প্রসঙ্গে রাধারানিদেবীর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “চিঠি পেয়েছি। চিঠির জবাব দেব। আর কোনও মন্তব্য আমি করব না।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধান শিক্ষিকা চিত্রা সিংহ সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। স্কুলে পরিচালন সমিতিও নেই। তখন প্রশাসক দায়িত্বে ছিলেন। চিত্রাদেবীর অবসরের পর কে টিআইসি হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। সভাধিপতির নির্দেশ অনুযায়ী, জেলা স্কুল পরিদর্শক রুমাদেবীকে টিআইসি হিসেবে নিয়োগ করেন। জটিলতার শুরু সেখানেই। স্কুলটির স্টাফ-কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্য রুমাদেবীকে টিআইসি হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, প্রধান শিক্ষিকার অবসরের পরে তাঁরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অর্চনাদেবী টিআইসি হবেন। দিন কয়েক আগে জেলা সদরে এসে স্কুল পরিদর্শকের কাছে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েও যান শিক্ষিকারা।
এর পরে গত ২২ নভেম্বর স্কুল পরিদর্শক রাধারানিদেবী একটি চিঠিতে শিক্ষা দফতরের আধিকারিক কাশীনাথ দে-কে ওই স্কুলের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে চিঠিতে জানানো হয়, স্টাফ-কাউন্সিলের সঙ্গে কথা বলে প্রশাসক টিআইসি সংক্রান্ত জটিলতার নিস্পত্তি করবেন। বৃহস্পতিবারই কাশীনাথবাবু জয়পুর গার্লস স্কুলের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব বুঝে নেন। রাধারানিদেবী নিজেও এ দিন ওই স্কুলে যান। প্রশাসক স্টাফ-কাউন্সিলের সদস্যদের কাছে টিআইসি নিয়ে মতামত চান। ঐকমত্য না হওয়ায় হাত তুলে ধ্বনিভোট হয়। অর্চনাদেবীর পক্ষে ১১ জন সায় দেন। রুমাদেবীর পক্ষে হাত তোলেন মাত্র তিন জন। কাশীনাথবাবু বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেই অর্চনাদেবীকে টিআইসি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।” অর্চনাদেবীর মন্তব্য, “বেশির ভাগ সদস্য আমাকে চেয়েছেন। তাই দায়িত্ব নিয়েছি।” অন্য দিকে, রুমাদেবীর বক্তব্য, “সভাধিপতি আমাকে যোগ্য মনে করেছিলেন। আমি স্কুলটাকে ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা করছিলাম। একাংশের বিরোধিতায় তা সম্ভব হল না!”
এই ঘটনার খবর জেলা পরিষদে পৌঁছতেই শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুষেণবাবু চিঠি পাঠান স্কুল পরিদর্শককে। সুষেণবাবু এ দিন বলেন, “জেলা পরিষদের শিক্ষা সংক্রান্ত স্থায়ী সমিতিতে জয়পুর গার্লস স্কুলের টিআইসি নিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়ছিল। সেই মোতাবেক রুমাদেবীকেই টিআইসি করার জন্য সভাধিপতি বলেছিলেন। কিন্তু পরে এমন কী ঘটল যে, অন্য এক জনকে ওই পদে নিয়োগ করা হল, তা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে, আমি চিঠি পাঠিয়েছি সভাধিপতির নির্দেশ মেনেই।” জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “নতুন টিআইসি নিয়োগে শিক্ষা স্থায়ী সমিতির নির্দেশ লঙ্ঘিত হয়েছে। কেন তা হল, সে কথাই স্কুল পরিদর্শকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।”
জেলা তৃণমূল শিক্ষা সেলের সভাপতি (মাধ্যমিক) কামাখ্যাপ্রসাদ ত্রিপাঠী অবশ্য বলেছেন, “ঘটনাটি সম্পর্কে বিশদে জানি না। তবে, কোনও স্কুলের টিআইসি নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম নেই। সাধারণত স্টাফ-কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্য যাঁকে চান, তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়।’’ |