ঠেকেও শিক্ষা হয় না। বেঙ্গালুরুতে এটিএম কাউন্টারের ভিতরে এক মহিলা আক্রান্ত হওয়ার পরে দেশ জুড়ে সতর্কতা জারি হলেও দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলা, নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বেসরকারি কিংবা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমগুলিতে তেমন কোনও হেলদোল চোখে পড়েনি।
বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর এবং তার লাগোয়া এলাকার এটিএম কাউন্টারগুলিতে দেখা গিয়েছে, সিংহভাগেই কোনও রক্ষী নেই। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালের বিপরীতে রয়েছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্ক চত্বরেই তিনটি এটিএম কাউন্টার। তার মধ্যে একটি কাউন্টার রয়েছে ব্যাঙ্কের পিছনে দিকে। প্রায়ান্ধকার ওই গলির এটিএম কাউন্টারে গিয়েও কোনও রক্ষীর দেখা মিলল না। হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েক কদম দূরে রয়েছে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম। সেখানেও ছবিটা একইরকম। |
এমনই একটি এটিএমে দেখা শহরেরই এর প্রবীণ বাসিন্দার সঙ্গে। পেশায় শিক্ষক সেই গ্রাহক বাপ্পা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কোথাওই তো কোনও রক্ষী নেই। দুষ্কৃতী হানা দিলে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় কোথায়!” সদর মোড় ও কৃষ্ণনগর স্টেশনের মাঝামাঝি বৌবাজার এলাকায় সন্ধায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমের কাচ ভাঙা। প্রহরীর প্রশ্ন নেই। কাউন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক রিকশাচালক জানালেন, ‘‘কোনও দিনই এখানে রক্ষী ছিল না। কাল রাতে এলাকার কয়েক জন মদ্যপ এসে কাচটা ভেঙে দিয়ে গেল। ভিতরে ঢুকে কি সব করছিল। তাকিয়ে আছি দেখে বলল, ‘কেটে পড়, না হলে পেটাব’!” ভাঙাচোরা ওই কাউন্টার থেকে মিনিট পাঁচেক হাটতেই দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম। প্রহরী নেই। আলোও নেই। স্থানীয় যুবকেরা জানালেন, সন্ধের পরে ওই এটিএমে কেউ যান না। বৌবাজার থেকে জজ কোর্টে আসার পথে আবার একটি এটিএম, পাহারাদার নেই।
প্রায় একই চিত্র মুর্শিদাবাদের সদর বহরমপুরেও। শহরের অধিকাংশ এটিএম কাউন্টারেই প্রহরী তো নেই-ই। নেই সিসিটিভির নজরদারিও। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “অধিকাংশ এটিএমেই ক্যামেরা ঠিক থাকে না। সিসিটিভি ফুটেজে অস্পষ্ট ছবি ওঠে। এ ব্যাপারে ব্যাঙ্ক কর্তাদের বহুবার বলা হয়েছে। ফের আলোচনায় বসা হবে।” |
বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজের উল্টোদিকে এটিএমে গিয়ে দেখা গেল টিমটিমে আলো। প্রহরীর দেখা নেই। শহরের গোরাবাজার, ইন্দ্রপ্রস্থে এবং ওয়াইএমএ ময়দান লাগোয়া স্টেশন রোডের উপরে পর পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমেও ছবিটা বদলায়নি। এ ছাড়াও কোর্ট চত্বরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঢুকে দেখা গিয়েছে, প্রহরাহীন। একই অবস্থা জেলা প্রশাসনিক ভবনের উল্টো দিকের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমেরও। কেন এমন হাল?
খরচ কমাতেই নিরাপত্তা রক্ষী রাখার বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ। পুলিশ সুপার বলেন, “শহরে নতুন কোনও এটিএম কাউন্টার বসানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় পুলিশ প্রশাসনকে জানানোই হয় না।” বহরমপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক ম্যানেজার সোমনাথ দত্ত অবশ্য দাবি করেছেন, “বেঙ্গালুরুর ঘটনাটি সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। এ ব্যাপারে কি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেই বিষয় নিয়ে আমরা শীঘ্রই আলোচনায় বসছি।” |
বহরমপুর ও কৃষ্ণনগরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |