শুরু থেকেই তাঁরা চার জন ছিলেন স্কুলের সংগঠক। কিন্তু স্কুল অনুমোদন পাওয়ার পরেও কিছু লোকের দুর্নীতিতে সেখানে চাকরি হয়নি তাঁদের। দীর্ঘ ১৫ বছর লড়ে সুবিচার পেলেন তাঁরা।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, চার জনের মধ্যে তিন জন ওই স্কুলে শিক্ষক-পদে এবং এক জন শিক্ষাকর্মী-পদে কাজ পাওয়ার প্রকৃত অধিকারী। সেই নির্দেশ মেনে চার জনকেই নিয়োগ করা হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে তাঁদের যা প্রাপ্য দাঁড়ায়, দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকার তা মিটিয়ে দেবে বলে শুক্রবার আদালতে জানান স্কুল পরিদর্শক ও সরকারি কৌঁসুলি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই চারটি পদে ১৫ বছর কাজ করার পরে তিন শিক্ষক এবং এক শিক্ষাকর্মীর চাকরি গেল। এত দিন বেতন বাবদ তাঁরা যা পেয়েছেন, তা সরকারের ঘরে ফেরত দিতে হবে।
ঘটনাটি বাঁকুড়ার বেলিয়াড়া জুনিয়র হাইস্কুলের। এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনে অনেক গ্রামেই উদ্যোগী কিছু মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। স্কুল দাঁড়িয়ে গেলে যোগ্যতার ভিত্তিতে সংগঠকদেরই সেখানে শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর কাজ পাওয়ার কথা। বেলিয়াড়া স্কুল নির্মাণে যুক্ত চার জনকেও সেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির ঘূর্ণিতে তাঁদের ছিটকে যেতে হয়। শেষ পর্যন্ত বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক এ দিন হাইকোর্টে বিচারপতি অশোক দাস অধিকারীর এজলাসে হাজির হয়ে ওই চার জনের মধ্যে শিক্ষক-পদে তিন জন এবং শিক্ষাকর্মী-পদে এক জনের নিয়োগপত্রের প্রতিলিপি জমা দেন। বিচারপতি রায়ে বলেছেন, কয়েক জনের দুর্নীতির জন্যই ওই চার জন এত দিন বঞ্চিত হয়েছেন এবং সেই দুর্নীতিতে তৎকালীন স্কুলশিক্ষা অধিকর্তা, তখনকার জেলা স্কুল পরিদর্শক এবং স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্যেরাও যুক্ত ছিলেন।
পরেশকুমার তিওয়ারি-সহ চার জন ’৮৫ সাল থেকে বেলিয়াড়া জুনিয়র হাইস্কুলের সঙ্গে যুক্ত। স্কুলটি তখন সবে গড়ে উঠছিল। ’৯৮-এ সরকার স্কুলটিকে অনুমোদন দেয়। ঠিক হয়, সংগঠক হিসেবে পরেশবাবু-সহ তিন জন শিক্ষক-পদে এবং এক জন শিক্ষাকর্মী-পদে নিয়োগপত্র পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অন্য চার জনকে ওই স্কুলে চাকরিতে বহাল করা হয়। নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় আবেদন-নিবেদন করেন পরেশবাবুরা। শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। কিন্তু সুরাহা হয়নি। নিরুপায় হয়ে তাঁরা হাইকোর্টে মামলা করেন। গত ৩১ জুলাই বিচারপতি দাস অধিকারী নির্দেশ দেন, পরেশবাবুদের ওই স্কুলে অথবা অন্য কোনও স্কুলে চাকরি দিতেই হবে এবং ’৯৮ থেকে হিসেব করে বেতন মিটিয়ে দিতে হবে অবিলম্বে।
পরেশবাবুদের আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমান স্কুলশিক্ষা অধিকর্তা তদন্ত করে জানান, স্কুলের পরিচালন সমিতি, তৎকালীন স্কুলশিক্ষা অধিকর্তা ও জেলা স্কুল পরিদর্শকের যোগসাজশেই ওই চার সংগঠককে স্কুলে চাকরি দেওয়া হয়নি। তার পরেই বিচারপতি জানিয়ে দেন, সংগঠক-শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে নিয়োগপত্র দিতে হবে। এই নির্দেশ যে পালিত হয়েছে, তার প্রমাণপত্র নিয়ে জেলা স্কুল পরিদর্শককে শুক্রবার হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছিল।
জেলা স্কুল পরিদর্শক এ দিন এজলাসে হাজির হয়ে নিয়োগপত্রের প্রতিলিপি জমা দেন। রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী কমলেশ ভট্টচার্য বলেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে সরকার ’৯৮ সাল থেকে ওই তিন শিক্ষক এবং এক শিক্ষাকর্মীর বেতন বাবদ পাওনা মিটিয়ে দেবে। যে-চার জনের চাকরি গিয়েছে, ১৫ বছর ধরে বেতন বাবদ নেওয়া টাকা তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে সচেষ্ট হবে সরকার।
বিচারপতি জানিয়ে দেন, সব নির্দেশ যে পালিত হয়েছে, চার সপ্তাহ পরে সরকারের পক্ষ থেকে তা জানাতে হবে হাইকোর্টে। |